সংসদে শীতকালীন অধিবেশন শুরু হওয়ার আগেই বিরোধীদের তোপ দাগলেন প্রধানমন্ত্রী। সংসদ নাটক করার জায়গা নয়, পরিষেবা দেওয়ার জায়গা বলে সাফ জানিয়ে দিলেন তিনি। বিহার নির্বাচনে হারের হতাশা কাটিয়ে বিরোধীদের জনস্বার্থে কাজ করার পরামর্শও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
গণতন্ত্রের উপর জোর দিয়ে মোদী বলেন, বিহারের নির্বাচন গণতন্ত্রের ‘উজ্জ্বল উদাহরণ’। তার পরেই বিরোধীদের খোঁচা দিয়ে বলেন, ‘কিছু দল এখনও নির্বাচনী পরাজয়কে গ্রহণ করতে পারেনি।‘ একই সঙ্গে মোদীর সংযোজন, ‘ধারাবাহিক পরাজয় সংসদে আলোচনার বিষয়বস্তু হতে পারে না।‘
Advertisement
প্রতিবারই অধিবেশন শুরুর আগে সংসদ চত্বরেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন প্রধানমন্ত্রী। কোনও প্রশ্নের উত্তর দেন না। নিজের বক্তব্য শুধু পেশ করেন। এ দিন শুরু থেকেই বিরোধীদের উপর খড়্গহস্ত ছিলেন মোদী। শুরুতেই বিহারে এনডিএর-এর বিপুল জয়ের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই জয় অনেকের হজম হচ্ছে না।’ তবে তিনি খুশি।
Advertisement
ভাষণ দিতে গিয়ে মোদি বলেন, ‘যারা নাটক করতে চায়, করতেই পারে। তবে এটা নাটকের জায়গা নয়, কাজের জায়গা। এখানে স্লোগান নয়, নীতির প্রতি জোর দিতে হবে। দেশ গড়ার জন্য ইতিবাচক মানসিকতার দরকার হয়। আমি অনুরোধ করব, নেতিবাচক বিষয়গুলি কমিয়ে সকলে যেন দেশ গঠনের লক্ষ্যে জোর দেন। হারের ভয়টা যেন তর্কের কারণ হয়ে না ওঠে।‘
বিরোধীদের দায়িত্ব মনে করিয়ে দিয়ে মোদি বলেন, ‘এই সংসদ দেশের কথা ভাবে। বিরোধীদেরও উচিত এই মর্মে প্রশ্ন তোলা, কঠিন প্রশ্ন করা। হারের ভয় কাটিয়ে উঠতে হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে কিছু দল হার হজমই করতে পারে না।‘ যেসব সাংসদরা নতুন নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের বেশি করে মতামত প্রকাশেক সুযোগ দেওয়া উচিত বলে জানান মোদী।
এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে পাল্টা আক্রমণ করেছেন কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা। সংসদে ঢোকার আগে তিনি বলেন, ‘দূষণ কিংবা এসআইআর-এর মতো জরুরি বিষয় নিয়ে সংসদে আলোচনা হওয়া উচিত। বিষয়গুলি তোলা নাটক নয়। যখন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জনস্বার্থ সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেওয়া হয় না, তখনই আদতে নাটক করা হয়।‘
কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ‘সব থেকে বড় ড্রামাবাজ’ বলে তোপ দেগেছে। এক্স হ্যান্ডলে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে লিখেছেন, মানুষের সমস্যার কথা বাদ দিয়ে মোদী আবার ড্রামেবাজি কথাবার্তা শুরু করে দিয়েছেন। এই সরকার গত ১১ বছর ধরে সংসদীয় রীতিনীতির ধার ধারছে না। বিজেপির উচিত এখনই নাটক বন্ধ করা এবং মানুষের সমস্যার কথা সংসদে তুলে ধরা।
রাজ্যসভার সাংসদ জয়রাম রমেশ খাড়্গের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেছেন, সবথেকে বড় নৌটঙ্কি নাটকবাজির কথা বলছেন। সুষ্ঠুভাবে সংসদ না চলে তবে তার দায়িত্ব বর্তায় প্রধানমন্ত্রীর উপর। সংসদে মানুষের সমস্যার কথা তুলতে দিচ্ছেন না তিনি।
এসআইআর নিয়ে কোনও আলোচনা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছি কেন্দ্র সরকার। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেণ রিজেজুর বলেন, এসআইআর নির্বাচন কমিশন পরিচালিত একটি প্রশাসনিক প্রক্রিয়া। এর সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই। তাছাড়া নির্বাচন কমিশন একটি স্বশাসিত সংস্থা। তার হয়ে জবাব দেওয়া সরকারের কাজ নয়।
সংসদে শীতকালীন অধিবেশন শুরু হয়েছে সোমবার। চলবে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ছুটির দিনগুলি বাদ দিলে মোট ১৫ দিন অধিবেশন চলবে। সাধারণত শীতকালীন অধিবেশন ২০ দিন ধরে চলে। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে কংগ্রেস-সহ অন্য বিরোধী দলগুলি। উল্লেখ্য, শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনই বিরোধীদের দফায় দফায় হট্টগোলে লোকসভা দুপুরের মধ্যেই মুলতুবি করে দেওয়া হয়। সভা বসবে মঙ্গলবার বেলা ১১টায়।
Advertisement



