• facebook
  • twitter
Saturday, 14 June, 2025

কন্যাশ্রী কাপে খেতাব তুলে নিল ইস্টবেঙ্গল

কন্যাশ্রী কাপের ফাইনাল খেলা নিয়ে বেশ জলঘোলা হয়েছিল। সেমিফাইনাল ম্যাচে সাদার্ন সমিতিকে হারিয়ে ফাইনালে খেলার ছাড়পত্র পায় ইস্টবেঙ্গল।

নিজস্ব চিত্র

কন্যাশ্রী কাপ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হল ইস্টবেঙ্গল। গতবারের চ্যাম্পিয়ন শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবকে টাইব্রেকারে হারিয়ে খেতাব তুলে নেয় লাল-হলুদ ব্রিগেড। গতবছর শ্রীভূমি ফাইনালে জয় তুলে নেয় এই ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধেই। এককথায় বলা যায়, মঙ্গলবার কিশোরভারতী স্টেডিয়ামে ফাইনাল খেলায় মধুর প্রতিশোধ নিল ইস্টবেঙ্গল। নির্দিষ্ট সময়ে দুই দলই একটি করে গোল করে। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে ৪-২ গোলের ব্যবধানে ইস্টবেঙ্গল জয় তুলে নেয় শ্রীভূমির বিপক্ষে।

কন্যাশ্রী কাপের ফাইনাল খেলা নিয়ে বেশ জলঘোলা হয়েছিল। সেমিফাইনাল ম্যাচে সাদার্ন সমিতিকে হারিয়ে ফাইনালে খেলার ছাড়পত্র পায় ইস্টবেঙ্গল। তারপরেই ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের পক্ষে কোনওভাবেই জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের আগে খেলা সম্ভব হবে না। এমনকি আইএফএ’কে চিঠি দিয়ে তারা জানায় কিশোরভারতী স্টেডিয়ামে তাদের পক্ষে খেলা সম্ভব নয়। খেলা দিতে হবে ইস্টবেঙ্গল মাঠেই। কিন্তু আইএফএ ইস্টবেঙ্গলের কোনও কথাই শোনেনি। আইএফএ’র পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হল তাদের পক্ষে কোনওভাবেই নির্দিষ্ট দিন যেমন পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, তেমনই আবার কিশোরভারতী স্টেডিয়ামে কন্যাশ্রী কাপ ফুটবলের খেলা হবে। ইস্টবেঙ্গলের কাছে এই বার্তা যাওয়ার পরেই তাদের পক্ষে খেলা ছাড়া আর কোনও পথ খোলা ছিল না। শেষ পর্যন্ত প্রতিবাদকে সঙ্গী করেই এদিন মাঠে নামে ইস্টবেঙ্গল। খেলার শুরু থেকেই ইস্টবেঙ্গলের খেলোয়াড়রা আক্রমণে ঝড় তুলতে থাকে। আবার পাল্টা আক্রমণে শ্রীভূমির ফুটবলাররাও প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগে হানা দেন। টানটান উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে দুই দলের খেলোয়াড়রা একে অপরের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানাতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময়ে দুই দলই একটি করে গোল করে। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে সুলঞ্জনা রাউত গোল করেন। খেলার ভাগ্য নির্ধারণ হয় টাইব্রেকারে।

টাইব্রেকারে ইস্টবেঙ্গলের গোলরক্ষক মামণি শ্রীভূমির দু’টি পেনাল্টি শট রুখে দেন। ইস্টবেঙ্গলের খেলোয়াড়রা চারটি গোল করেন। এদিন ইস্টবেঙ্গলের জয়ের পিছনে বড় ভূমিকা নেন গোলরক্ষক মামণি। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, চলতি মরশুমে আইডব্লুএল চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইস্টবেঙ্গলের মেয়েরা সবার নজর কেড়ে নিয়েছিল। এমনকি ইস্টবেঙ্গলের সফল ফুটবলারদের অভিনন্দন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর্থিক অনুদান তুলে দিয়েছিলেন। সংবর্ধনায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, মেয়েরা যদি চ্যাম্পিয়ন হতে পারে, তাহলে কেন ইস্টবেঙ্গলের ছেলেরা আইএসএল ফুটবলে ভালো রেজাল্ট করবে না? তাই প্রথম থেকেই দল গঠনে নজর দিতে হবে। হয়তো সেই ভাবনাতেই ইস্টবেঙ্গলের কর্মকর্তারা মেয়েদের দলকে আরও ভালোভাবে তৈরি করার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন।

ইস্টবেঙ্গল এই মরশুমে মেয়েদের ফুটবলে দ্বিমুকুট জয়লাভ করল। আবার ইস্টবেঙ্গল আইডব্লুএল খেলার জন্য প্রস্তুতি শুরু করছে। মাঠে উপস্থিত ছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তিনি খেলার শেষে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজকে যা ভাবেন, তার চার থেকে পাঁচ বছর বাদে অন্য রাজ্য সেই ভাবনাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, বাংলার মেয়েদের যে প্রতিভা রয়েছে, তা ঠিকভাবে মূল্যায়ন করা যায়, তাহলে ভারতসেরা শুধু নয়, আগামী দিনে বিশ্বের দরবারে বাংলার মেয়েরা দাপট দেখাবেন। ক্রীড়ামন্ত্রী আরও বলেন, দারুণ একটা ম্যাচ দেখলাম। কন্যাশ্রী কাপের ফাইনালে দুই দল যেভাবে লড়াই করেছে, তা অবশ্যই দেখার মতো। টাইব্রেকারে কার ভাগ্য খুলে যাবে তা আগাম বলা যায় না। তবে দুরন্ত ফুটবল খেলেছে মেয়েরা। সেই সঙ্গে ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরোধ করেছেন কলকাতা ফুটবল লিগে আইএফএ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ভূমিপুত্র হিসেবে পাঁচজন খেলোয়াড়কে পুরো সময় খেলাতে হবে। কিন্তু বাংলা ও ফুটবলারদের স্বার্থে অনুরোধ করব আইএফএ’র কাছে এই সংখ্যাটা পুনরায় বিবেচনা করতে। বাংলার ফুটবলে যত বেশি ভূমিপুত্র খেলবেন, ততই সমৃদ্ধ হবে কলকাতা ফুটবল।

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু ও আইএফএ-র সভাপতি অজিত ব্যানার্জি।