‘এক দেশ এক ভোট’ অসাংবিধানিক। এমনই বলেছেন দিল্লি হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি এবং কেন্দ্রের আইন কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান জেপি শাহ। এই বিলের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার সংসদীয় যৌথ কমিটির কাছে ১২ পাতার একটি নোট জমা দিয়েছেন তিনি। সেখানে তিনি প্রস্তাবিত ‘এক দেশ এক ভোট’ – কে অসাংবিধানিক বলে উল্লেখ করেছেন। এর পাশাপাশি এই নীতি গণতান্ত্রিক এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী বলেও উল্লেখ করেন। জেপি শাহ-র দাবি, ‘এক দেশ এক ভোট’ বিলে অনেক ভুলভ্রান্তিও রয়েছে।
বিরোধীদের আপত্তিকে অগ্রাহ্য করেই ১৭ ডিসেম্বর লোকসভায় এক দেশ এক ভোট বিল পেশ করে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুনরাম মেঘওয়াল বিল পেশ করতেই প্রবল আপত্তি জানায় বিরোধী দলগুলি। বিরোধী সাংসদদের দাবি ছিল, এই বিল সংবিধানের মূল কাঠামোতে আঘাত হানবে। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, ‘এক দেশ এক ভোট’ বিলের লক্ষ্য সাধারণ মানুষের নিয়মিত ভোটদানের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া। কিন্তু বিরোধী পক্ষের দাবি উড়িয়ে দেয় কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রক। তাদের দাবি, ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো।
জেপি শাহ তাঁর নোটে স্পষ্ট বলেছেন যে, ‘এক দেশ এক ভোট’ আইন অসাংবিধানিক, কারণ এটি ভারতের নির্বাচন ব্যবস্থাকে এককেন্দ্রীক এবং একদলীয় হতে বাধ্য করবে। তাঁর মতে, এটি ভারতের বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পক্ষে বিপজ্জনক হবে। কারণ রাজ্যগুলির নিজস্ব ক্ষমতা এবং নির্বাচন ব্যবস্থার উপর এর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
সূত্রের খবর, সংসদীয় কমিটির কাছে প্রবীণ আইনজীবী হরিশ সালভে যুক্তি দেন, প্রস্তাবিত আইনটি সাংবিধানিক প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে। যদিও জেপি শাহ দাবি করেছেন, ‘এক দেশ এক ভোট’ বিলে অসংখ্য ভুল রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনকে রাজ্যগুলির বিধানসভা নির্বাচন স্থগিত রাখার ক্ষমতা দেওয়া। অন্যদিকে সালভে বলেন, ‘এক দেশ এক ভোট’ অসংবিধানিক কিংবা তা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো বিরোধী এই ধারণা ভুল। ডিএমকে সাংসদ পি উইলসনের প্রশ্নের উত্তরে এই যুক্তি দেন হরিশ সালভে। জেপি শাহ এবং সালভে বিজেপি সাংসদ পিপি চৌধুরীর নেতৃত্বে সংসদীয় কমিটির সামনে ৫ ঘণ্টার বৈঠকে পক্ষে ও বিপক্ষে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন।
‘এক দেশ এক ভোট’ ব্যবস্থা চালু করার বিষয়ে বিজেপি অনেক দিন ধরেই আগ্রহী। লোকসভা ভোটের আগে বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহারেও এই বিষয়ে জোর দেওয়া হয়। এই বিল কার্যকর হলে সারা দেশে একসঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের আয়োজন করবে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। কেন্দ্রের যুক্তি, এতে ভোট প্রক্রিয়ার ব্যয় অনেক কমে যাবে। বারবার থমকে যাবে না উন্নয়নমূলক কাজ। সরকারি কর্মীদের উপরও ভোট সংক্রান্ত কাজের চাপ কমবে। সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর যুক্তি, এই নীতি গণতন্ত্রের কাঠামোকে শক্তিশালী করবে। তবে বিরোধীদের দাবি, এই নীতি গণতন্ত্রের মূল কাঠামোকে বিঘ্নিত করবে।
উল্লেখ্য, বিরোধীদের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও মোদি সরকার সংসদে ‘এক দেশ এক ভোট বিল’ পেশ করেছে। এই বিল পাঠানো হয়েছে সংসদের যৌথ কমিটিতে। বর্তমানে বিষয়টি রয়েছে সংসদীয় কমিটির হাতে। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হওয়ার পর বিলটি সংসদে পুনরায় আলোচনা এবং পাশ হতে পারে। তবে বিরোধী দলগুলি এই বিলের বিরোধীতা করবে এবং এর পুনর্বিবেচনার দাবি তুলবে। এই পরিস্থিতিতে এক দেশ এক ভোট বিষয়টি দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে তা আগামী দিনগুলিতে আরও ব্যাপকতর হতে পারে। জেপিসির বৈঠকেও উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।