• facebook
  • twitter
Tuesday, 29 April, 2025

শোভাযাত্রায় হাসিনার আদলে ফ্যাসিস্টের মুখাকৃতি, নতুন বাংলাদেশ গড়ার ডাক ইউনূসের

দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি ইউনূসকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নাম বদল করা হয়েছিল আগেই। এবার বাংলাদেশের নববর্ষের শোভাযাত্রায় ঢুকে পড়ল রাজনীতিও। শোভাযাত্রার শুরুতে রাখা ছিল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখের আদলে ফ্যাসিস্টের মুখাকৃতি। অন্যবারের মতো এবারও বাঙালি সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং একাত্মতা তুলে ধরা হয়েছে শোভাযাত্রায়।

১৪৩২ সালের প্রথম সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণ থেকে সকালে শুরু হয় শোভাযাত্রা। শাহবাগ মোড়, টিএসসি মোড়, শহিদ মিনার, শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্র, দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা দিয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হয় শোভাযাত্রা। এই শোভাযাত্রার নাম গত বছর পর্যন্ত ছিল মঙ্গল শোভাযাত্রা। এবার তা পাল্টে রাখা হয় বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা।

শোভাযাত্রায় ছিল সুলতানি ও মুঘল আমলের মুখোশ, আশিটি ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, রঙিন চরকি, তালপাতার সেপাই, পাখি, মাছ ধরার চাই, হাত পাখা, ঘোড়া এবং লোকজ চিত্রাবলীর ক্যানভাস। মোট ২৮টি জনগোষ্ঠী সোমবারের শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালের চারুকলা অনুষদ এই ব্যাপারে মুখ না খুললেও অনুষদের প্রাক্তনীরা অনেকেই শোভাযাত্রার নাম বদল এবং রাজনীতি টেনে আনা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন।

দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার ডাক দিয়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থান আমাদের সামনে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলার সুযোগ এনে দিয়েছে। এই অভ্যুত্থান বৈষম্যহীন, সুখী-সমৃদ্ধ, শান্তিময় ও আনন্দপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রেরণা দেয়। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই হোক এই বাংলা নববর্ষে আমাদের অঙ্গীকার।’

নববর্ষে সম্প্রীতি ও শান্তির বার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানও। তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তির দেশ চাই, শৃঙ্খলার দেশ চাই। হানাহানি, বিদ্বেষ চাই না। বিভিন্ন মত থাকতে পারে।…একে অপরের মতামতকে যেন শ্রদ্ধা করি। আমাদের নিজস্ব মতামত থাকবে, সেই অনুযায়ী আমরা অবশ্যই কাজ করব। কিন্তু আমাদের একে অপরের প্রতি যাতে শ্রদ্ধাবোধ থাকে, সে দিকে নজর রাখতে হবে।’

দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি ইউনূসকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল, হোটেল, কৃষি—সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দেশের জনগণের জীবিকা বিপন্ন। আমি চুপ করে থাকতে পারি না। শিল্প-কারখানা বন্ধ হচ্ছে, আওয়ামী লীগ নেতাদের সম্পত্তি ধ্বংস করা হচ্ছে, পুলিশ হত্যা করা হচ্ছে আর নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। এই ফ্যাসিস্ট ইউনূস আমাদের দেশকে ধ্বংস করছে।’ ইউনূসকে হাসিনার হুঁশিয়ারি, ‘মনে রাখবেন, আপনি যদি আগুন নিয়ে খেলেন, সেই আগুন আপনাকেও পোড়াবে।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখ আবু সাইয়েদের মৃত্যু নিয়েও মুহাম্মদ ইউনূসকে আক্রমণ শানান হাসিনা। তিনি বলেন, ‘পুলিশ শুধু রবার বুলেট ব্যবহার করেছে, ধাতব গুলি নয়। তাঁর মাথায় পাথর লেগেই মৃত্যু হয়েছে। ৭.৬২ মিমি গুলির উৎস খুঁজতে গিয়ে এক কর্মকর্তা বদলি হন কারণ ইউনূস নিজেই এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত।’

দেশবাসীর উদ্দেশে হাসিনা বলেন, ‘পয়লা বৈশাখে দেশ ও জাতির মঙ্গলে জনগণের ভেতরে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত দেশপ্রেম জাগ্রত হোক।…স্বাধীনতাবিরোধী, বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিরোধী অপশক্তিকে হটিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক।…বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে যারা এইসব অপতৎপরতা চলাচ্ছে, তারা জাতির শত্রু, সংস্কৃতির শত্রু, দেশের শত্রু। দেশের জনগণ তাদের এই চক্রান্ত সফল হতে দেবে না।’

এদিকে রবিবার রাতে পুলিশের উপস্থিতিতেই চট্টগ্রামের ডিসি হিল এলাকায় পয়লা বৈশাখ অনুষ্ঠানের মঞ্চে তাণ্ডব চালায় হাসিনা বিরোধীরা। মূল মঞ্চে হামলা চালিয়ে ব্যানার, ফেস্টুন সব ছিঁড়ে ফেলা হয় বলে অভিযোগ। এর ফলে স্থগিত হয়ে যায় উৎসব উদযাপন। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত আটক করা হয়েছে ৭ হামলাকারীকে। হামলার ঘটনার প্রতিবাদে আয়োজকরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে ও স্মারকলিপি জমা দেয়।