সংক্রমণ রোধে দেশের প্রথম ‘ক্লাস্টার মডেল’ আগ্রায়, করোনা লড়াইয়ে সাফল্যের নজির গড়ছে ঐতিহাসিক শহর

মারণ ভাইরাসকে রুখতে শক্তপোক্ত বর্ম বানিয়ে ফেলেছে রাজস্থানের ভিলওয়াড়া জেলা। সংক্রমণ ঠেকাতে তাদের ভিলওয়াড়া মডেল এখন গোটা দেশের কাছেই উদাহরণ স্বরূপ।

Written by SNS Agra | April 13, 2020 6:28 pm

র‍্যান্ডম টেস্টিং করছে এক স্বাস্থ্যকর্মী। (File Photo: AFP)

মারণ ভাইরাসকে রুখতে শক্তপোক্ত বর্ম বানিয়ে ফেলেছে রাজস্থানের ভিলওয়াড়া জেলা। সংক্রমণ ঠেকাতে তাদের ভিলওয়াড়া মডেল এখন গোটা দেশের কাছেই উদাহরণ স্বরূপ। সেই পথেই নজির গড়ল ঐতিহাসিক শহর আগ্রা। ভাইরাস সংক্রামিত এলাকাগুলি চিহ্নিত করে আগ্রাই দেশের প্রথম ক্লাস্টার ম্যানেজমেন্টে পথ দেখিয়েছে।

যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শহরে তৈরি হয়েছে কন্ট্রোল রুম। একদিকে আক্রান্তদের শনাক্ত করে সেইসব এলাকা সিল করে চলছে স্ক্রিনিং এবং র‍্যাপিড টেস্টিং, অন্যদিকে বাসিন্দাদের দৈনন্দিন সুবিধার কথা মাথায় রেখে তৈরি হয়েছে স্পেশাল ম্যানেজমেন্ট টিম।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের যুগ্ম সচিব লব আগরওয়াল বলেছেন, কেন্দ্রের নির্দেশিকা মেনে ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে সঠিক কন্টেনমেন্ট প্ল্যান তৈরি করেছে আগ্রা প্রশাসন। লকডাউনের বিধি কঠোরভাবে মেনে একদিকে যেমন স্থানীয়রা সংক্রমণ ঠেকানোর চেষ্টা করছেন, অন্যদিকে শহরের সংক্রামিত এলাকা বা এপিসেন্টারগুলিকে ভাইরাসমুক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন স্বাস্থ্য আধিকারিক ও প্রশাসনিক কর্তারা।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের রিপোর্ট বলছে, শনিবার অবধি আগ্রাতে করোনা আক্রান্তের মোট সংখ্যা ৯২। নতুন সংক্রামিত তিনজন। আইসোলেশনে রয়েছেন ৮১ জন। জেলাশাসক প্রভু এন সিং বলেছে, ১৯১৩ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। আর একজনও যাতে আক্রান্ত না হতে পারেন তার জন্যই জরুরি ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে আগ্রা মডেল অব কন্টেনমেন্ট।

কী এই ক্লাস্টার কন্টেনমেন্ট প্ল্যান?
কোনও এলাকাকে ক্লাস্টার জোন হিসেবে চিহ্নিত করার অর্থ কেন্দ্রীয় সরকারের করোনা সংক্রমণ রোধ পরিকল্পনা বা কন্টেনমেন্ট প্ল্যান-এ নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে। ক্লাস্টার বলতে বোঝায় কোনও একটা নির্দিষ্ট এলাকায় বা গণ্ডিতে যখন সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।

হয় বিদেশ ফেরত কোনও আক্রান্ত রোগীর থেকে তার পরিবার বা আশপাশে সংক্রমণ ছড়ায় অথবা এমন রোগীর খোঁজ মেলে যার বিদেশ ভ্রমণ বা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসার কোনও রেকর্ড নেই। এমন রোগীর থেকে আর কতজনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছে তারও কোনও স্পষ্ট হিসেব নেই। তখন দ্রুত সেই নির্দিষ্ট এলাকাকে চিহ্নিত করে সেখানে স্ক্রিনিং ও টেস্টিং শুরু করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে গাইডলাইনে।

অর্থাৎ ক্লাস্টার জোন বা ওই নির্দিষ্ট এলাকা যেখানে করোনা রোগীদের থেকে সংক্রমণ ছড়াবার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তাকে আগেই আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলা। শুরু থেকেই এমন অ্যাকশন প্ল্যান নেওয়া যাতে রোগীদের থেকে সংক্রমণ আর একজনের মধ্যেও না ছড়াতে পারে। গোষ্ঠী সংক্রমণ পুরোপুরি রুখে দেওয়া যায়।

কোভিড ওয়ার রুম
প্রথমেই তৈরি হয়েছে ইনটিগ্রেটেড কন্ট্রোল অ্যান্ড কম্যান্ড সেন্টারকে বদলে দেওয়া হয়েছে কোভিড ওয়ার রুমে। কেন্দ্রের নির্দেশিকা মেনেই সেখানে তৈরি হয়েছে সংক্রমণ রোধের নির্দিষ্ট গাইডলাইন। আগ্রার ৩৮’টি আক্রান্ত এলাকাকে এপিসেন্টার চিহ্নিত করে শুরু হয়েছে স্ক্রিনিং। তার মধ্যে ১০’টি এলাকা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ১২৪৮ জনের টিম তৈরি করে অন্তত ৯ লাখ মানুষের স্ক্রিনিং ও টেস্টিং-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

দেড় লাখের বেশি বাড়ি ঘুরে সার্ভে করা হচ্ছে। ক্লাস্টার জোন ও শহরের বাকি এলাকায় লকডাউন ঠিকভাবে মেনে চলা হচ্ছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখতে এসএসপি ও ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের তরফে তৈরি হয়েছে বিশেষ টিম।

আইসোলেশন, র‍্যাপিড টেস্টিং, স্বাস্থ্য পরিষেবা
যোগী প্রশাসনের তৎপরতায় শহরে জরুরি ভিত্তিতে ৪০৫৪’টি কোয়ারেন্টাইন সেন্টার তৈরি হয়েছে। তার মধ্যে ৩০৬০’টি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে বিনামূল্যে রোগীর টেস্টিং হবে। সরকারি উদ্যোগে আরও ৪২৮’টি কোয়ারেন্টাইন সেন্টার তৈরি হয়েছে।

সংক্রামিত এলাকাগুলিকে চিহ্নিত করার জন্য তৈরি হয়েছে মাইক্রোপ্ল্যান। ক্লাস্টার এলাকাগুলোর তিন কিলোমিটার পর্যন্ত সংক্রামিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এপিসেন্টার থেকে পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত চিহ্নিত করা হয়েছে বাফার জোন। সেইসব এলাকায় স্ক্রিনিং, টেস্টিং করার জন্য তৈরি হয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশেষ টিম।

খাবার, ওষুধ পৌঁছে দেওয়া
সরকারি আধিকারিকদের সহযোগিতায় তৈরি হয়েছে ফুড ডিস্ট্রিবিউশন টিম। প্রত্যেক বাড়ি ঘুরে মানুষজনের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের তালিকা তৈরি হয়েছে। খাবার, ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস বাড়ির দরজায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। অভাবী, দুঃস্থ মানুষজনের জন্য প্রতিদিন খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।