• facebook
  • twitter
Wednesday, 26 March, 2025

২৭ বছর পর দিল্লির কুর্সিতে বিজেপি

এবার বাংলা দখলের ডাক দিল উজ্জীবিত পদ্মশিবির

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

বুধবার দিল্লির নির্বাচনের ভোট সমীক্ষায় ফলাফলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিলো, পালাবদল হচ্ছেই দিল্লিতে। ঝাড়ু সরিয়ে দিল্লিতে নিশান ওড়াবে গেরুয়া শিবির। শনিবার ভোটার ফল প্রকাশ হওয়ার পর দেখা গেলো, যমুনায় বিসর্জন হয়ে গিয়েছে আমি আদমি পার্টি। ধরাশায়ী হয়েছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল, মণীশ সিসোদিয়ার মতো হেভিওয়েট প্রার্থী। ৭০ টিও আসনের মধ্যে বিজেপির দখলে ৪৮টি আসন। আপ পেয়েছে ২২ আসন। খাতা খুলতে পারেনি কংগ্রেস। এই নিয়ে তৃতীয়বার শূন্য পেলো শতাব্দী প্রাচীন দলটি।

শনিবার সকালে প্রথম ২ ঘন্টাতেই পরিষ্কার হয়ে যায় আমি আদমির বিদায় নিশ্চিত। সকাল ৮টা শুরু হয় ভোট গণনা শুরু হতেই ধাক্কা খায় আপ। সেই সময় প্রায় ৪০ টি আসনে এগিয়ে ছিলো বিজেপি। বেলা যত বাড়তে থাকে দিল্লির বিজেপি দপ্তরের সামনে উৎসব শুরু হয়ে যায়। ভোট গণনা জোট এগোতে থাকে পিছিয়ে পড়তে থাকেন আপ সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়াল, প্রাক্তন উপ মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া। দিনের শেষে পরাজয় সঙ্গী হয় তাঁদের। অন্যদিকে কালকাজি কেন্দ্রের আপ প্রার্থী আতিশী মার্লেনা প্রথমদিকে পিছিয়ে পড়লেও শেষে জয়লাভ করে দলের মুখ রক্ষা করেন। তিনি হারিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী রমেশ বিধুড়ীকে। যিনি নির্বাচনী প্রচারে দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করে বলেছিলেন, ‘বাবা বদলে ফেলেছেন আতিশী।’

২০২০ সালের দিল্লি দাঙ্গায় লাগাতার ঘৃণাভাষণের অভিযোগ ছিলো বিজেপির আর এক বিতর্কিত প্রার্থী প্রবেশ বার্মার। তিনি অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে ৪,০৪৯ ভোটে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন। ঝাড়খণ্ডে জেলে যাওয়াই শাপে বর হয়েছিল হেমন্ত সোরেনের। আবগারি মামলায় জেলে যাওয়া কেজরিও মনে করেছিলেন জয় তাঁর হাতের মুঠোয়। কিন্তু এই জেলে যাওয়াই কাল হলো দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বলে করছেন অনেকেই। অন্যদিকে দিল্লির কারাওয়াল নগর কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী ছিলেন ২০২০ সালের দিল্লি দাঙ্গায় অন্যতম অভিযুক্ত কপিল মিশ্র। তিনি হারিয়েছেন আপ প্রার্থী মনোজ কুমার ত্যাগীকে।

জয় স্পষ্ট হতেই দিল্লিবাসীর উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই জয়কে তিনি ‘উন্নয়ন এবং সুশাসনের জয়’ বলে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘দিল্লির উন্নয়নে আমরা কোনও রকম ফাঁক রাখব না। দিল্লিবাসীর জীবনযাত্রাকে আরও উন্নত করে তুলতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ ‘বিকশিত ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হবে দিল্লি বলেও জানিয়েছেন মোদী। একই সঙ্গে দিল্লিতে জয়ের জন্য বিজেপি কর্মীদেরও ধন্যবাদ জানাতেও ভোলেননি তিনি। এই সাফল্যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও। ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই জয় উন্নয়ন ও বিশ্বাসের। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে দেশের অগ্রগতিতে জনগণের আস্থা তৈরি হয়েছে এবং তারই প্রতিফলন দেখা গিয়েছে দিল্লির ভোটে।’

