করােনাভাইরাস আতঙ্কে বিদেশিদের জন্য দরজা বন্ধ করে দিল ভারত

করােনাভাইরাস নিয়ে সতর্কতা হিসাবে বিদেশিদের জন্য দরজা বন্ধ করে দিল ভারত। ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত কোনও ভিসা নয়। আতঙ্কের জেরে সব দেশের জন্যই ভিসা স্থগিত করে দিল ভারত।

Written by SNS New Delhi | March 13, 2020 4:15 pm

প্রতিকি ছবি (File Photo: iStock)

করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্কতা হিসাবে বিদেশিদের জন্য দরজা বন্ধ করে দিল ভারত। ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত কোনও ভিসা নয়। আতঙ্কের জেরে সব দেশের জন্যই ভিসা স্থগিত করে দিল ভারত। আগের মতাে এটা নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকবেনা। করােনা সংক্রমণকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) প্যানডেমিক অর্থাৎ বিশ্বজোড়া মহামারি ঘােষণা করার পর কেন্দ্রীয় সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধনের নেতৃত্বে বুধবার গভীর রাতে মন্ত্রীগােষ্ঠীর বৈঠকের পর এই ঘােষণা করা হয়। ভিসা স্থগিতের আদেশ ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। তবে কুটনীতিক, দূতাবাসের অফিসারগণ, রাষ্ট্রসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার পদাধিকারীদের এর থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। ১৩ মার্চ রাত ১২টা থেকে এই আদেশ কার্যকর হবে। 

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন বৃহস্পতিবার লােকসভায় বলেন, সারা দেশে করােনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৩। এর মধ্যে ৫৬ জন ভারতীয় এবং বিদেশির সংখ্যা ১৭ গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা ৬ জন বেড়েছে। বিমানবন্দরগুলিতে ১০ লক্ষ ৫৭ হাজার ৫০৬ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। 

ভিসার প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সুত্রে আরও বলা হয়েছে অন্যান্য দেশের যারা ইতিমধ্যেই ভিসা নিয়ে ভারতে আছেন তাদের ক্ষেত্রে ভিসা কোনও সমস্যা হবে না। তবে জরুরি প্রয়ােজনে যাঁরা ভারতে আসতে চাইবেন, তারা সংশ্লিষ্ট দেশের ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যােগাযােগ করে নতুন করে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারনে। 

ভিসা বাতিলের সঙ্গে সঙ্গে করােনা আক্রান্ত দেশগুলি থেকে আগত ভারতীয় ও বিদেশিদের জন্য আগের আদেশ বাতিল করে বুধবার রাতে নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। এই নির্দেশিকায় নির্দিষ্ট কিছু দেশের ক্ষেত্রে কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আগের নির্দেশিকায় শুধুমাত্র সন্দেহ হলে তাদের আলাদা করে রাখার কথা বলা হয়েছিল। নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে ১৫ ফেব্রুয়ারির পর চিন, ইতালি, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স, স্পেন ও জার্মানিতে গিয়েছেন এমন বিদেশি ও ভারতীয়দের ক্ষেত্রে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাই বাধ্যতামুলক। ১৩ মার্চ মাঝরাত থেকে এই আদেশ কার্যকর হচ্ছে। 

বিমানবন্দুরগুলির পাশাপাশি স্থল সীমান্তগুলিতেও বিনা স্বাস্থ্য পরীক্ষায় কাউকেই ছাড়া হচ্ছে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নতুন নির্দেশিকায় সেই নিয়ম আরও কড়াকড়ি করার কথা বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফেও একই নির্দেশ পৌঁছেছে স্থল সীমান্তগুলিতে। অপ্রয়ােজনে বিদেশ ভ্রমণে না যাওয়ার জন্যও ভারতীয়দের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিদেশে থাকা ভারতীয়দের অপ্রয়ােজনে অন্য কোথাও যেতে বারণ করা হয়েছে। দেশে ফিরলে তাদের ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইন রাখা হতে পারে বলে জানানাে হয়েছে। 

তথ্য বলছে, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত এক কোটি ৩৭ লক্ষ ৩০ হাজার ২৮২ জন বিদেশি ভারত ভ্রমণ করেছে নানা সময়ে ও নানা কাজে চলতি আর্থিক বছরে সংখ্যা হয়তাে আরও বেশি। সারা বিশ্বে যেভাবে ১০০টি দেশে করােনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে তাতে অন্য দেশ থেকে আসা বিদেশিদের মাধ্যমে এই ভাইরাস পরিবাহিত হয়ে আসার ঝুঁকি খুবই বেশি। সেই সম্ভানা রােধ করতেই সরকার কড়াকড়ির পথ বেছে নিয়েছে। 

করােনাভাইরাসের প্রকোপ ও তার মােকাবিলায় সরকারি পদক্ষেপের কথা জানাতে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বৃহস্পতিবার লােকসভায় বলেন, করােনা আক্রান্ত দেশগুলিতে ভারতীয়রা যাতে সুস্থ থাকে তার জন্য সরকার সবরকম প্রয়াস নিয়েছে। সেসব দেশে ভারতীয়রা কেউ করােনায় আক্রান্ত হলে তাদের যাতে ঠিকমতাে চিকিৎসা হয় সে ব্যাপারেও আমরা সংশ্লিষ্ট সরকারগুলির সঙ্গে যােগাযােগ রাখছি। প্রতিদিন যেভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করে জয়শঙ্কর বলেন, পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। নজিরবিহীন পরিস্থিতিতে নজিরবিহীন ব্যবস্থাই নিতে হবে। দায়িত্বশীলতার সঙ্গে এই পরিস্থিতির মােকাবিলা করতে হবে।

করােনা আক্রান্ত ইরানে প্রায় ছয় হাজার ভারতীয় আটকে রয়েছে। এই প্রসঙ্গে জয়শঙ্কর বলেন, তাদের উদ্ধারের জন্য সবরকম চেষ্টা জারি রয়েছে। তারা ইরানের বিভিন্ন প্রদেশে ছড়িয়ে রয়েছে। এদের মধ্যে লাদাখ, জম্মু-কাশ্মীর ও মহারাষ্ট্রের ১১০০ পুণ্যার্থী রয়েছে। রয়েছে জম্মু কাশ্মীরের ৩০০ ছাত্র, তামিলনাড়, কেরল ও গুজরাতের ১০০০ ধীবর। এছাড়াও আরও অনেকে জীবিকার জন্য দীর্ঘমেয়াদি ভিসা নিয়ে সেখানে রয়েছে।

যাঁদের স্বাস্থ্যবিমা রয়েছে, তাদের মধ্যে কেউ এবার করােনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও চিকিৎসার খরচ পাবেন। ইনস্যুরেন্সে রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (আইআরডিএ) দেশের স্বাস্থ্য বিমা সংস্থাগুলিকে এই নির্দেশ দিয়েছে।