কলকাতা লিগের পঞ্চম বিভাগের গ্রুপ ‘বি’তে এবারে মতুয়া ফুটবল ফাউন্ডেশন চ্যাম্পিয়ন হলো। ফাইনালে ইন্ডিয়া ক্লাবকে টাইব্রেকারে ৪-১ গোলে তারা হারিয়ে দিয়ে এই কৃতিত্ব দেখাল। মতুয়া ফুটবল ফাউন্ডেশনের গোলকিপার দীপ সরকার বিপক্ষের দ্ধিতীয় ও তৃতীয় টাইব্রেকারে প্রতিপক্ষের শট্ রুখে দেয়। নির্দিষ্ট সময় খেলার ফলাফল গোলশূন্য থাকে। উত্তর দিনাজপুরের দীপ সরকারের খেলা সকলের নজর কেড়েছে। লিগে ১০টা ম্যাচ খেলে মতুয়া ফুটবল ফাউন্ডেশনের ছেলেরা ৯ টি ম্যাচেই জিতেছে। লিগের খেলায় স্ট্রাইকার সলমন শেখ ১০টি গোল করেছে। মাঝমাঠের সুমিত পাহাড়িয়া, অরিত্র মালো, সুরোজ রায় ও রূপম দাসেরা লিগে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলেছে। সপ্তপর্ণ বারুইয়ের নেতৃত্বে রক্ষনের ফুটবলারদের দৃঢ়তা দেখার মতন ছিল। মতুয়া ফুটবল ফাউন্ডেশনের কোচ গৌতম ঠাকুরের সঙ্গে ক্লাবকর্তারা দারুন সহযোগিতা করেছেন। নিশীথ সরকার, কৃষ্ণ চন্দ্র রায়, দীনেশ বিশ্বাস ও তুষার কান্তি বিশ্বাসদের নাম এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য। খেলা শেষে আইএফএর পক্ষ থেকে মাঠেই উভয়দলকে মিষ্টিমুখ করানো হয়। আইএফএর সভাপতি অজিত ব্যানার্জি, সচিব অর্ণিবান দত্ত। এবং প্রাক্তন ফুটবলার ও কোচ রঘু নন্দী মাঠে উপস্থিত ছিলেন।
প্রাক্তন ফুটবলার গৌতম ঠাকুর মতুয়া ফুটবল ফাউন্ডেশনকে প্রশিক্ষণ দেন। তাঁর উদ্যোগেই মতুয়া ফুটবল ফাউন্ডেশনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। গৌতম ঠাকুরের নেতৃত্বে আরও একটি আলাদা ফুটবল অ্যাকাডেমি চলে। তাঁর দাদু কালিপদ ঠাকুরের নামে ফুটবল অ্যাকাডেমি গড়ে উঠেছে। সেই কেএফটির নিজস্ব মাঠ ও জিমে মতুয়া ফুটবল ফাউন্ডেশনের খেলোয়াড়রা পরিকাঠামো মত সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে। নদীয়া জেলা ও তার ধারে কাছে অঞ্চলের ফুটবল প্রসারে বর্তমান মতুয়া ফুটবল ফাউন্ডেশন ক্যাম্প উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিচ্ছে।
Advertisement
এবারের ফুটবল মরশুমের প্রথম ম্যাচটাতেই অবশ্য তাদের হোঁচট খেতে হয়েছিল। লিগের প্রথম ম্যাচেই হারের পর দলটা পরবর্তী সময়ে ঘুরে দাঁড়ায়। এবং পরবর্তী ম্যাচগুলোতে তারা অপরাজিত থাকে। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন টিমের কোনও ফুটবলার আগে কলকাতা গড়ের মাঠে খেলেনি। এমন অনভিজ্ঞ টিমকেই তৈরি করে কোচ গৌতম ঠাকুর দলকে চ্যাম্পিয়ন করলেন। তাঁর কথায়, ‘এলাকার প্রতিভাবান ফুটবলারদের কলকাতা মাঠে প্রতিষ্ঠা দেওয়াই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। দূরের জেলার ছেলেদের কলকাতা মাঠে নিয়মিত প্র্যাকটিস করে দলে টিকে থাকা খুব কঠিন হয়।
Advertisement
এদিকে নজর দিয়েই আমরা লোকাল ছেলেদের আমাদের জেলার মাঠে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করি। বগুলা কলেজ মাঠ ও মদনপুর মার্জিয়া অ্যাথলেটিক মাঠকে আমরা ব্যবহার করার সুযোগ পাচ্ছি। ফলে ছেলেদের পক্ষেও যাতায়াতের সুবিধা হয়। এবারের চ্যাম্পিয়ন দলের ফুটবলাররাও আগামী মরশুমে পঞ্চম বিভাগের গ্রুপ ‘এ’ তে আমাদের দলে খেলার সুযোগ পাবে। বয়সভিত্তিক লিগে বিভিন্ন বিভাগের চ্যাম্পিয়ন হয়ে উপরের দিকে ওঠার এটাই ছেলেদের পক্ষে সুবিধা হয়। পরের ডিভিশনে যেহেতু এই ছেলেরাই খেলবে, তাই এদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া আরও বাড়বে। আশাকরা যায়, এই টিম পরের মরশুমে আরও ভালো ফুটবল খেলা উপহার দিতে পারবে।”
মতুয়া ফুটবল ফাউন্ডেশনের নামের মধ্যেই ‘মতুয়া সম্প্রদায়ে’র ঠাকুরবাড়ির ভূমিকা প্রাসঙ্গিকভাবেই এসে যায়। ঠাকুর বাড়ির জনপ্রতিনিধিদের ফুটবলের এই সংগঠনের পাশে থাকলে আমরা উৎসাহিত হতাম। অথচ বগুলা অঞ্চল ছাড়িয়ে মতুয়া ফুটবল ফাউন্ডেশন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিস্তার ঘটিয়েছে। সুদূর উত্তরবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরের দীপ সরকার রক্ষনের শেষ প্রহরীর ভূমিকায় লিগে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন।
গত ২ বছর আগে মতুয়া ফুটবল ফাউন্ডেশন আইএফএতে নথিভুক্ত হয়। পঞ্চম বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হওয়াতে তাদের ভবিষ্যতে আরও বড় জায়গায় খেলার অনুপ্রেরণা যোগাবে। ফাউন্ডেশনের পৃষ্ঠপোষক ও কোচ গৌতম ঠাকুর জানালেন, ‘আমাদের স্বপ্ন ফাউন্ডেশন একদিন বড় দলগুলোর বিরুদ্ধে খেলবে। বড়দলগুলোর যেমন নির্দিষ্ট সমর্থক আছে,আমাদেরও নিজস্ব সমর্থক আছে। আমরা সর্বভারতীয় স্তরেও খেলতে চাই। সর্বভারতীয় স্তরে আমাদের সমর্থকরা আছেন। মতুয়া ফুটবল ফাউন্ডেশনের কলকাতা লিগে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার উৎসব আমরা বিভিন্ন অঞ্চলে পালন করবো। আমাদের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দল জেলার বিভিন্ন টুর্নামেন্টেও অংশগ্রহণ করে। আমাদের ক্যাম্পের বহু খেলোয়াড় কলকাতা লিগের বিভিন্ন বিভাগের অনেক ক্লাবেই সুযোগ পেয়েছে। কঠিন পরিশ্রমে আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
Advertisement



