ক্যাব : প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশেও

বাংলাদেশে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বলেছে, ভারতে সংসদে নাগরিকত্ব সংশােধনী বিল পাশে বাংলাদেশের ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগােষ্ঠী উদ্বিগ্ন।

Written by Basudeb Dhar Dhaka | December 14, 2019 2:19 pm

নাগরিকত্ব সংশােধনী বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। (Photo: Twitter/@UNHumanRights)

বাংলাদেশে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বলেছে, ভারতে সংসদে নাগরিকত্ব সংশােধনী বিল পাশে বাংলাদেশের ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগােষ্ঠী উদ্বিগ্ন। ঐক্য পরিষদ মনে করে, নতুন এই আইন একদিকে এদেশে অধিকতর নিরাপত্তার আশায় সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগে উৎসাহিত করতে পারে, দেশের অভ্যন্তরে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তারা অংশগ্রহণে নিরুৎসাহিত হবে। অন্যদিকে ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর থেকে সংখ্যালঘুদের জীবন পরিবার ও সম্পদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে যারা তাদের দেশত্যাগে বাধ্য করেছে, এই আইনের ফলে তারা সাম্প্রদায়িক নির্যাতন, নিপীড়ন, ভূমি দখল, ধর্মান্তকরণ অব্যাহত রেখে সংখ্যালঘুদের দেশছাড়া করার জন্যে এবং বাংলাদেশকে এক ধর্মীয় রাষ্ট্রে পরিণত করার তাদের রাজনৈতিক আকাঙ্খা বাস্তবায়নে উৎসাহিত হবে।

ভারতে নাগরিকত্ব সংশােধনী বিল পাশে প্রতিক্রিয়া জানাতে আজ সকালে সংগঠনের কার্যালয়ে আয়ােজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দ এক লিখিত বক্তব্যে একথা বলেন। ঐক্য পরিষদ অবশ্য এও বলেছে, বাংলাদেশে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা বিলােপ করে, পরবর্তীতে ইসলাম ধর্মকে রাষ্ট্র ধর্ম ঘােষণা করে সংবিধানে সংযােজনের মাধ্যম ধর্মের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ বাঙালি জাতিসত্ত্বাকে বিভাজিত করা হয়েছে এবং সাম্প্রদায়িকতাকে রাষ্ট্রীয়করণ করে তৃণমূলে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগ কমবেশি অব্যাহত থাকে, নানাক্ষেত্রে ধর্মীয় বৈষম্য বাড়ে, সাম্প্রদায়িক নির্যাতন-নিপীড়ন অব্যাহত থাকে। এর মাধ্যমে বহুত্ববাদী সমাজ থেকে বাংলাদেশ দূরে সরে যায়। ঐক্য পরিষদ মনে করে এই সমস্যার মৌল সমাধান বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক, সামাজিক আন্দোলনের মধ্যে নিহিত রয়েছে।

ঐক্য পরিষদ আরও বলেছে, গণবিরােধী শত্রু বা আর্পিত সম্পত্তি আইনের অব্যাহত প্রয়ােগ-অপপ্রয়োগের কারণে, সাম্প্রদায়িক নির্যাতন নিপীড়নে ক্ষতিগ্রস্ত ও আতঙ্কিত হয়ে ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানি আমলের মতাে সংখ্যালঘু জনগােষ্ঠীর এক বিশাল অংশকে দেশত্যাগে বাধ্য করায় তারা প্রতিবেশী রাষ্ট্রে আশ্রয় নেয়। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশে আদমসুমারি প্রতিবেদন উল্লেখ করে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের হার বৃদ্ধি এবং সংখ্যালঘুদের ক্রমহ্রাসের হার তুলে ধরা হয়। তবে বলা হয়, সরকারিভাবে বলা হয়েছে, গত কয়েক বছরে সংখ্যালঘুদের হার বেড়েছে মােটামুটি দুই শতাংশের মতাে।

ঐক্য পরিষদ বলেছে, ভারতে নাগরিকপঞ্জি থেকে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু কথিত বাংলাদেশি জনগােষ্ঠী বাদ পড়ে থাকলে সেক্ষেত্রে ধর্মীয় বিভাজনের পথে না গিয়ে জাতীয়-আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় বা দ্বিপক্ষীয় রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আলােচনার মধ্য দিয়ে এর সমাধান হলে ভালাে হত। ঐক্য পরিষদ মনে করে, ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতির মধ্য দিয়ে অখণ্ড ভারত খণ্ডিত হয়ে আজ তিনটি পৃথক রাষ্ট্রে পরিণত হলেও সংখ্যালঘুদের সমস্যার সমাধান আজও হয়নি। বরং তা অধিকতর জটিল পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যা থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকা রাষ্ট্রনায়ক বা রাজনীতিকদের পক্ষে সম্ভব নও হতে পারে।

ঐক্য পরিষদ আরও মনে করে নাগরিকত্ব সংশােধনী আইনে বাংলাদেশের ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের স্বার্থ কতখানি রক্ষিত হবে তা ভেবে দেখার প্রয়ােজন আছে। পাশাপাশি আশা প্রকাশ করা যায়, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারি দল তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জিরাে টলারেন্স, সংখ্যালঘুদের স্বার্থরক্ষায় জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও বৈষম্য বিলােপ আইন প্রণয়ন, অর্পিত (শত্রু) সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন ও পার্বত্য শান্তি চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের যে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়, আওয়ামি লিগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা বাস্তবায়নে অনতিবিলম্বে দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. রানা দাশগুপ্ত। উপস্থিত ছিলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক নিমচন্দ্র ভৌমিক, বাসুদেব ধর, কাজল দেবনাথ, শ্রীমতী মঞ্জু ধর, নির্মল রােজারিও ও জেল এল ভৌমিক।