• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

দারিদ্রের কষাঘাত

বিশ্বব্যাঙ্কের সমীক্ষা বলেছে, সমাজে বিত্তবানদের আবাসে কাজ করে বাড়িঘর, বাগান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে যা মজুরি পায়, তাই দিয়ে তাদের নিত্যদিনের সংসার চলে।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০২৮ সাল নাগাদ যে উন্নত মহান ভারতের কথা দেশবাসীকে শুনিয়েছেন, সেই ভারতে এখন ৩৫ কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে অত্যন্ত কায়ক্লেশে জীবনধারণ করে। প্রত্যেকটি রাজ্যে দারিদ্রপীড়িত মানুষের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। প্রতি চারজন ভারতবাসীর ম্ধ্যে একজনের পরিবার দারিদ্রসীমার নীচে। এই তথ্য সম্প্রতি পরিবেশন করেছে বিশ্বব্যাঙ্ক। সদ্য শেষ হয়ে যাওয়া এই সমীক্ষায় বিশ্বব্যাঙ্ক বলেছে এই দারিদ্রসীমার নীচে যারা বসবাস করে, তাদের জীবন উন্নত না করে মহান ভারত গড়া যাবে না। এই ৩৫ কোটি মানুষ এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা দারিদ্রের কশাঘাতে জর্জরিত। এরা বেশির ভাগই পিছিয়ে পড়া বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক। এদের স্থায়ী বাসস্থান নেই। দু’বেলা আহার তাদের জেটে না, আধপেটা খেয়ে বেঁচে আছে। তাদের প্রতিদিন রোজগারের কোনও সুযোগ নেই। কারণ কর্মসংস্থান দিন দিন গ্রামেগঞ্জে সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে। এদের চাষের কাজও মেলে না। তাহলে তারা বেঁচে আছে কী করে?

বিশ্বব্যাঙ্কের সমীক্ষা বলেছে, সমাজে বিত্তবানদের আবাসে কাজ করে বাড়িঘর, বাগান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে যা মজুরি পায়, তাই দিয়ে তাদের নিত্যদিনের সংসার চলে। এই সব পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনার সুযোগ পায় না। ফলে নিরক্ষরের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। যেহেতু গ্রামেগঞ্জে কর্মসংস্থান নেই, তাই এই সব মানুষদের অর্থকরী কোনও কাজও জোটে না। যেহেতু অর্থ রোজগারের সংস্থান নেই, তাই প্রতিদিন পরিবারের জন্য খাবারও তেমন জোটে না। পুষ্টির অভাবে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে ভুগছে। ফলে তারা নানা জটিল রোগে ভুগছে—মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি। ভারতের অঙ্গরাজ্যগুলির ওই একই অবস্থা। পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের মানুষরা যে কী দুর্বিষর জীবনযাপন করছে, তাদের কতা কেউ ভাবে না।

Advertisement

এই সব দারিদ্র পীড়িত মানুষের কথা রাজনৈতিক নেতারা মনে করেন যখন নির্বাচন আসে। এঁদের ভোট চাইতে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা তাঁদের ভোট চায়। বিনিময়ে তাদের চরম দুর্দশা ঘোচানোর নানা প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু যে সব দলের প্রার্থীরা জেতেন, তারপর তাঁদের আর সাধারণ মানুষের কথা মনে থাকে না। এরা যাতে একটু সুখে বসবাস করতে পারে, তার জন্য এই সব জনপ্রতিনিধিদের কখনও মাথাব্যথা নেই। সুতরাং সমীক্ষা বলেছে, এরা যে পীড়িত সেই পীড়িতই থেকে যাচ্ছে।

Advertisement

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের এক মুখপাত্র বলেছেন, বিশ্বব্যাঙ্কের এই সমীক্ষা যথাযথ নয়। এই সমীক্ষায় বাড়িয়ে বলা হয়েছে। সমাজে অবহেলিতরা আছে ঠিকই, কিন্তু তাদের জীবনের উন্নতির কথা যে সরকার ভাবছে না, এমনটি নয়। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাঙ্কই এর আগের সমীক্ষায় বলেছিল ভারতে দারিদ্র পীড়িত লোকের সংখ্যা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। এখনকার সমীক্ষায় তার উল্টো কথা বলা হয়েছে। সুতরাং বিশ্বব্যাঙ্কের রিপোর্ট অনেকটাই গ্রহণযোগ্য নয়।

গ্রহণযোগ্য না হলেও, ভারতে যে গরিবের সংখ্যা ক্রমশঃ বাড়ছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। দেশের লোকসংখ্যা এখন ১৪০ কোটি। দিনদিন লোকসংখ্যা বেড়েই চলেছে। সুতরাং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সর্বক্ষেত্রে যে উন্নতি হয়েছে, তা চোখে পড়ে না। অথচ ‘পপুলেশন কন্ট্রোল’ নীতিই যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে না। এতদিন চিনের লোকসংখ্যা সবচাইতে বেশি ছিল। কিন্তু চিন ‘ফ্যামিলি কন্ট্রোল’ নীতি খুব কড়াভাবে প্রয়োগ করে তার লোকসংখ্যা অনেক কমিয়ে এনেছে। তাই এখন ভারতের লোকসংখ্যা বিশ্বের দেশগুলির মধ্যে সবচাইতে বেশি। ভারতের লোকসংখ্যা যেমন ঊর্ধ্বমুখী, তেমনই তারা যাতে মোটামুটি স্বচ্ছন্দে জীবনযাপন করতে পারে, তার কোনও ব্যবস্থা নেই।

কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের বিভিন্ন জনহিতকর প্রকল্পের সুযোগসুবিধা এদের কাছে পৌঁছয় না মূলতঃ প্রশাসনের গাফিলতি ও ব্যর্থতার জন্য। ফলে যাঁরা গরিব, তাঁরা আরও গরিব হচ্ছেন, আর বিত্তবানরা আরও বিত্তশালী হচ্ছেন। স্বাধীনতার পর ভারতের যত সরকার এসেছে, সব সরকারই জোর গলায় দারিদ্র দূরীকরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের উন্নতির জন্য চেষ্টা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু কার্যত কিছুই হয়নি। সুতরাং তথাকথিত উন্নত ভারত গড়া কখনও সফল হতে পারে না এই ৩৫ কোটি মানুষের জীবনযাপনের উন্নতি সাধন না করে।

Advertisement