• facebook
  • twitter
Friday, 21 March, 2025

ঋণের দায়েই খুন, নাকি আত্মহত্যা? দ্বন্দ্বে পুলিশ

কিশোরীর মৃত্যুর কারণ কি ঘুমের ওষুধ, নাকি অন্য কিছু? বিলাসবহুল জীবনযাপন করতে গিয়েই কি আর্থিক অসচ্ছলতা? ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ব্যবসার মন্দা থেকেই কি আর্থিক ক্ষতি? দুই বধূর পাশাপাশি কিশোরীর খুনের পিছনে হাত কার? ঘটনার দিন বাড়িতে কি তৃতীয় ব্যক্তির আগমন? কিশোরীকে খুন করা হলেও কিশোরকে বাঁচানোর চেষ্টা কেন?

নিজস্ব গ্রাফিক্স চিত্র

একদিকে বাজারে গলা পর্যন্ত ঋণ, অন্যদিকে সেই ঋণ শোধের জন্য বাড়ি বন্ধক। কারখানায় শ্রমিকেরা দুই শিফট মিলিয়ে কাজ করলেও বেতন দিতে খেতে হচ্ছিল হিমশিম। সব মিলিয়ে বৈভবের আড়ালে কী চরম আর্থিক অসচ্ছলতা! আর সেই কারণেই কি সপরিবারে আত্মহত্যার মতো চরম পথ বেছে নিয়েছিল ট্যাংরার দে পরিবার? রহস্য উন্মোচনে ক্রমেই চক্রব্যূহে পরিণত হচ্ছে ট্যাংরা কাণ্ড।
ট্যাংরার একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় ইতিমধ্যেই পুলিশের হাতে উঠে এসেছে দে পরিবারের দুই বধূ এবং কিশোরীর ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, রোমি দে এবং সুদেষ্ণা দে-র মৃত্যুর কারণ হিসেবে গলায় এবং হাতের কব্জিতে গভীর ক্ষতের উল্লেখ থাকলেও দে বাড়ির একমাত্র কন্যা বছর চোদ্দর কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে বিষক্রিয়ার ফলে। তবে ঘুমের ওষুধের ফলেই সেই বিষক্রিয়া কিনা, তা জানতে নমুনা পরীক্ষা করানো হবে বলে জানাচ্ছেন তদন্তকারী আধিকারিকেরা।

বস্তুত মেয়ের মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসতেই মৃতা রোমি দে-র বাবা বুধবার রাতেই ট্যাংরা থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করেছেন। এদিন ময়নাতদন্তের সময় হাসপাতালের মর্গের কাছে তিনি উপস্থিত থাকলেও নিকটাত্মীয়ের মৃত্যুর কারণ নিয়ে সেভাবে কিছু বলতে চাননি। অন্যদিকে, দে বাড়ির ছোট বউ সুদেষ্ণা দে-র বাবা-মা গত হয়েছেন বছরখানেক আগেই। বাপের বাড়ির সদস্য বলতে মুম্বইবাসী ভাই। দিদির এই আকস্মিক মৃত্যুতে শোকাহত তিনিও। তবে তাঁর কাছেও স্পষ্ট নয় পরিবারের এই চরম পরিণতির কারণ।

উল্লেখ্য, বুধবার সকালেই জ্ঞান ফিরেছে হাসপাতালে ভর্তি দুই ভাইয়ের। তবে ছোট ভাই প্রণয় মানসিকভাবে বিধ্বস্ত, ফলে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারেননি তদন্তকারী আধিকারিকেরা। তবে পুলিশি জেরার মুখে বড় ভাই প্রসূন জানিয়েছেন, তাঁরা আগে থেকেই পরিকল্পনা করেছিলেন সপরিবারে আত্মহত্যা করার। আর সেই কারণেই সোমবার রাতে পায়েসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খেয়েছিলেন সকলে। কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় পরের দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার নেওয়া হয়েছিল আরও কঠিন পদক্ষেপ। ছুরি দিয়ে কেটে ফেলা হয়েছিল দুই বউয়ের গলা এবং হাতের শিরা। জেরার মুখে পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, ট্যাংরার অতুল শূর রোডের বাড়ি থেকে বেরিয়ে সেই রাতে কার্যত উদ্দেশ্যহীনভাবে শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছিল দে পরিবারের গাড়ি।

জানা গিয়েছে, প্রথমে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে ধরে কোণা এক্সপ্রেসওয়ে। তারপর সেখান থেকে দ্বিতীয় হুগলি সেতু ধরে এজেসি বোস ফ্লাইওভার দিয়ে গাড়ি গিয়েছিল পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্টে। সেখান থেকে সায়েন্স সিটি হয়ে গাড়ি গিয়ে উঠেছিল ইএম বাইপাসে। আর সেখানেই অভিষিক্তা মোড়ের কাছে পিলারে সজোরে ধাক্কা মারে গাড়ি। সূত্রের খবর, বাড়ির মেয়েকে খুন করলেও কিশোরকে মাঝপথে হাসপাতালে নামিয়ে দিতে চেয়েছিলেন দুই ভাই। কিন্তু কিশোর তাতে আপত্তি করাই ফের একসঙ্গে আত্মহত্যার চেষ্টা। তবে বাড়ির মেয়েকে মেরে ফেলা হলেও ছেলেকে কেন বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিলেন দুই ভাই? তা এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়।

মৃতাদের ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, হাতের এবং গলার কাটা দাগ অত্যন্ত মসৃণ। তা দেখে তদন্তকারী আধিকারিকদের অনুমান, ঘুমন্ত অবস্থাতেই খুন করা হয়েছে দে বাড়ির দুই বউকে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে আরও জানা গিয়েছে, তিনজনেরই মৃত্যু হয়েছিল মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিকেলের মধ্যে।