• facebook
  • twitter
Tuesday, 29 April, 2025

বাকস্বাধীনতা পুলিশকে বুঝতে হবে : সুপ্রিম কোর্ট

গুজরাতের জামনগরে সাংসদের বিরুদ্ধে এফআইআর রুজু হয়। এরপর গুজরাত হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ইমরান।

ফাইল চিত্র

সংবিধান গৃহীত হওয়ার ৭৫ বছর পর পুলিশকে বাকস্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা ‘অন্ততপক্ষে এখন’ বুঝতে হবে। কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ ইমরান প্রতাপগড়ির বিরুদ্ধে এক মামলার শুনানিতে সোমবার এ কথা জানায় সুপ্রিম কোর্ট।

কংগ্রেস সাংসদ ইমরান প্রতাপগড়ির বিরুদ্ধে একটি উস্কানিমূলক গানে অংশ নেওয়ার অভিযোগে এফআইআর হয়। সেই এফআইআর বাতিল করার জন্য আবেদন জানান রাজ্যসভার সাংসদ। বিচারপতি অভয় এস ওকা এবং উজ্জ্বল ভূঁইয়ার বেঞ্চ সংবিধানের ১৯(১)(এ) অনুচ্ছেদের অন্তর্গত বাকস্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের মৌলিক অধিকার রক্ষার গুরুত্বের কথা তুলে ধরে। বিচারপতি ওকা বলেন, ‘যখন কথা বলা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা আসে, তখন তা রক্ষা করতে হবে।’ বিচারক আরও বলেন, ‘এফআইআর দায়ের করার আগে পুলিশকে কিছুটা সংবেদনশীলতা দেখাতে হবে। তাদের অন্তত পড়তে ও বুঝতে হবে (সংবিধানের অনুচ্ছেদ)। সংবিধানের পঁচাত্তর বছর পর, বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অন্তত এখন পুলিশকে বুঝতে হবে।’

কংগ্রেস সাংসদ ইমরান প্রতাপগড়ি একটি ভিডিও সমাজ মাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন। ভিডিওটির নেপথ্যে একটি কবিতা পাঠ ছিল। ওই কবিতাকে কেন্দ্র করেই বিতর্কের সূত্রপাত হয়। সাংসদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগে গুজরাত পুলিশ এফআইআর রুজু করে। এরপর এফআইআর খারিজের দাবিতে মামলা করেন কংগ্রেস সাংসদ ইমরান। সোমবার ওই মামলার শুনানির পর রায়দান স্থগিত রাখে শীর্ষ আদালত।

বিচারপতি ওকা উল্লেখ করেন যে, এটি ‘শেষ পর্যন্ত একটি কবিতা’ এবং প্রকৃতপক্ষে, অহিংসার প্রচার করেছিল। বিচারপতি ওকা বলেন, ‘এর অনুবাদে কিছু সমস্যা আছে বলে মনে হচ্ছে। এটি কোনও ধর্মের বিরুদ্ধে নয়। এই কবিতাটি পরোক্ষভাবে বলে যে, কেউ হিংসায় লিপ্ত হলেও আমরা হিংসায় লিপ্ত হব না। কবিতাটির মধ্যে দিয়ে এই বার্তাই প্রকাশ পেয়েছে। এটি কোনও নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নয়।’

শীর্ষ আদালতের বিচারপতি অভয় এস ওকা এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভূঁইয়ার বেঞ্চে মামলাটির শুনানি ছিল সোমবার। আইনি খবর পরিবেশনকারী ওয়েবসাইট-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুই বিচারপতির বেঞ্চের মৌখিক পর্যবেক্ষণ, ওই কবিতাটির সঙ্গে দেশবিরোধী কার্যকলাপের কোনও যোগ নেই। পুলিশের তার অর্থ বোঝা উচিত। এফআইআর রুজু করার ক্ষেত্রে পুলিশের সংবেদনশীলতার অভাব ছিল বলেও জানিয়েছেন বিচারপতি ওকা।

সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা গুজরাত সরকারের তরফে আদালতে জানান, কবিতার অর্থ বুঝতে হয়ত অনেকের ভুল হয়েছে। তখন বিচারপতি ওকা বলেন, ‘এটাই সমস্যা। এখন সৃজনশীলতার কোনও সম্মান নেই। এটি পড়লে আপনি বুঝতে পারবেন যে এখানে বলা হয়েছে, যদি আপনি কোনও অবিচারও পান, সেটিও ভালবাসার সঙ্গে গ্রহণ করুন।’ মামলাকারী কংগ্রেস সাংসদের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী কপিল সিব্বল।

গুজরাতের জামনগরে সাংসদের বিরুদ্ধে এফআইআর রুজু হয়। এরপর গুজরাত হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ইমরান। তবে এফআইআর খারিজ না করে হাইকোর্ট জানিয়েছিল, বিষয়টিতে আরও অনুসন্ধানের প্রয়োজন রয়েছে। এরপরে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন ইমরান।