বেঙ্গালুরু, ৩১ জুলাই: সঙ্গীদের সঙ্গে তীর্থে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছিলেন ‘মহারাজ’। সঙ্গীরা অনেক চেষ্টা করেও খুঁজে না পেয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। অবশেষে সেই ‘মহারাজ’ ২৫০ কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে ফিরে এলেন কর্ণাটকের সেই ছোট্ট গ্রামে। সবাই ভাবছেন তো, এই গণতান্ত্রিক যুগে ইনি আবার কোন ‘রাজা মহারাজা’! না, ইনি কোনও মানুষ নন। আসলে এটি একটি পোষ্য কুকুর। গ্রামের মানুষের সবার কাছে সে ‘মহারাজ’।
প্রসঙ্গত কুকুরের প্রভুভক্তির গল্প আমরা অনেক শুনেছি। সেসব যে নিছক গল্প নয়, তা বাস্তবেও আমরা মিলিয়ে দেখেছি আমাদের পোষা কুকুরের কার্যকলাপ থেকে। কুকুরের অসাধারণ প্রাকৃতিক অনুভূতি, ঘ্রাণশক্তি, বুদ্ধিমত্তা আমরা কাজে লাগিয়ে অপরাধমূলক তদন্তে অনেক বড় বড় সফলতা পেয়েছি। প্রভুভক্ত এই প্রাণীর অসাধারণ সনাক্তকরণ ক্ষমতা আমাদের মুগ্ধ করেছে। কিন্তু তাই বলে মালিকের কাছ থেকে হারিয়ে যাওয়ার পর ২৫০ কিলোমিটার সুদীর্ঘ পথ চিনে বাড়ি ফিরে আসা, এই ঘটনা সত্যিই দুর্লভ। সম্প্রতি এমনই একটি বিরল ঘটনার সাক্ষী থাকলেন কর্ণাটকের একটি প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দারা।
Advertisement
জানা গিয়েছে, প্রভুর সঙ্গে তীর্থে গিয়ে হারিয়ে যায় ওই পোষ্যটি। বেচারা মালিক অনেক খোঁজাখুঁজির পর হতাশ হয়ে বাড়ি আসেন। ফিরে পাওয়ার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন তিনি। অবশেষে সবাইকে চমকে দিয়ে একদিন বাড়ি ফিরে এলো ‘মহারাজ’। এই নামেই পরিচিত ওই পোষ্য কুকুর। ২৫০ কিলোমিটার পথ একা পাড়ি দিয়ে ফিরে আসায় মালিক সহ গ্রামবাসীরা যেমন আনন্দিত হয়েছিলেন, তেমনই হতবাকও হয়ে যান। ঘটনাটি ঘটেছে কর্ণাটকের বেলাগাভি জেলার নিপানি তালুকের ইয়ামাগর্নি গ্রামে।
Advertisement
উল্লেখ্য, পোষ্য কুকুর ‘মহারাজ’-এর মালিক কমলেশ কুম্ভ প্রতি বছর বন্ধুদের সঙ্গে আষাঢ় একাদশী এবং কার্তিকী একাদশী উপলক্ষে তীর্থ করতে ২৫০ কিলোমিটার হেঁটে মহারাষ্ট্রের পন্ধরপুরে যান। যথারীতি এবছরও গিয়েছিলেন। তবে এবার তাঁর বন্ধুদের পাশাপাশি সঙ্গে ছিলেন আরও এক নতুন সদস্য। কমলেশের পোষ্য কুকুর ‘মহারাজ’। কিন্তু বিঠোবা মন্দির দর্শনের পর থেকেই নিখোঁজ হয়ে যায় ‘মহারাজ’। অনেক খোঁজার পরে হতাশ হয়ে বাড়ি ফেরেন কমলেশ কুম্ভ। তাঁর কথায়, ‘‘আমি তাকে সর্বত্র খুঁজেছিলাম। কিন্তু পাইনি। আমি ভেবেছিলাম যে, ও হয়তো অন্য কারও সঙ্গে চলে গিয়েছে। এরপর ১৪ জুলাই আমি বাড়ি ফিরে আসি।’’ কিন্তু সকলকে চমকে দিয়ে পরের দিনেই বাড়ি ফেরে ইয়ামাগর্নি গ্রামের ‘মহারাজ’। ঘটনায় গ্রামবাসীরা প্রথমে অবাক হলেও তাকে ফিরে পাওয়ায় সবাই আনন্দে মেতে ওঠেন। তাকে সম্মান জানিয়ে ঢাক ঢোল বাজিয়ে মালা পরানো হয়। প্রিয় পোষ্য ফিরে আসার আনন্দে গ্রামে ভোজের আয়োজন করা হয়।
কমলেশের মতে, ‘‘ মহারাজ ভজন শুনতে পছন্দ করে। প্রায়ই আমার সঙ্গে ভজন শুনতে যেত ও। আমি আমার বন্ধুদের নিয়ে ভজন করতে করতে মহারাষ্ট্রের পন্ধরপুরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করি। মহারাজও আমাদের পিছু নেয়। কিন্তু হারিয়ে যাওয়ার পর তার ফিরে আসাটা অলৌকিক। কীভাবে কুকুর রাস্তা খুঁজে এতটা পথ পেরিয়ে বাড়ি ফিরল, তা ভেবে অবাক হচ্ছি। আমরা মনে করি, ভগবানই ওকে পথ দেখিয়েছিলেন।’’
Advertisement



