তথ্য কমিশনে নিয়ােগে পক্ষপাতিত্বের অভিযােগ মােদি সরকারের বিরুদ্ধে সরব অধীর

তথ্য কমিশনার হিসেবে দুটি নাম আসে,অবসরপ্রাপ্ত ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিস(আইএফএস) অফিসার তথা বর্তমানে তথ্য কমিশনার হিসেবে কর্মরত যশবর্ধনকুমার সিনহা ও নীরজকুমার।

Written by SNS Delhi | October 31, 2020 2:15 pm

অধীররঞ্জন চৌধুরী (Photo: IANS)

চাকরির জন্য আবেদনও করতে হচ্ছে না। সরকারের বদান্যতায় আপনি আপনিই তা জুটে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশাবলীরও ধার ধারছে না মােদি সরকার।

নিজেদের পছন্দ মতাে প্রার্থীকে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে বসিয়ে দিচ্ছে তারা। কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনে নিয়ােগ প্রক্রিয়া নিয়ে এবার এমনই অভিযােগ তুললেন লােকসভায়। কংগ্রেসের দলনেতা তথা সিআইসি র নিয়ােগ কমিটির সদস্য অধীররঞ্জন চৌধুরী। কেন্দ্রের বাছাই করা কিছু প্রার্থীর নিয়ােগে আপত্তি জানিয়েছেন তিনি।

তথ্য জানার অধিকার আইনে ২০০৫ সালে সিআইসি গঠিত হয়। আরটিআই – এর মাধ্যমে নাগরিক সঠিক তথ্য পাচ্ছেন কিনা, তাদের কী অভাব অভিযােগ রয়েছে, তা দেখাই সিআইসি- র দায়িত্ব। কোনও রকম গাফিলতি চোখে পড়লে তা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে নােটিশ ধরাতেও পারে তারা।

আরােগ্য সেতু অ্যাপ কারা বানিয়েছে, তার সদুত্তর দিতে না পারায় সম্প্রতি মােদি সরকারকে নােটিশ ধরিয়েছে সিআইসি। গত দু’মাস ধরে সিআইসি- র মুখ্য তথ্য কমিশনারের পদটি ফাকা ছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদির নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং লােকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীকে নিয়ে গঠিত তিন সদস্যের নিয়ােগ কমিটি এতদিনে সেই শূন্যস্থান পূরণ নিয়ে দফায় দফায় আলােচনা চালায়।

গত ২৪ অক্টোবর তাদের বৈঠকে মুখ্য তথ্য কমিশনার হিসেবে দুটি নাম উঠে আসে, অবসরপ্রাপ্ত ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিস ( আইএফএস ) অফিসার তথা বর্তমানে তথ্য কমিশনার হিসেবে কর্মরত যশবর্ধনকুমার সিনহা এবং নীরজকুমার গুপ্তর। মুখ্য তথ্য কমিশনার ছাড়াও সর্বাধিক ১০ জন তথ্য কমিশনার নিয়ােগ করা যায়। সেই পদে নাম উঠে আসে সাংবাদিক উদয় মাহুরকর, ডেপুটি কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল সরােজ পুনহানি, প্রাক্তন প্রতিরক্ষা উৎপাদন সচিব সুভাষচন্দ্র, ডেপুটি সিএজি মীনাক্ষী গুপ্ত, অল ইন্ডিয়া রেডিয়াের প্রাক্তন প্রিন্সিপাল ডিরেক্টর জেনারেল ( নিউজ ) ইরা যােশী, ক্ষুদ্র , ছােট ও মাঝারি শিল্প মন্ত্রকের প্রাক্তন সচিব অরুণকুমার পাণ্ডা এবং প্রাক্তন শ্রম সচিব হীরালাল সামারিয়ার।

এ নিয়ে যশবর্ধন এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য না করলেও, তিনি নিয়ােগপত্র পেয়ে গিয়েছেন বলে সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন মাহুরকর। এই দু’জনের নিয়ােগ নিয়েই আপত্তি তুলেছেন অধীর। তার যুক্তি, এর আগে ব্রিটেন এবং শ্রীলঙ্কায় ভারতীয় হাই কমিশনের দায়িত্ব সামলেছেন যশবর্ধন।

এই মুহূর্তে তথ্য কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত তিনি। কিন্তু সিআইসি- র মুখ্য কমিশনার হওয়ার জন্য অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে যে অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়ােজন, সেই অভিজ্ঞতা তার নেই। এক্ষেত্রে তার চেয়ে ঢের বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে সিনিয়র তথ্য কমিশনার ভঞ্জনা সারনার। তাকে বাদ দিয়ে যশবর্ধনকে কেন মুখ্য তথ্য কমিশনারের পদে তুলে আনা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অধীর। একই সঙ্গে তথ্য কমিশনারের পদের জন্য ৩৫৫ টি আবেদন জমা পড়েছিল। তার মধ্যে থেকে ১৩৯ জন আবেদনকারীকে শর্টলিস্ট করা হয়েছিল। অথচ আবেদন না জানানাে সত্ত্বেও সাংবাদিক মাহুরকরের নাম কীভাবে সুপারিশ করা হল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অধীর।

২০১৭ সালে মােদি সরকারের শাসনকালের ভূয়সী প্রশংসা করে একটি বই লিখেছিলেন মাহুরকর। একাধিক বার প্রকাশ্যে বিজেপি’কে সমর্থনও করতে দেখা গিয়েছে তাকে। তাই অধীরের বক্তব্য, ‘ মান্থরকরের নাম বােধহয় আকাশ থেকে এসে পড়েছে। ঘােষিতভাবেই শাসকদল এবং তাদের আদর্শের সমর্থক উনি।’

তথ্য কমিশনে নিয়ােগের ক্ষেত্রে কাউকে সুপারিশ করতে গেলে, তার যােগ্যতা সম্পর্কে সবিস্তার তথ্য তুলে ধরতে হয়। সুপ্রিম কোর্টের তরফে অন্তত তেমনই নির্দেশ রয়েছে। এক্ষেত্রে মােদি সরকার সেই নির্দেশালীর তােয়াক্কা করেনি। বলেও অভিযােগ করেছেন অধীর। তবে, কেন্দ্রের তরফে এখনও পর্যন্ত এনিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।