বিভিন্ন সংবেদনশীল বিষয়কে কেন্দ্র করে শুক্রবার রাজধানীতে বৈঠক করল জমিয়ত উলমা-এ-হিন্দ। দেশে ওয়াকফ আইন সংশোধন, অনুপ্রবেশ নিয়ে অভিযোগ, ফিলিস্তিন শান্তি প্রক্রিয়া এবং সাম্প্রতিক সময়ে মুসলমানদের পরিস্থিতি নিয়ে সার্বিক আলোচনা হয়েছে সেখানে। পাশাপাশি বৈঠকে সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটির প্রতিনিধিরা সর্বসম্মতিক্রমে মৌলানা মোহাম্মদ আসাদ মাদানিকে আবারও নতুন সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। সব রাজ্যের কার্যনির্বাহী কমিটি পরবর্তী কার্যকালের জন্য তাঁর সভাপতিত্বের সুপারিশ করে। এর পর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যভার গ্রহণ করেন এবং নতুন কার্যনির্বাহী কমিটির আনুষ্ঠানিক সূচনা করা হয়।
বৈঠকে সভাপতির আসন থেকে মৌলানা মাদানি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলি চায় যে, মুসলমানরা এই দেশের দাসে পরিণত হোক। তাঁরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে উঠুক। কিন্তু এর মধ্যে আশাপ্রদ বিষয় হল যে, দেশের নাগরিকদের একটি অংশ আমাদের সঙ্গে রয়েছেন যাঁরা আমাদের দুঃখ-দুর্দশায় সমানভাবে অংশীদার।’ তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, অনুপ্রবেশ ও জনসংখ্যা বদলের নামে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হচ্ছে, তা ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
Advertisement
কার্যনির্বাহী কমিটি প্রস্তাবে জানায়, কেন্দ্র নিজেই সংসদ ও সুপ্রিম কোর্টে লিখিতভাবে জানিয়েছে যে, ‘তাদের কাছে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের কোনো প্রামাণিক সংখ্যা নেই, তাই এই অভিযোগগুলি মিথ্যার ভিত্তিতে করা।’ জমিয়তের মতে, এই তথ্য থেকেই পরিষ্কার যে, জনসংখ্যা বদল বা অনুপ্রবেশের অভিযোগগুলি রাজনৈতিক স্বার্থে ছড়ানো হচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশের মুসলমানদের সন্দেহের চোখে দেখানোর চেষ্টা চলছে। জমিয়ত এই উস্কানিমূলক কথাবার্তার দৃঢ়ভাবে প্রতিবাদ করে।
Advertisement
এদিনের এই বৈঠকে ওয়াকফ আইন–২০২৫ নিয়েও তীব্র আপত্তি তোলা হয়। জমিয়তের দাবি, নতুন ওয়াকফ আইন এবং ‘আশা পোর্টাল’-এর ব্যবস্থা ওয়াকফ সম্পত্তির ধর্মীয় পরিচয়ের ওপর সরাসরি আঘাত। তবু সুপ্রিম কোর্ট যেহেতু কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি, তাই সব মুতওয়াল্লি ও ওয়াকফ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলদের উদ্দেশে আবেদন জানানো হয়েছে— ওয়াকফ সম্পত্তির নিবন্ধন সময়মতো সম্পন্ন করতে হবে, যাতে প্রশাসনিক বা আইনগত জটিলতা এড়ানো যায়। সংগঠন জানিয়েছে, সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক স্তরেই এই আইন নিয়ে তাদের বিরোধিতা জারি থাকবে।
বৈঠকে ফিলিস্তিন শান্তি প্রক্রিয়া প্রসঙ্গেও বিস্তর আলোচনা ও দৃঢ় অবস্থান নেওয়া হয়। জমিয়তের মতে, ‘শান্তি তখনই সম্ভব হবে, যখন ১৯৬৭-র সীমারেখার ভিত্তিতে জেরুশালেম রাজধানীসহ একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে এবং আল-আকসা মসজিদ সহ পবিত্র স্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।’ এই সংগঠন ফিলিস্তিনি জনগণের লড়াই ও আত্মত্যাগেরও প্রশংসা করেছে।
সব মিলিয়ে, দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিতে মুসলমানদের অধিকার, নিরাপত্তা এবং ধর্মীয় সম্পদের সুরক্ষা— এই তিনটি মূল বিষয়কে সামনে রেখে সংঘবদ্ধ লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিল জমিয়ত।
Advertisement