অন্যদিকে ক্ষমতা হারিয়ে এক ভিডিও বার্তায় আপ সুপ্রিমো জানিয়েছেন, মানুষের রায় তিনি মাথা পেতে নিয়েছেন, আগামী দিনে আপ কেবল গঠনমূলক বিরোধী দল হিসেবেই নয়, জনগনের পাশে থাকবে বলেও বার্তা দিয়েছেন দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। এই নিয়ে তিনবার দিল্লির নির্বাচনে খাতা খুলতে পারলো না কংগ্রেস। অর্ধেকের বেশি প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তবে ভোটের ফল প্রকাশের পর নিজের দলের কথা না বলে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী নিশানা করলেন আপকেই। কংগ্রেস সাংসদের কথায়, ‘দিল্লির মানুষ পরিবর্তনের জন্য ভোট দিয়েছে। যে সরকার চলছিল তাঁদের কাজে তাঁরা বিরক্ত।’

আড়াই দশক পর বিজেপির দিল্লি দখল। এবার বাংলা দখলের ডাক দিল উজ্জীবিত পদ্মশিবির। দিল্লির ভোট প্রচারে আপ-কে ‘আপদ’ বলে কটাক্ষ করেছেন নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ। সেই প্রসঙ্গ টেনেই বাংলার আওয়াজ তুললো পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি। তারা এক্স হ্যান্ডলে লিখল,’দিল্লিতে বিদায় হল আপ, এবার যাবে পশ্চিমবঙ্গের পাপ’। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সমাজমাধমে লিখেছেন, ‘দিল্লি কা জিত হামারি হ্যায়, ২৬ মে বঙ্গাল কি বারি হ্যায়’। এরই পাল্টা জবাব দিয়েছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। সমাজমাধ্যমে তিনি লিখেছেন ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ২৫০টির বেশি আসন পাবে তৃণমূল। চতুর্থবার মুখ্যমন্ত্রী হবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাকি কোথায় কী হল, আমাদের বিষয় নয়। দিল্লির বিষয় দিল্লিতে। এখানে কোনও মন্তব্য নেই। বাংলায় ওসবের প্রভাবও নেই।’

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন আসলে বিজেপির এই জয়ের কান্ডারি সঙ্ঘ। তাঁদের লাগাতার ছোট ছোট মিটিং, আলোচনাসভা ও ঘরে ঘরে প্রচার নীতিতেই কুপোকাত হয়েছে আপ। সঙ্ঘেরই নির্দেশে বিজেপি নেতৃত্ব দলের রাজ্য সভাপতি থেকে অন্যান্য জাঁদরেল নেতাকে টিকিট দেয়নি, যাতে তাঁরা নির্বাচনী প্রচার ও ভোট করানোর কাজে বেশি মন দিতে পারেন। তার থেকেও বড় কথা হল, সঙ্ঘ পরিবারের তলায় তলায় ভোটারদের মনোভাবে বদল আনার অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। আরএসএসের কর্মীরা একেবারে তলা থেকে মানুষকে বোঝাতে সমর্থ হয়েছেন যে, ভোট দিন এবং সেরা দলের সেরা প্রার্থীকে প্রতিনিধি নির্বাচন করুন।

১৯৯৮ সালে শেষবার দিল্লির মসনদে ছিল বিজেপি। শেষ মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সুষমা স্বরাজ। তারপর কংগ্রেস দিল্লির ক্ষমতা দখল করে। ২০১৩ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসে আম আদমি পার্টি । ১২ বছরেই মোহভঙ্গ দিল্লিবাসীর। রাজধানীতে হারলো আম আদমি পার্টি। তিন দশকের খরা কাটিয়ে মোদির ম্যাজিকে দিল্লিতে গেরুয়া ঝড়ের দাপট। ২৭ বছর পর ২০২৫ সালে আবার ফিরতে চলেছে বিজেপি।