লোকসভায় কংগ্রেস দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী

লােকসভায় দলনেতা হিসাবে বহরমপুরের সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরীর নাম ঘােষণা করল কংগ্রেস।

Written by SNS New Delhi | June 19, 2019 10:52 am

অধীররঞ্জন চৌধুরী (Photo: IANS)

লােকসভায় দলনেতা হিসাবে বহরমপুরের সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরীর নাম ঘােষণা করল কংগ্রেস। কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে রাহুল গান্ধির ইস্তফা দিতে চাওয়ায় লােকসভায় দলনেতা হিসাবে রাহুল গান্ধির নাম উঠে আসে। কিন্তু রাহুল গান্ধি সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় পাঁচবারের সাংসদকেই সংসদের নিম্নকক্ষের প্রতিনিধি হিসাবে বেছে নিল দল।

লােকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা কে হবেন তা নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরেই আলােচনা চলছিল। রবিবার মােদির ডাকা সর্বদল বৈঠকে অধীরের উপস্থিতি সেই জল্পনার মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। মঙ্গলবার সকালে সংসদে দলের রণকৌশল সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলােচনা হওয়ার পর অধীরের নাম প্রস্তাব করা হয়। বৈঠকে হাজির ছিলেন রাহুল গান্ধি ও ইউপিএ চেয়ায়পার্সন সােনিয়া গান্ধি।

গােটা দেশে কংগ্রেসের ভরাডুবির পরও নিজের গড় ধরে রাখতে পেরেছিলেন অধীররঞ্জন চৌধুরী। বাংলায় মালদা দক্ষিণ ছাড়া বহরমপুর আসনটি রয়েছে কংগ্রেসের। দলীয় বৈঠকে রাহুল গান্ধি লােকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা হতে অস্বীকার করেন। বৈঠকের পর অধীরের নিয়ােগের কথা চিঠি দিয়ে লােকসভায় জানিয়ে দেয় কংগ্রেস। অধীর চৌধুরী সংসদে সব গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতেই থাকবেন বলে দলীয় সূত্রে খবর।

লােকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা হিসাবে দায়িত্ব পাওয়ার পর অধীর চৌধুরী জানান, ‘দলের সৈনিক তিনি। সৈনিকরা সবসময় সামনে থাকে। আমাকে একটা দায়িত্ব দিয়েছে দল। সামনে থাকতে বলা হয়েছে। আমি তাতে রাজি। আমি দলের একজন পদাতিক সৈনিক। সৈনিকরা আগেই থাকে। পদাতিক সৈনিক হিসাবে লড়াই করবাে’।

প্রথম মােদি সরকারে লােকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা ছিলেন মল্লিকার্জুন খাড়গে। তিনি এবার নির্বাচনে জিততে পারেননি। মঙ্গলবার সকালেই জানা যায় অধীর চৌধুরী দায়িত্ব পেতে চলেছেন।

কংগ্রেসে প্রণব মুখােপাধ্যায়ের পর দ্বিতীয় বাঙালি হিসাবে কংগ্রেসের দলনেতার দায়িত্ব পেলেন অধীর চৌধুরী। দীর্ঘদিন ধরে নিজের গড় ধরে রাখায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি অধীরের পিঠ চাপড়ে যােদ্ধা তকমা দিয়েছিলেন সর্বদল বৈঠকে।

আমাদের বহরমপুর সংবাদদাতা জানিয়েছেন, কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি রাহুল গান্ধি লােকসভার পরিষদীয় দলনেতার পদটি নিতে অস্বীকার করায়, এই পদে বসানাে হল মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরীকে। এই প্রথম কোনও বাঙালি এই পদে বসলেন। স্বভাবতই অধীর চৌধুরির মুকুটে আরেকটি নতুন পালক সংযােজিত হল বলেই মনে করছেন জেলার রাজনৈতিক মহল।

এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই আনন্দে মেতে ওঠেন কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা। অকাল হােলি শুরু হয় বহরমপুরে জেলা কংগ্রেস কার্যালয়ের সামনে। বাদ্যযন্ত্রের তালে অধীর চৌধুরির ছবি হাতে নাচতে দেখা যায় কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের। সেই সঙ্গে একনাগাড়ে ফাটানাে হয় চকলেট বােমা। জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক মহফুজ আলম ডালিম, মহম্মদ জহর, তুহিন দাস, হরমপুর শহর কংগ্রেস নেতা কার্তিকচন্দ্র সাহা, বহরমপুর পুরসভার প্রাক্তন দুই ভাইস চেয়ারম্যান মইনুদ্দিন চৌধুরি ওরফে বাবলা এবং সুশীল পাল, অতীন গুপ্ত প্রমুখ নেমে আসেন রাস্তায়। এর ওর মাথায়, কপালে, গালে সবুজ আবির মাখিয়ে দেয়। বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে কংগ্রেস কর্মীদের সঙ্গে নেতারাও নেচে ওঠেন। বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস তখন গােটা এলাকায়।

মহফুজ আলম ডালিম বলেন, ‘আজ শুধু মুর্শিদাবাদ বা বহরমপুরের কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা নন, সারা বাংলার গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ অত্যন্ত খুশি এবং আনন্দে আত্মহারা। এই প্রথম কোনও বাঙালি লােকসভার পরিষদীয় দলনেতা হলেন। ফলে বাঙালিদের উচ্ছাসটা আজ একটু বেশিই হবে। লােকসভায় সঠিক পরিষদীয় দলনেতা হিসাবে অধীর চৌধুরিকে বেছে নেওয়ার জন্য আমরা হাইকম্যান্ড সােনিয়া গান্ধি এবং দলের সর্বভারতীয় সভাপতি রাহুল গান্ধির প্রতি কৃতজ্ঞ। পাঁচবারের সাংসদ আমাদের দাদা অধীর চৌধুরি আগামীতে জাতীয় নেতা হিসাবে নিজেকে আরও প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন বলেই আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস’।

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে অধীর চৌধুরিকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রজেক্ট করেই কংগ্রেস এ রাজ্যে লড়াইতে নামবে বলে এদিন স্পষ্ট করেন অধীর ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা মহফুজ আলম ডালিম। তিনি বলেন, ‘অধীর চৌধুরিকে লােকসভার পরিষদীয় দলনেতা করার মধ্য দিয়ে জাতীয়তাবাদী সমস্ত দল এবং মানুষ একত্রিত হবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। কংগ্রেস আরও শক্তিশালী হবে রাজ্যে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরােধী মুখ হবেন অধীর চৌধুরি। তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে প্রজেক্ট করে বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ময়দানে নামবে এবং তিনিই হবেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী’।

বহরমপুর শহরের কংগ্রেস নেতা কার্তিকচন্দ্র সাহা আবার বলেন, ভারতবর্ষের রাজনীতিতে অধীর চৌধুরি হচ্ছেন বিরল ব্যক্তিত্ব। পাঁচবারের সাংসদ, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ইত্যাদি পালকগুলাে তাঁর মুকুটে তাে ছিলই। তাতে সংযােজিত হল লােকসভার পরিষদীয় দলনেতা। বাঙালি হিসেবে এই প্রথম কেউ এই পদে বসলেন। আমার মনে হয়, এই সম্মান এ রাজ্যের সমস্ত বাঙালির। অধীর চৌধুরিকে নিয়ে আজ তাই সবার গর্ব হওয়া উচিত’।

মহম্মদ জহর আবার বলেন, বিভিন্ন প্রতিকূলতা, বাধার মধ্যে দিয়ে এবারের লােকসভা নির্বাচনে লড়াই করতে হয়েছিল অধীর চৌধুরিকে। সেই লড়াইতে তিনি জয়ী হয়ে প্রমাণ করে দিয়েছেন, তিনি হলেন তিনিই। তাঁর বিকল্প কেউ আজ এই বাংলায় নেই। সর্বভারতীয় কংগ্রেসের বৈঠকে আজকে তাঁকে লােকসভার বিরােধী দলনেতা হিসাবে তুলে ধরা হয়। এটা শুধু কংগ্রেসের নয়, গােটা বাংলার গর্বের বিষয়।