করোনাভাইরাস রাসায়নিক মারণ অস্ত্র নয়, পশু থেকেই এর উৎপত্তি বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র অনুমান

কিছুদিন আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, এই মারণ ভাইরাস জন্য দায়ী চিন। এমনকী আঙুল তুলেছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র দিকেও।

Written by SNS Geneva | April 23, 2020 6:22 pm

প্রতিকি ছবি (File Photo: IANS)

করোনাভাইরাস গবেষণাগারে তৈরি রাসায়নিক মারণাস্ত্র একথা মানতে নারাজ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। জেনেভার এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র মুখপাত্র ফাদেলা চাইব জানিয়েছেন, নানা গবেষণায় দেখা গিয়েছে করোনাভাইরাসের নিজস্ব স্বাভাবিক উৎস রয়েছে। আর যে করোনা মহামারী হয়েছে তার উৎসও রয়েছে প্রকৃতিতে। এই ভাইরাস গবেষণাগারে তৈরি করা হয়নি। ফাদেলার দাবি পশুদের থেকেই এই মারণ ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা বেশি।

কিছুদিন আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, এই মারণ ভাইরাস জন্য দায়ী চিন। এমনকী আঙুল তুলেছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র দিকেও। তাঁর দাবি ছিল চিনের পক্ষপাতিত্ব করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। আগে থেকে সব জেনেও নাকি মুখ বন্ধ রেখেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

ভাইরাস নিয়ে আগাম সতর্ক করেনি বিশ্বকে। মার্কিন মুলুকে এই ভাইরাস মহামারীর আকার নেওয়ার পিছনেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র গাফিলতিকেই দায়ী করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু ফাদেলা মার্কিন প্রেসিডেন্টের সকল অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে জানিয়েছেন বাদুর এই মারণ ভাইরাসের উৎস। কিন্তু কিভাবে তা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে তার কোনও উত্তর তাঁর কাছে নেই।

ফাদেলার দাবি শুধু বাদুড় নয়, অন্যান্য পশুর থেকেও ভাইরাসটি ছড়াতে পারে। সে ক্ষেত্রে কোনও মধ্যবর্তী বাহক থাকতে পারে। গত বছর উহানের ওয়েট মার্কেট থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছিল বলে দাবি করা হয়েছিল। বাদুড় বা অন্য পশুর শরীর থেকে এই ভাইরাস মানুষে সংক্রামিত হয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান ফাদেলের। কিন্তু এব্যাপারে নিশ্চিন্ত হতে আমেরিকা ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট আগেই বলেছিলেন, গবেষণাগারে এই মারণ ভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে চিনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কারণ তিনি প্রথম থেকেই চিন মারণ ভাইরাসটি গবেষণাগারে তৈরি করেছে বলে অভিযোগ করে আসছেন।

অন্যদিকে চিন পাল্টা দাবি হিসেবে উহানে ভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য মার্কিন সেনাদের দায়ী করেছে। মার্কিন-চিন তরজা যখন তুঙ্গে তখন উহান ইনস্টিটিউট অফ ভাইরলজির ডিরেক্টর ঝিমিং ইউয়ান দাবি করেছেন, গবেষণাগারে এমন ভাইরাস তৈরি করা সম্ভব নয়। যেভাবে ভাইরাসটি তার জিনের গঠন বদলেছে তা কোনও লেভেল-৩ বা লেভেল-৪ গবেষণাগারে তৈরি করা সম্ভব নয়। তাই চিন মারণাস্ত্র হিসেবে ভাইরাস তৈরি করে ছড়িয়ে দিয়েছে, আমেরিকার এই দাবি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন।

এদিকে চিনের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র অনুদান বন্ধ করে দিয়েছে আমেরিকা। একই সঙ্গে উহানের গবেষণাগারকে যে ত্রিশ লাখ সত্তর হাজার মার্কিন ডলার আর্থিক অনুদান দেওয়া হত তাও বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে হোয়াইট হাউসের পক্ষে জানানো হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’কে সবচেয়ে বেশি আর্থিক সাহায্য দিত আমেরিকা। এই অনুদান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভাইরাসের মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যাবতীয় গবেষণা, কর্মসুচি পিছিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এমন হঠকারী সিদ্ধান্তে সমালোচনা করেছে বিশ্বের বহু দেশই।

ফাদেলা জানিয়েছেন, কোভিড নিয়ে গবেষণাই শুধু নয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র আরও অনেক কর্মসূচি রয়েছে। ম্যালেরিয়া, এইচআইভি, পোলিও সংক্রান্ত গবেষণা, সচেতনতার প্রচার চলছে। এসবই আমেরিকার অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের ফলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।