মোহনবাগান ক্লাবের নির্বাচনের দিন এখনও ঘোষণা না হলেও শাসক গোষ্ঠী ও বিরোধী পক্ষের দরজা যেভাবে কলকাতা ময়দানকে মাতিয়ে তুলেছে, তা অভাবনীয়। কয়েকদিন আগেই বিরোধী পক্ষ থেকে ‘তোমাকে চাই’ এমন প্রতিশ্রুতি ইস্তাহার প্রকাশ করে সচিব পদপ্রার্থী সৃঞ্জয় বসু বিভিন্ন সভায় কেন তাঁদের ভোট দেবেন, তা বলতে চেষ্টা করছেন। আর বৃহস্পতিবার কলকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাবে শাসক গোষ্ঠীর সচিব দেবাশিস দত্ত শ্বেতপত্র প্রকাশ করে বলতে চেষ্টা করেছেন, গত তিন বছরে আমরা কী করেছি এবং আগামী দিনে কী করতে চাই। সচিব দেবাশিস দত্ত স্পষ্ট জানালেন, মোহনবাগান ক্লাবে এমন দায়িত্ব নেওয়ার পিছনে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা পেয়েছি টুটু বসু ও প্রয়াত অঞ্জন মিত্রের কাছ থেকে। ওই দুই ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব অভিভাবক হিসেবে আমার পাশে না থাকলে, আমি কোনও দিনই এতবড় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারতাম না। অঞ্জন মিত্র শিখিয়েছিলেন, ব্যক্তি সাফল্য নয়, ক্লাবের অগ্রগতিতে সমবেত প্রচেষ্টাই সাফল্যের ভিত গড়ে। সেই শিক্ষা নিয়ে আগামী দিনে এগিয়ে যেতে চাই। গত তিন বছরে ক্লাবে যে সাফল্য এসেছে, সেখানে একক কোনও ব্যাপার নয়, মোহনবাগান পরিবার হিসেবে সবাই এগিয়ে এসেছে।
সাফল্যের জোয়ার তাঁদের দ্বারাই সংগঠিত হয়েছে। তাই একা নয়, মোহনবাগান ক্লাব সবার। আগামী দিনে ক্লাবের পরিবেহশ কীভাবে উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তার জন্য আগাম কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। নির্বাচনে হারজিত থাকবেই, কিন্তু মনে রাখতে হবে, ক্লাবের উন্নতিতে আমরা সবাই মোহনবাগান। মোহনবাগান আমাদের গর্বের। আমাদের গৌরব। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে মোহনবাগানের যে অবদান, তা কোনওভাবেই ভুলে থাকা যাবে না। সেই গৌরবময় ইতিহাসকে আরও উজ্জ্বল করার জন্যই আমরা এগিয়ে আসতে চাই।
Advertisement
সচিব দেবাশিস দত্ত বলেন, আইএসএলে সাফল্য এবং অন্যান্য প্রতিযোগিতায় সেরা খেতাবে অরিজিনাল রেপ্লিকা সাজিয়ে রাখা হবে নতুন ট্রফি ক্যাবিনেটে। ‘গোলশ্রী’ নামে একটি প্রকল্পের মধ্যে দিয়ে অনুর্ধ্ব-১৩ দলের খেলোয়াড়দের খুঁজে বার করার জন্য ১০ থেকে ১২ বছর বয়সী ফুটবল টিম তৈরি করা হবে। মহিলা ফুটবল দল শুধু গঠন করা নয়, আগামী বছরে এই দল তৈরি করে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ভারত সেরা হবে। প্রাক্তন খেলোয়াড়দের জন্য একটি প্লেয়ার্স কর্নার তৈরি করা হবে। ৫০ বছরের বেশি যাঁদের সদস্যপদ রয়েছে, তাঁদের মোহনবাগান দিবসে সম্মানিত করা হবে। তাঁদের জন্য বিশেষ পরিষেবা চালু করা হবে, যাতে তাঁদের