ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে সংঘাত বেড়েই চলেছে। দুই দেশের মধ্যে লাগাতার গোলাবর্ষণ চলছে। এরই মধ্যে ইরান থেকে ভারতীয় নাগরিকদের বের করে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়াদিল্লি। সেই লক্ষ্যে চালু হয়েছে ‘অপারেশন সিন্ধু’। বৃহস্পতিবার ভোরে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরান থেকে ১১০ জন ভারতীয় পড়ুয়াকে নিয়ে একটি বিশেষ বিমান নিরাপদে দিল্লিতে এসেছে। তাঁদের মধ্যে ৯০ জন জম্মু ও কাশ্মীরের পড়ুয়া ছিলেন। দিল্লি থেকে কাশ্মীরে যাওয়ার জন্য সরকারের তরফে পড়ুয়াদের জন্য বাসের ব্যবস্থা করা হয়। তাঁদের অভিযোগ, দিল্লি থেকে জম্মু ও কাশ্মীর পর্যন্ত যে বাস দেওয়া হয়েছে, তা অত্যন্ত নিম্নমানের। গোটা বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দেন পড়ুয়ারা।
কাশ্মীরের বাসিন্দা শেখ আফসা ইরানের উরমিয়া মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির পড়ুয়া। বৃহস্পতিবার সকালে দিল্লি হয়ে বাড়ির পথে রওনা হন তিনি। বাসের অবস্থা দেখে রীতিমতো হতাশ আফসা। ছেঁড়া সিট, যত্রতত্র নোংরা পড়ে রয়েছে। আফসার কথায়, ‘আমরা খুব ক্লান্ত। বাসে যাওয়াই কষ্টকর। তার উপর বাসের অবস্থাও মোটেই ভালো নয়।’ শুধু আফসা নন, বাসের বেহাল দশা নিয়ে সরব হন অনেক পড়ুয়াই। তিনটি বাসে অবস্থাই বেহাল ছিল। জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার কাছে বিকল্প ব্যবস্থার আর্জিও জানান তাঁরা।
পড়ুয়ারা ক্ষোভের বিষয়টি জানতে পেরে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে জম্মু-কাশ্মীর সরকার। মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার দপ্তর থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, ‘মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টা দেখছেন। জম্মু-কাশ্মীর স্টেট রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে পড়ুয়াদের জন্য উন্নত মানের ডিলাক্স বাসের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’ সূত্রের দাবি, পরবর্তীতে পড়ুয়াদের জন্য ডিলাক্স বাসের ব্যবস্থা করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার ‘অপারেশন সিন্ধু’ মিশনের তত্ত্বাবধানে উত্তর ইরান থেকে ১১০ জন পড়ুয়াকে আর্মেনিয়ায় স্থানান্তরিত করা হয়। তাঁরা একটি বিশেষ বিমানে ইয়েরেভান থেকে রওনা দিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার ভোরে দেশে পৌঁছান তাঁরা। বৃহস্পতিবার যারা ফিরে এসেছে, তাঁদের মধ্যে আছেন ২১ বছরের মাজ হায়দার। তাঁরা বাবা হায়দার আলি বলেন, ‘ছেলে নিরাপদে ফিরে আসায় আনন্দিত। যাঁরা এই পরিস্থিতিতে ইরানে আটকে আছেন, তাঁদেরকেও একই ভাবে ফিরিয়ে নিয়ে আসুক কেন্দ্রীয় সরকার।’
ইরানে ভারতীয় পড়ুয়া ছাড়াও একাধিক পুণ্যার্থীও আটকে রয়েছেন। তাঁদেরও ধাপে ধাপে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই তেহরানে ইমারজেন্সি হেল্পলাইন চালু করা হয়েছে। ইরানে আটকে থাকা ভারতীয়দের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে। সূত্রের খবর, ইরানে ৪০০০-এরও বেশি ভারতীয় বসবাস করেন। তাঁদের মধ্যে অর্ধেকই অবশ্য পড়ুয়া।
ইরান থেকে দিল্লিতে নেমে এমবিবিএস পড়ুয়া মীর খলিফ বলেন, ‘ইরানে পরিস্থিতি খুবই উত্তেজনাপূর্ণ। আমরা ক্ষেপণাস্ত্র দেখতে পাচ্ছিলাম। যুদ্ধ চলছিল। আমাদের আশেপাশে বোমাবর্ষণ করা হয়েছিল। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আশা করি, আর কখনও সেই দিনগুলি দেখতে হবে না কখনও। ইরানে এখনও কিছু ছাত্র আটকে আছে। তাঁদের নিরাপদ জায়গায় স্থানান্তরিত করা হচ্ছে। আমরা আশা করি, শীঘ্রই তাঁদেরও বিমানে ভারতে ফেরানো হবে।’