‘না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা’ থেকে ‘চৌকিদার হি চোর হ্যায়’

Written by SNS April 8, 2024 1:31 pm

প্রবীর মজুমদার

ভারতরাষ্ট্রের জন্মের সময় থেকেই দুর্নীতি জাতীয় জীবনের অনিবার্য অঙ্গ৷ দুর্নীতি ভারতরাষ্ট্রের অলঙ্কার – এই কথাটির বাস্তবতাকে অস্বীকার করা যায় না৷ দুর্নীতি প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে প্রথমে কয়েকটি কথা বলা প্রয়োজন৷ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতি এক সামাজিক বৈধতা লাভ করেছে৷ সংবাদপত্রে বা বৈদু্যতিন মাধ্যমে নিত্যনতুন দুর্নীতির আখ্যান জনমানসে আজ নতুন কোনও আলোড়ন তোলে না৷ কারণ দুর্নীতি ও রাজনীতি আজ সমার্থক৷ আমরা দুর্নীতিকে এক অনিবার্য ভবিতব্য বলে মেনে নিয়েছি৷ পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র বলে বহুবিজ্ঞাপিত ভারতরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের চারটি স্তম্ভ- আইনসভা, প্রশাসন, বিচারবিভাগ ও মিডিয়া কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত দুর্নীতিগ্রস্ত হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করেছে৷ প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর মন্ত্রিসভায় বহু-আলোচিত ‘জিপ কেলেঙ্কারি’ থেকে শুরু করে অটলবিহারী বাজপেয়ির ‘কার্গিল কফিন কেলেঙ্কারি’, মনমোহন সিং-এর প্রধানমন্ত্রিত্বকালের কমনওয়েলথ গেমস, টেলিকম, টু-জি, কোলব্লক থেকে মোদি জমানার ইলেকটোরাল বন্ড- দুর্নীতির অন্তহীন যাত্রার সালতামামি রাখা সত্যিই মুশকিল৷ দুর্নীতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে দুর্নীতির ধরনেরও দ্রুত বদল ঘটছে৷ স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় দুর্নীতি বলতে বোঝাত বিভিন্ন সরকারি টেন্ডার, চাকরি বা লাইসেন্স জোগাড়ের জন্য কমিশন দেওয়া-নেওয়া৷ নব্বই-পরবর্তী সময়ে যখন নয়া-উদারবাদী অর্থনীতি চালু হল তখন দুর্নীতি আরও বহুমাত্রিক হল৷ সরকারি পলিসি হয়ে উঠল দুর্নীতির আধার৷ এই ক্ষেত্রে দুর্নীতির টাকার অঙ্ক অকল্পনীয় এবং দেখা যেতে লাগল দুর্নীতি সংগঠিত করতে কর্পোরেট কর্তা, ব্যাঙ্কিং এজেন্সি, রাজনৈতিক দল ও নেতা, এমনকি মিডিয়া একটি চক্র হিসাবে কাজ করছে৷ মনমোহন সিং-এর নেতৃত্বে দ্বিতীয় ইউএপিএ সরকার যখন বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত তখন ‘ইন্ডিয়া এগেনস্ট কোরাপশন’ নামে দিল্লির বুকে এক নাগরিক আন্দোলন সংগঠিত হয় যার মূল দাবি ছিল লোকপাল বিল৷ সেই আন্দোলনের নেতৃত্বের একটা অংশ পরবর্তীকালে রাজনৈতিক দল গঠন করে৷ কিন্ত্ত একথা অনস্বীকার্যযে নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতাসীন হওয়ার ক্ষেত্রে এই আন্দোলন এক অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছিল৷ খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল দুর্নীতিরোধে যে-সমস্ত কেন্দ্রীয় এজেন্সি রয়েছে তারা ২০১৪-পরবর্তী সময়ে আরও বেশি করে ক্ষমতাসীন দলের ক্রীড়নকে রূপান্তরিত