বাড়িতে বিনামূল্যে টিকিট পৌঁছে যাবে। কলকাতা বাদেও হাওড়া ও জেলাস্তরে টিকিট বণ্টনকেন্দ্র খোলা হবে। প্রতিবন্ধী ও বরিষ্ঠ নাগরিকরা গ্রাউন্ড ফ্লোরে বসে খেলা দেখতে পারবেন, তারও ব্যবস্থা করা হবে। ফুটসল ও পিকল বল-এর কোর্ট তৈরি করা হবে। ক্লাবের একটি মেম্বারশিপ ডিরেক্টরি প্রকাশ করা হবে। ঘরের মাঠ যাতে কলকাতা ফুটবল লিগ আয়োজন করা যায়, তার জন্য আইএফএ’র কাছে অনুরোধ করা হয়েছে। মোহনবাগানের খেলা থাকলে, তা সন্ধ্যালোকে করার কথা বলা হয়েছে। তাহলে প্রচুর দর্শক মাঠে আসবেন। মোহনবাগান দিবসে যিনি সেরা সমর্থক হবেন, তাঁদের আজীবন সদস্যপদ দেওয়া হবে। এমন আরও বেশকিছু কথা বলা হয়েছে ক্লাবের উন্নয়নের প্রয়োজনে।
Advertisement
কয়েকদিন আগে সচিব পদপ্রার্থী সৃঞ্জয় বসুর সঙ্গে একই সভায় কথা বলছেন অর্জুন ফুটবলার প্রসূন ব্যানার্জি। এদিন হঠাৎই দেখা গেল সেই প্রসূন ব্যানার্জিকে সচিব দেবাশিস দত্তের হয়ে গুণগান করতে। তিনি বলেন, যে প্রশাসকমণ্ডলী ভালোভাবে কাজ করে চলেছে, তাকে ধাক্কা দেওয়া উচিত হবে না। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন না করে আলোচনার মধ্যে দিয়ে প্রশাসকমণ্ডলী গঠন করাই ভালো। প্রাক্তন ফুটবলার মানস ভট্টাচার্য বলেন, মোহনবাগানে কোনওরকম রাজনৈতিক রং নেই। সবারই পরিচয় মোহনবাগানের সদস্য। তাহলে কেউ কেউ মোহনবাগানের নির্বাচনে রাজনীতি দেখছেন। এটা একেবারে ভ্রান্ত ধারণা। তাঁদের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিতে চাই। কথা প্রসঙ্গে শ্বেতপত্রে দেবাশিস দত্ত প্রাক্তন ফুটবলার সত্যজিৎ চ্যাটার্জি ও মানস ভট্টাচার্যের ছবির উপরে প্রকাশ পেয়েছে প্রয়াত অঞ্জন মিত্রের ছবি। কেন টুটু বসুর ছবি নেই, এই প্রশ্ন উঠতেই সচিব দেবাশিস দত্ত বলেছেন, মনে রাখবেন, সভাপতি টুটু বসু পদত্যাগপত্র দিয়ে বলেছেন, আমি একপক্ষের হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। সেই কারণেই পদত্যাগপত্র এখনও গ্রহণ করা হয়নি।
তবে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন বলেই টুটু বসুর ছবিটা প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। তবে হ্যাঁ, টুটু বসু যদি সচিব পদপ্রার্থী হয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন, তাহলে জোরের সঙ্গে বলছি, আমি সচিব পদ থেকে সরে দাঁড়াবো। তবে হ্যাঁ, লিখিত জানাতে হবে সচিব হয়ে তিনি কয়েক বছরের ব্যবধানে ছেলে সৃঞ্জয় বসুকে বসাবেন, তাহলে হবে না। এই ঘটনা তিনি আগেও ঘটিয়েছিলেন প্রয়াত অঞ্জন মিত্রের সময়। দেবাশিস দত্ত আরও বলেন, কখনওই বিরোধী পক্ষ বলে কিছু জানি না। সবাই মোহনবাগান। এই বিশ্বাসেই আমরা মোহনবাগান পরিবার। সাফল্যের পথে, উন্নতির পথে মোহনবাগানের জয় দেখাটাই আমাদের অঙ্গীকার।
Advertisement



