এনআরসি : জ্বলছে উত্তর-পূর্ব

কেন্দ্রের নাগরিকত্ব বিল নিয়ে বিজেপি-শাসিত অসমেই ক্ষোভের আগুন জ্বলছে দাউদাউ করে। কার্ফু জারি করা হয়েছে সেখানে। বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা।

Written by SNS New Delhi | December 14, 2019 12:39 pm

গুয়াহাটিতে নাগরিকত্ব (সংশােধনী) বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। (Photo by Biju BORO / AFP)

উত্তর-পূর্ব ভারতের পরিস্থিতি ক্রমেই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইতিমধ্যেই তাদের সফর বাতিল করেছেন। এবার জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সফর নিয়েও তৈরি হয়েছে সংশয়। কারণ তাঁর অসমেই আসার কথা রয়েছে। নিমন্ত্রণ করেছিল মােদি সরকারই। কিন্তু সেই সফরই বাতিল হতে চলেছে এবার।

কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, নাগরিকত্ব সংশােধনী বিল বা ক্যাব নিয়ে উত্তর-পূর্বের উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দিতেই সেখানে শিনজো আবেকে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তার উপস্থিতিতে উত্তর-পূর্বের জন্য বহু প্রকল্প ঘােষণা করা হবে, এমন পরিকল্পনাও হয়ে গিয়েছিল। এমনকি জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানাের জন্য ছবিওয়ালা বাের্ডও লাগানাে হয়ে গেছিল গুয়াহাটির রাস্তায়। কিন্তু গত তিনদিনে যা পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, তাতে শিনজো আবের এই সফর হওয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে।

কেন্দ্রের নাগরিকত্ব বিল নিয়ে বিজেপি-শাসিত অসমেই ক্ষোভের আগুন জ্বলছে দাউদাউ করে। কার্ফু জারি করা হয়েছে সেখানে। বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা। এই অবস্থায় শিনজো আবের ভারতে আসা আদৌ হবে কিনা, হলে কোথায় হবে, তা নিয়ে রীতিমতাে চিন্তায় পড়ে গেছে নয়াদিল্লি।

বুধবার রাত থেকেই গুয়াহাটির রাজপথে নেমে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন অন্তত দশ হাজার মানুষ। হাত কেটে রক্ত দিয়ে পােস্টার লিখে স্লোগান তােলেন ছাত্রছাত্রীরা। রাজধানী দিসপুরের সচিবালয়ের নিরাপত্তাবেষ্টনী ভেঙে ফেলেন প্রতিবাদীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বঙ্গাইগাঁও ও ডিব্রুগড়ে দু’কলাম সেনা মােতায়েন করা হয়। জোরহাটেও সেনা মােতায়েন করা হয়। ডিব্রুগড়ে জারি হয় ১৪৪ ধারা। সেখানে যে কোনও ধরনের জমায়েত, মিটিং, মিছিল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সিদ্ধান্ত হয়, অসমের অন্তত ১০টি জেলায় আরও ৪৮ ঘণ্টা ইন্টারনেট ও মােবাইল পরিষেবা বন্ধ রাখা হবে। গুজব রুখতে বুধবার ইন্টারনেট ও মােবাইল ফোন পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছিল প্রশাসন। এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অসমের শীর্ষ প্রশাসনিক কর্তারা। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়, রাজ্য পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আর নেই গােটা পরিস্থিতি। তাই আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব দেওয়া হােক সেনাবাহিনীকেই।

নাগরিকত্ব আইনের বিরােধিতায় উত্তরপুর্ব সহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলােতে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হিংসাত্মক চেহারা নিয়েছে। মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে প্রতিবাদকারীরা রাজভবনের সামনে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছুঁড়তে শুরু করলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। শুধু তাই নয়, প্রতিবাদকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের সেল ছােড়ে।

শহরের পরিস্থিতি জটিল চেহারা নেওয়ার পর মেঘালয়ে আগামি দু’দিন ধরে মােবাইলে ইন্টারনেট ও এসএমএস পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নাগরিকত্ব বিল নিয়ে কয়েক হাজার প্রতিবাদকারী গতকাল টর্চ হাতে রাস্তায় মিছিল করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। শহরের কয়েকটি জায়গায় কার্ফু জারি করার পর ফের হিংসা ছড়ায়। পুলিশের লাঠির ঘায়ে জখমদের সিভিল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শহরে দোকানপাঠ বন্ধ থাকার পাশাপাশি রাস্তায় যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। স্থানীয়দের ফোনের ভিডিওতে দেখা গেছে রাস্তায় দুটো গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

স্বাধীনতা সংগ্রামীর প্রয়াণ বর্ষের প্রােগ্রামে যােগ দেওয়ার লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী কনরাদ সাংমা উইলিয়ামনগর শহরে পৌছলে স্থানীয় যুবক-যুবতীরা ব্যানার হাতে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ের সামনে ‘কনরাদ ফেরত যাও’ স্লোগান দিতে থাকেন। মেঘালয় পুলিশের তরফে টুইট করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার লক্ষ্যে সহযােগিতার আহ্বান করার পাশাপাশি স্থানীয়দের গুজব না ছড়ানাের আবেদন করেন। শিলংয়ে পরিস্থিতির ওপর কড়া নজরদারি চালানাে হচ্ছে। নিরাপত্তাজনিত কারণে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের শিলং সফর বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।

অসমেও পরিস্থিতি উদ্বেগজনক, ক্ষুব্ধ প্রতিবাদকারীরা বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। ঘটনায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। ত্রিপুরাতে নতুন কোনও ধরণের হিংসার খবর পাওয়া যায়নি। আগরতলায় বনধ পালিত হচ্ছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিস বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মােদি টুইট করে অসমিয়াদের আশ্বস্ত কবে লিখেছিলেন, ‘অসমের জনগণের ভয় পাওয়ার দরকার নেই। আমি নিশ্চিত করে বলছি, আপনাদের অধিকার, পরিচিতি ও সংস্কৃতি কেউ কেড়ে নেবে না’

এদিকে নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে সােচ্চার জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ করে। শুধু তাই নয়, প্রতিবাদকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের সেল ছােড়ে। পড়ুয়ারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে মিছিল করে সংসদ ভবনের দিকে যেতে গেলে পুলিশ তাদের ব্যারিকেড দিয়ে পথ আটকে দেয়। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাথর ছুড়তে শুরু করে। পুলিশও পাল্টা লাঠিচার্জ করে। পড়ুয়ারা ঘােষণা করেছিল নাগরিকত্ব (সংশােধনী) বিলের প্রতিবাদে মিছিল করে সংসদ ভবন পর্যন্ত যাবে।

দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশনের তরফে টুইট করে লেখা হয়, দিল্লি পুলিশের উপদেশ মতাে প্যাটেল চক ও জনপথ মেট্রো স্টেশনের গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। দুটি স্টেশনে ট্রেন দাড়ায় নি।