হয়েছে৷ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির দুর্নীতি বিষয়ে সিবিআই ও ইডির যা সক্রিয়তা, তার এক অংশও কেন্দ্রীয় শাসকদলের বিরুদ্ধে দেখা যাচ্ছে না৷ এমনকি দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত কোনও বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতা বা কোনও ব্যবসায়ী গোষ্ঠী যদি তাদের আনুগত্য বদল করে তখন আর তাদের বিরুদ্ধে কোনও তদন্ত চলছে না৷ অনেকে এটাকে ‘ওয়াশিং মেশিন’ এফেক্ট বলে বিদ্রূপ করছেন৷ মোদি সরকারের দুর্নীতিবান্ধব হয়ে ওঠার মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকতা নেই৷ দেশের জল-জমি-প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ লুটবার জন্য সদাপ্রস্তুত কর্পোরেট গ্রুপরা ছিল তার উত্থানের প্রধান শক্তি৷ তাই মোদি সরকার শুধু দুর্নীতির অংশ হয়নি, একই সঙ্গে দুর্নীতিবিরোধী আইন ও পদ্ধতিকে দুর্বল করার চেষ্টা করেছে৷ এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ লোকপাল পদটিকে অকার্যকরী তোলা, ইডি-সিবিআই-ইনকাম ট্যাক্সের মতো তদন্তকারী বিভাগগুলোকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসাবে ক্রমাগত ব্যবহার করে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পূর্ণ নষ্ট করে দেওয়া৷ দুর্নীতি এ-দেশে নতুন কথা নয়, মোদি জমানার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল দুর্নীতিকে আইনসিদ্ধ করার এক লজ্জাজনক ধারাবাহিক চেষ্টা৷ ইলেকটোরাল বন্ড স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ আর্থিক ও রাজনৈতিক দুর্নীতি৷ এক্ষেত্রে টাকার অঙ্কের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল এই দুর্নীতির বহুমাত্রিকতা৷ এই বন্ডের মূল কথা হল দুর্নীতির আইনসিদ্ধ রূপকে প্রতিষ্ঠা করা৷ এই বন্ডের শর্তাবলি, কার্যপদ্ধতি, সুপ্রিম কোর্টের রায় বহু-আলোচিত৷ প্রাপ্ত অনুদানের সিংহভাগই বিজেপির কোষাগারে গেছে৷ ওষুধসংস্থা, বেসরকারি হাসপাতালরা কীভাবে ইলেকটোরাল বন্ড কিনে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করেছে ও জনগণের জীবনকে বিপন্ন করছে তা দেখা যেতে পারে৷ তথ্য থেকে এটা পরিষ্কার যে ৩৭টি ওষুধকোম্পানি ও স্বাস্থ্যসংস্থা প্রায় ১০০০ কোটি টাকার বন্ড কিনেছে৷ এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হল সাতটি সংস্থার কোনও-না-কোনও ওষুধ গুণমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়নি এবং দেশের নিয়ম অনুসারে এদের লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাওয়া উচিত৷ আবার দেখা যাচ্ছে যে সরকারের সঙ্গে ওষুধকোম্পানিগুলোর বোঝাপড়ার ফলে প্রতিবছর ওষুধের দাম ১০ শতাংশ বাড়ানো যাবে এবং ১৫ শতাংশ খুচরো ও পাইকারি বিক্রেতাদের জন্য বাড়তি খরচ যুক্ত করা যাবে- এই নিয়ম চালু হওয়ার পর ফার্মা কোম্পানিগুলো প্রচুর টাকার বন্ড কিনছে৷ এছাড়া ২০২০ সালে যশোদা হাসপাতালে আয়কর দপ্তরের হানার পরবর্তী তিনবছরে তারা কোটি কোটি টাকার বন্ড কিনেছে ও প্রায় সবটাই