প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল রাশিয়ায় গিয়ে কাজ মিলবে। নিরাপত্তারক্ষী বা রাঁধুনির কাজে মাসে পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া হবে প্রায় ২ লক্ষ টাকা করে৷ পরিবারকে ভাল রাখতে টাকা রোজগারের আশায় উত্তর প্রদেশের আজমগড় এবং মাউ জেলার প্রায় ১৩ জন যুবক রাশিয়ায় পাড়ি দেন৷ অভিযোগ, সেখানে পৌঁছনোর পরই তাঁদের জোরজবরদস্তি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়৷ এই ১৩ জনের মধ্যে ইতিমধ্যেই রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের৷ আহত অবস্থায় প্রাণে বেঁচে দেশে ফিরে এসেছেন ২ জন৷ কিন্তু বাকি ৮ জনের এখনও কোনও খোঁজ মেলেনি৷
বিনোদ যাদব, যোগেন্দ্র যাদব, অরবিন্দ যাদব, রাম চন্দ্র, আজ়হারউদ্দিন খান, হুমেশ্বর প্রসাদ, দীপক এবং ধীরেন্দ্র কুমার— এই ৮ জনের পরিবার উত্তরপ্রদেশে অপেক্ষায় রয়েছেন খবর পাওয়ার আশায়। যোগেন্দ্রর ছোট ভাই আশিস যাদবের অভিযোগ, তাঁর দাদাকে নিরাপত্তারক্ষীর কাজের কথা বলে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু পরে তাঁকে রাশিয়ার সীমান্তে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। গত বছরের ১৫ জানুয়ারি যোগেন্দ্র বাড়ি ছেড়েছিলেন। পরিবারের দাবি, ৩ জন ‘এজেন্ট’ তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন। গত বছরের মে মাসে যোগেন্দ্রের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছিল। সেটাই শেষ কথা। তখন যোগেন্দ্র তাঁর পরিবারকে জানিয়েছিলেন, তিনি যুদ্ধে জখম হয়েছেন। এর পর থেকে যোগেন্দ্র কোথায় রয়েছেন, কী পরিস্থিতিতে রয়েছেন, কিছুই জানে না তাঁর পরিবার। দাদাকে খুঁজে বের করার জন্য কেন্দ্রের হস্তক্ষেপেরও আর্জি জানিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের আজমগড় জেলার বাসিন্দা আশিস।
আজহারউদ্দিনের বাড়িও আজমগড় জেলাতেই। বাড়িতে বৃদ্ধা মা রয়েছেন। আজহারের মা নাসরিন জানান, গত ১০ মাসে ছেলের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগাযোগ হয়নি। মোটা টাকার বেতনের টোপ দিয়ে এক ‘এজেন্ট’ আজ়হারকে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ তাঁর মায়ের। গত বছরের জানুয়ারিতেও তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। দুই পরিবারের মুখেই উঠে এসেছে বিনোদ নামে এক ‘এজেন্ট’-এর নাম।
বিদেশ মন্ত্রক থেকে জানানো হয়েছে, রুশ বাহিনীর হয়ে কাজ করতে গিয়ে ১২ জন ভারতীয়ের মৃত্যু হয়েছে। আরও ১৬ জনের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জওসওয়াল বলেন, “এখনও পর্যন্ত ১২৬ জন ভারতীয়র রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে কাজ করার খবর পাওয়া গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৯৬ জন ইতিমধ্যে ফিরে এসেছেন। তাঁদের রুশ বাহিনী থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।”
ছেলেকে রাশিয়ায় গিয়ে যুদ্ধ করতে হচ্ছে শোনার পর গত বছরের ১ এপ্রিল হৃদরোগে আক্রান্ত হন আজহারের পরিবার৷ কয়েকদিন পরই মৃত্যু হয় তাঁর৷ নিখোঁজ বাকি যুবকদের পরিবারেরও অভিযোগ একই৷ রাশিয়া থেকে আহত হয়ে ফিরে আসা রাকেশ যাদব বলেন, ‘গত বছর জানুয়ারি মাসে আমরা রাশিয়া পৌঁছনোর পর একটি চুক্তিপত্রে সই করানো হয়৷ সেই চুক্তিপত্র রুশ ভাষায় লেখা ছিল৷ চুক্তিপত্রে কী আছে জানতে চাইলে বলা হয়, যা যা কাজ করতে হবে সেটাই লেখা আছে৷ কিন্তু এর পরই আমাদের রকেট এবং বোমা মারার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়৷ আমরা আপত্তি জানালে বলা হয়, আত্মরক্ষার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে৷’