• facebook
  • twitter
Wednesday, 26 March, 2025

তেজস প্রস্তুতকারী সংস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভ বায়ুসেনা প্রধানের

২০২৩ সলের অক্টোবরে তেজসের মার্ক-১ ফাইটার জেটের দু’আসন বিশিষ্ট নয়া প্রশিক্ষণ সংস্করণটি আনুষ্ঠানিকভাবে বায়ুসেনার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল।

ফাইল চিত্র

দেশের বায়ুসেনা প্রধানের সঙ্গে লেগে গেল ভারতের বিমান প্রস্তুতকারী সংস্থা হিন্দুস্থান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড বা হ্যালের। দীর্ঘদিন ধরেই সময়মতো তেজস যুদ্ধবিমান সরবরাহ করতে না পারা নিয়ে বিরক্ত ভারতীয় বায়ুসেনার প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল অমরপ্রীত সিংহ। মঙ্গলবার ক্ষোভ উগরে দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘হ্যালের উপর আর তাঁদের আস্থা নেই।’ এর পরেই ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে পড়েছে হ্যাল। বুধবার এক বিবৃতি দিয়ে এই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা জানিয়েছে, ঢিলেমির জন্য নয়, প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণেই সময়মতো তেজস যুদ্ধবিমান সরবরাহ করতে পারেনি তারা। তবে সমস্যার সমাধান ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি তারা ভারতীয় বিমান বাহিনীকে তেজস সরবরাহ করবে।

২০২৩ সলের অক্টোবরে তেজসের মার্ক-১ ফাইটার জেটের দু’আসন বিশিষ্ট নয়া প্রশিক্ষণ সংস্করণটি আনুষ্ঠানিকভাবে বায়ুসেনার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। বেঙ্গালুরুর সংস্থা হ্যালকে ৪০টি যুদ্ধবিমানের বরাত দেওয়া হয়েছিলো। পরে সেই সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৩। কিন্তু প্রথম বরাতের যুদ্ধবিমানের সব ক’টি এখনও পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার বেঙ্গালুরুতে ইয়ালেহাঙ্কা বায়ুসেনা ঘাঁটিতে ‘অ্যারো ইন্ডিয়া ২০২৫’-এ যোগ দিয়েছিলেন বায়ুসেনার প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল এপি সিং। সেখানেই বিমান প্রস্তুতকারী ভারতীয় সংস্থা হ্যালের বিরুদ্ধে রীতিমত উষ্মা প্রকাশ করেন। এয়ার চিফ মার্শালের বক্তব্য, ‘এই মুহূর্তে হ্যালের উপর আমাদের বিন্দুমাত্র ভরসা নেই। বিষয়টা অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও এটাই সত্য। আমাদের প্রয়োজন মেটানো ও নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা ফেরানোর দায় ওই সংস্থার নিজের। আমাদের যাতে বিশ্বাস ফেরে সেই উদ্যোগ নেওয়া উচিত সংস্থার।’ এপি সিংয়ের এই বন্তব্যে রীতিমত হইচই পড়ে হয়।

বায়ুসেনার এই মন্তব্য সামনে আসার পরই নড়েচড়ে বসে হ্যাল। সংস্থার চেয়ারম্যান বিবৃতি দিয়ে দেরি হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে জানিয়েছেন, ‘বায়ুসেনার প্রধানের উদ্বেগের কারণ যথেষ্ট সঙ্গত। তবে আমি বলতে চাই, তেজস সরবরাহের বিলম্বের কারণ ঢিলেমি নয়। আমাদের প্রযুক্তিগত কিছু সমস্যা ছিল। যা এখন সমাধান করা সম্ভব হয়েছে।’ চলতি বছরের শেষে ৩টি তেজস যুদ্ধবিমান সেনাবাহিনী দেওয়া হবে। আগামী ৩ বছরের মধ্যে বরাত অনুযায়ী বাকি যুদ্ধবিমান সরবরাহ করে দেওয়া হবে বলেও জানান হ্যালের চেয়ারম্যান।

হ্যালের বিরুদ্ধে অভিযোগ কিন্তু নতুন নয়, বরাত পাওয়ার পর দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী সেই বিমান সরবরাহ হয়নি। গত মাসেও ভারতীয় বায়ুসেনার এক আলোচনাসভায় এই ইস্যুতে মুখ খুলেছিলেন এয়ার চিফ মার্শাল। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, অনেক আগে বরাত দেওয়া হলেও হ্যাল এখনও তেজস মার্ক-টু যুদ্ধবিমান দেয়নি বায়ুসেনাকে। আসলে ‘উড়ন্ত কফিন’ নামে পরিচিত মিগ বিমানের পরিবর্ত হিসেবে বায়ুসেনায় ব্যাপকভাবে তেজসের অন্তরভুক্তি চাইছে বায়ুসেনা। তবে হ্যালের বিলম্বের কারণে প্রতি মুহূর্তে সমস্যা বাড়ছে।

ভারতীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হালকা ওজনের, ‘মাল্টি রোল সুপারসনিক’ যুদ্ধবিমান তেজস নানা ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে সক্ষম। এর ৬৫ শতাংশেরও বেশি যন্ত্রাংশ ও সরঞ্জাম ভারতীয় সংস্থাগুলি তৈরি। চিনের জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমানের তুলনায় তেজসের নয়া সংস্করণ প্রযুক্তিগত উৎকর্ষে এগিয়ে বলে একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা বিষয়ক রিপোর্টে জানানো হয়েছে। ফলে ভারতীয় সেনাবাহিনী তেজস যুদ্ধবিমান দ্রুত যাতে পেতে পারে, তেজস প্রস্তুতকারী সংস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন বায়ুসেনা প্রধান।