গেছে বিজেপির ঘরে৷ ইলেকটোরাল বন্ডের পর্দা ফাঁসের মধ্যেই নতুন করে সামনে আসছে পিএম কেয়ার্স নিয়ে তথ্য প্রকাশ ও তদন্তের দাবি৷ চরিত্রগতভাবে বন্ড ও পিএম কেয়ার্স ফান্ডের মধ্যে মিল হল গোপনীয়তা এবং অস্বচ্ছতা৷ কোভিড পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এই ফান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম দিন থেকেই উঠেছে৷ কিন্ত্ত মোদি সরকার তথ্যের অধিকার আইন ও ক্যাগের আওতার বাইরে থাকার জন্য একটি অসরকারি ট্রাস্ট হিসাবে একে গঠন করে৷ জনগণের কল্যাণের জন্য এই ট্রাস্ট তৈরির কথা বলা হলেও এর পরিচালকদের সঙ্গে জনগণের কোনও সম্পর্ক নেই৷ একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে যে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের মতো এতদিনকার বিশ্বাসযোগ্য একটি তহবিল থাকা সত্ত্বেও কেন আলাদা করে পিএম কেয়ার্স তৈরি হল! স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে সরকারি স্তরে দুর্নীতির প্রশ্নে প্রতিরক্ষা বিষয়ক স্ক্যাম মূল বিষয় থেকেছে৷ কংগ্রেসের বোফর্স কামান, সাবমেরিন থেকে অটল বাজপেয়ির সময়কার সামরিক পোষাক, কফিন- কোনওটাই দুর্নীতিমুক্ত নয়৷ ভারত যেহেতু সামরিক অস্ত্র ও সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে পৃথিবীর মধ্যে অগ্রগণ্য ক্রেতা তাই বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে কিছু কেনার সময় মোটা অঙ্কের কমিশন এক বহুচর্চিত বিষয়৷ কিন্ত্ত এই সমস্ত কিছুকে ছাপিয়ে গেছে রাফাল বিমানক্রয়-সংক্রান্ত স্ক্যাম৷ ভারতে আধুনিক যুদ্ধবিমানের চাহিদা মেটানোর জন্য পূর্বতন ইউপিএ সরকারের সঙ্গে ফ্রান্সের দাসাউ বিমান সংস্থার বহু আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এক চুক্তি চূড়ান্ত হয়৷ এতে বলা হয় ভারত এই সংস্থার কাছ থেকে রাফাল আধুনিক যুদ্ধবিমান ক্রয় করবে৷ দরপত্রে বলা হয়েছিল ১৮টি বিমান আনা হবে সরাসরি বিদেশ থেকে এবং বাকি ১০৮টি হস্তান্তরিত প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি হবে৷ দাসাউ-এর পক্ষ থেকে জানানো হয় যে তাদের কোম্পানি ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হ্যালের সঙ্গে যৌথভাবে ভারতের মাটিতে বিমান তৈরি করবে৷ ছবিটা পাল্টে গেল ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে৷ ফ্রান্স সফরে (২০১৫) প্রধানমন্ত্রী জানান ভারত সরকার প্রথমে ৩৬টি রাফাল কিনবে এবং ১২৬টি বিমান কেনার পূর্ববর্তী আলোচনা বাতিল৷ এই ৩৬টি বিমান কেনার দাম স্থির হয় ৫৯,০০০ কোটি টাকা৷ সরকার দাম কমানো হয়েছে, এ-কথা দাবি করলেও বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকা রীতিমতো হিসেব কষে দেখায় যে আগের তুলনায় দাম ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ আরও ভয়ঙ্কর বিষয় হল এতদিন দেশের যুদ্ধবিমান তৈরির একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হ্যালকে সরিয়ে দিয়ে তার জায়গায় অনিল আম্বানির রিলায়েন্স এরোস্ট্রাকচার কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হল৷ অনিল আম্বানি গোষ্ঠীর বিমান তৈরি করার অভিজ্ঞতা শূন্য শুধু তা-ই নয়, আদতে নরেন্দ্র মোদির ঘোষণার পর এই কোম্পানিটি গঠিত হয়৷ এই চুক্তি যখন হচ্ছে তখন অনিল আম্বানি গোষ্ঠীর বাজারে দেনার পরিমাণ ১,২০,০০০ কোটি টাকা৷ একটি দেউলিয়া হতে চলা কোম্পানিকে দাসাউ-এর মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সংস্থা তাদের অফসেট সঙ্গী নির্বাচন করল কীভাবে! এই উত্তর আমরা পেয়ে যাই যখন ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি এক সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেন যে আম্বানিদের সহযোগী হিসাবে মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না কারণ তারা ছিল ভারত সরকারের পছন্দ৷ আরেকবার স্মরণ করা যেতে পারে যে পূর্ববর্তী প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত দুর্নীতির আখ্যানগুলির সঙ্গে রাফাল চুক্তির একটা মূলগত পার্থক্য রয়েছে৷ এতদিনকার চুক্তিগুলোর দুর্নীতির প্রধান ক্ষেত্রটি ছিল কাটমানি ও কমিশন এজেন্ট-কেন্দ্রিক৷ কিন্ত্ত রাফাল দুর্নীতি চরিত্রগতভাবে ক্রোনি ক্যাপিটালাজিমের গল্প৷ এখানে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, আমলাতন্ত্র ও নির্দিষ্ট কর্পোরেট গোষ্ঠীর দেওয়ানেওয়ার মধ্যে দিয়ে বিদ্যমান নিয়মাবলিকে লঙ্ঘন করে কোনও একটি গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়া হয়৷ আদানি-আম্বানিদের লীলাক্ষেত্রে তাই রাফাল দুর্নীতি অনিবার্য ছিল৷ এই ক্রোনি ক্যাপিটালিজমের বিস্তারের গল্পের এই অমৃতকালে সবচেয়ে বড় চরিত্র অবশ্যই গৌতম আদানি গোষ্ঠী এবং তাদের চমকপ্রদ উত্থান৷ ভারতের প্রত্যেক অংশে ছড়িয়ে আছে আদানি সাম্রাজ্য৷ বন্দর, বিমানবন্দর, কয়লাখনি, পরিকাঠামো, গ্রিন এনার্জি, সিমেন্ট, ডাটা স্টোরেজ, মিডিয়া সব ক্ষেত্রে তাদের অনিবার্য উপস্থিতি৷ এই উত্থানের গল্পের পরতে পরতে লুকিয়ে আছে অনৈতিক ও অস্বচ্ছ ব্যবসানীতি যা সম্ভব হয়েছে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের দাক্ষিণ্যে৷ গৌতম আদানি ও নরেন্দ্র মোদি জুটির রসায়ন শুরু হয় গুজরাত থেকে মুন্দ্রা বন্দর ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সাফল্যের মাধ্যমে৷ ২০০৩ সালে গুজরাতে নরমেধ যজ্ঞের পর দেশীয় রাজনীতিতে কোনঠাসা নরেন্দ্র মোদিকে ভাইব্রান্ট গুজরাতের মাধ্যমে কর্পোরেট মহলের সেরা বাজি করে তোলার ক্ষেত্রে সূত্রধরের ভূমিকা পালন করেন গৌতম আদানি৷ পরিবর্তে আর্থিক ও রাজনৈতিক দুর্নীতির মাধ্যমে আদানি গ্রুপকে পৃথিবীর অন্যতম কর্পোরেট গ্রুপ করে তোলার দায়িত্ব নেয় মোদি সরকার৷ আদানিদের উত্থান আজ চৌকিদারদের সততার দাবিকে প্রশ্নচিহ্নের মুখে ফেলেছে৷ ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদি টেলিভিশনে এক অগ্নিবর্ষী ভাষণের মধ্যে দিয়ে নোটবন্দির কথা ঘোষণা করেন৷ এর ফলে এক ধাক্কায় বাজার চলতি নোটের ৮৬ শতাংশ অবৈধ হয়ে যায়৷ বলা হয়েছিল নোট অবৈধ ঘোষণার