পূর্ব রাশিয়ার উন্নতি প্রকল্পে একশো কোটি ডলার আর্থিক সাহায্য মোদির

রাশিয়ার পূর্ব প্রান্তের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সার্বিক উন্নতির জন্য ১০০ কোটি ডলার আর্থিক সাহায্যের ঘােষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি।

Written by SNS Vladivostok | September 6, 2019 12:10 pm

রাশিয়ার পূর্ব প্রান্তের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সার্বিক উন্নতির জন্য ১০০ কোটি ডলার আর্থিক সাহায্যের ঘােষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি । প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ এই অঞ্চলের উন্নতির জন্য মস্কোর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দিল্লি কাজ করতে ইচ্ছুক বলে জানান তিনি।

পূর্ব রাশিয়ার ভলাদিভস্তকে পঞ্চম ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরামে বক্তব্য রাখার সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি জানান, ‘অন্য দেশের উন্নতির জন্য বিশেষ আর্থিক সাহায্য করছে এটা ব্যতিক্রমিক ঘটনা ভারতের কাছে। পূর্ব রাশিয়ার উন্নতির জন্য ১০০ কোটি ডলার আর্থিক সাহায্য দিয়েছে ভারত। আমাদের সরকার ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’-র অঙ্গ হিসাবে পূর্ব এশিয়ার উন্নতিতে সামিল রয়েছে’।

ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরামের সভায় রাশিয়ার উন্নতিতে ভারতের পাশে থাকার কারণ ব্যাখ্যা করার সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি বলেন, আমি বিশ্বাস করি এই ধরনের আর্থিক সাহায্য কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে। প্রতিবেশি বন্ধু রাষ্ট্রগুলির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সমঝােতাকে আরও বলিষ্ঠ করবে। দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী পদে বসার পর এই প্রথমবার রাশিয়া সফরে গেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি। চলতি সফরে মস্কোর সঙ্গে ৫০০ কোটি ডলারে ৫০টি চুক্তি হয়েছে বলে জানিয়েছে রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা তাস।

কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের পাশে থাকার জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ধন্যবাদ জানালেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি। পুতিনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের মিথ্যে ও প্ররােচনামূলক কাজের ব্যাপারে ভারতের তরফে রাশিয়াকে সবটা বুঝিয়ে বলা হয়েছিল। তারপরেই সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে মস্কো’।

ভারতের বিদেশ সচিব বিজয় গােখলে জানিয়েছে, রাশিয়ার ফার ইস্টার্ন পাের্ট সিটিতে যৌথ বৈঠকে যােগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী মােদি নিজেই কাশ্মীর প্রসঙ্গ তুলে নেওয়ার পিছনে যে যে কারণ কাজ করছিল, সেগুলির ব্যাখ্যা দেন। তারপরেই এই বিষয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানান মােদি। কাশ্মীরের উপর থেকে বিশেষ মর্যাদা তুলে নেওয়ার পর রাষ্ট্রসংঘে দ্বারস্থ হয় পাকিস্তান। সেখানে রাশিয়া স্পষ্ট জানায়, এই বিষয়ে ভারতের পক্ষে রয়েছে তারা।

পুতিন সরকারের তরফে এও জানানাে হয়, এই বিষয়টা ভারত-পাকিস্তান দু’দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। দুই দেশের উচিত নিজেদের মধ্যেই তার সমাধান করা। তৃতীয় কোন দেশের এর মধ্যে ঢােকা উচিত নয়। এই বৈঠকের পরে ভারত ও রাশিয়ার তরফে একটি যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়েছে, কাশ্মীর প্রসঙ্গে ভারত বা রাশিয়া যে অবস্থান নিয়েছে তা সবরকমভাবে আন্তর্জাতিক আইন মেনে। রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সব নিয়মকানুন মেনেই সব করা হয়েছে। সেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, বাইরের কোনও দেশ অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাতে পারে না। বুধবার মােদি ও পুতিনের বৈঠকেও এই তৃতীয় শক্তির নাক গলানাের প্রসঙ্গ উঠে আসে।

রাশিয়ার এই বক্তব্যের পিছনে যে আমেরিকার উদ্দেশে বার্তা রয়েছে, তা স্পষ্ট। কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডােনাল্ড ট্রাম্প এই কাশ্মীর প্রসঙ্গে মধ্যস্থতার বিষয় তুলেছিলেন। তারপরেই পাকিস্তানের তরফে তাঁকে স্বাগত জানানাে হলেও ভারতের তরফে স্পষ্ট জানানাে হয়েছিল, এই বিষয়ে কোনও তৃতীয় দেশের সাহায্যের দরকার নেই। পরে অবশ্য জি৭ বৈঠক চলাকালীন ট্রাম্পও বলেন, আমি নিশ্চিত ভারত-পাকিস্তান দু’দেশ নিজেদের মধ্যে বসেই এই সমস্যার সমাধান করে নেবে।

কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়ার পর থেকে পাকিস্তান সীমান্ত থেকে বার বার পরমাণু যুদ্ধে হুঁশিয়ারি, হিংসার হুঁশিয়ারি উঠে আসছে। আর ইমরান খান যখন কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধার তুলে নেওয়া নিয়ে ব্যস্ত, তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি রাশিয়া সফরে গিয়ে সে দেশের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলােচনায় ভারতে একের পর এক ব্যবসায়িক সম্ভাবনার ইতিবাচক বার্তা নিয়ে এসেছেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদির রাশিয়া সফরের পিছনে বেশ কয়েকটি কার্যসিদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল। ভারতের মাটিতে তৈরি হবে পরমাণু জ্বালানি, আর তা নিয়ে রীতিমতাে উদ্যোগী ভারত। এই বিষয়ে আলােচনা হয়ে গিয়েছে দুটি দেশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের মধ্যে। এর আগে জ্বালানি প্রস্তুতকারক সংস্থা ‘রােসাতােম’ জানিয়ে দেয়, পরমাণু জ্বালানির বিষয়ে তারা ভারতের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।

ভারত ও রাশিয়া দুটি দেশের মধ্যে মউ স্বাক্ষরিত হয় পরমাণু শক্তি নিয়ে। আর সেখানেই ভারতের বুকে পরমাণু জ্বালানি তৈরির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এতে ভারত ও রাশিয়া যৌথভাবে কার্যকরী ভূমিকা নেবে বলে জানা গিয়েছে। কোদানকুলাম নিউক্লিয়ার প্ল্যান্টে এই জ্বালানি তৈরি হবে বলে খবর।

প্রসঙ্গত, শুধুমাত্র পরমাণ জ্বালানি প্রস্তুতি ঘিরেই রাশিয়ার সহযােগিতা পাচ্ছে না ভারত। এর পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে মােদির সখ্যতা আরও গাঢ় হয়েছে এইবারের রাশিয়া সফরে তার জেরে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ার জয়ের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে মােদিকে আমন্ত্রণ জানান পুতিন। যে ঘটনা নিঃসন্দেহে দু’টি দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় বিষয়।