কারণ জাল নোট, যা দেশের অর্থনীতির ক্ষতিসাধক এবং বিভিন্ন নাশকতামূলক কার্যকলাপের পৃষ্ঠপোষক৷ হিসাববহির্ভূত আয় সম্পদ, যা সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা অনুসারে ব্ল্যাক মানি বা কালা ধন৷ এই দুটো উদ্দেশ্য পূরণের জন্য মোদির যুদ্ধ ঘোষণা যা পূরণ হলে খতম হবে দারিদ্র্য, অভাব, বঞ্চনা ও কালোবাজারি৷ কিন্ত্ত কিছুদিন পর থেকে জাল টাকা ও কালাধনের বিরুদ্ধে রণদামামার আওয়াজ কমতে লাগল৷ নতুন কথা এল ক্যাশলেস ইকোনমি৷ মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট-নির্ভর নগদবিহীন অর্থনীতি হয়ে উঠবে আমাদের যাবতীয় মুশকিল আসান৷ ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিকাল ইন্সটিটিউট এবং ন্যাশানাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির সমীক্ষায় প্রমাণ হয়েছিল বাজারে চালু প্রতি দশ লক্ষ নোটের মধ্যে জালের সংখ্যা আড়াইশো মাত্র৷ আবার বেশিরভাগ টাকা ব্যাঙ্কে ফেরত আসার কারণে কালো টাকা উদ্ধারের গল্পটাও মাঠে মারা গেল৷ নোটবন্দির সেই সময়ে আমেদাবাদ ডিস্ট্রিক্ট কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কে মাত্র ৫ দিনে জমা পড়েছিল ৭৪৫.৫৯ কোটি টাকা৷ একটা জেলাস্তরের সমবায় ব্যাঙ্কে এত পরিমাণ টাকা জমা কীভাবে হল তা নিয়ে আজ পর্যন্ত কোনও তদন্তের আদেশ দেওয়া হয়নি৷ এটা মনে করিয়ে দরকার যে মোদি সরকারের জমানায় দেশ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ঋণখেলাপিদের জন্য স্বর্গরাজ্য হয়েছে৷ বিজয় মাল্য, নীরব মোদি, মেহুল চোকসিরা জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে এক নতুন ‘ভারত ছাড়ো’ অভিযান শুরু করেছে সরকারের মদতে৷ এই সরকারের জমানায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পুত্র জয় শাহের টেম্পল এন্টারপ্রাইজেসের ব্যবসা এক বছরে ১৬,০০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ এর পর্যন্ত কোনও তদন্ত হল না৷ বিজেপি আর দুর্নীতি সমার্থক৷ মোদি সরকারের এই দুর্নীতিবান্ধব হয়ে ওঠার মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকতা নেই৷ এ-কথা সত্যি যে দুর্নীতিবিরোধী লড়াইকে ব্যবহার করে মোদি ক্ষমতায় এসেছিলেন৷ আবার অন্যদিকে দেশের জল-জমি-প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ লুটবার জন্য সদা প্রস্তুত কর্পোরেট গ্রুপরা ছিল তার প্রধান শক্তি৷ তাই মোদি সরকার শুধু দুর্নীতির অংশ হয়নি, একই সঙ্গে দুর্নীতিবিরোধী আইন ও পদ্ধতিকে দুর্বল করার চেষ্টা করেছে৷ এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ লোকপাল পদটিকে অকার্যকরী তোলা৷ দুর্নীতি এ দেশে নতুন কথা নয়, মোদি জমানার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল দুর্নীতিকে আইনসিদ্ধ করার এক লজ্জাজনক ধারাবাহিক চেষ্টা৷ ‘না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা’ থেকে ‘চৌকিদার হি চোর হ্যায়’- এই বিবর্তনই বোধহয় এই জমানাকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারে৷