মহাকুম্ভে মহাবিপর্যয়। মৌনী অমাবস্যার অমৃতস্নান উপলক্ষে হাজার হাজার মানুষের হুড়োহুড়িতে মঙ্গলবার রাতে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৩০ জন তীর্থযাত্রীর। আহত হয়েছেন ৬০ জন। প্রয়াগরাজের ডিআইজি বৈভব কৃষ্ণ বুধবার সন্ধ্যায় সরকারিভাবে হতাহতের সংখ্যা জানিয়েছেন। মৃত ৩০ জনের মধ্যে ২৫ জনকে চিহ্নিত করা গিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার রাত ১.৩০ নাগাদ। ৪৪ বছর পর বিরল ত্রিবেণী যোগ দেখা দিয়েছে মহাকুম্ভে। এদিন রাতে মৌনী অমাবস্যা উপলক্ষে ছিলো দ্বিতীয় পুণ্যস্নান। সঙ্গমের কাছে একসঙ্গে স্নান করার জন্য ১০ হাজার মানুষ ভিড় করেছিলেন। তখনই ভিড়ের চাপে ১১ থেকে ১৭ নম্বর খুঁটির মধ্যের ব্যারিকেড ভেঙে যায়। আচমকা ধাক্কাধাক্কি শুরু হওয়ায় ভিড়ের মধ্যে আটকে পড়েছিলেন অনেকে, যার জেরেই ঘটে এই দুর্ঘটনা। ঘটনার খবর পেয়েই দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে উদ্ধারকাজ। ৭০টিরও বেশি অ্যাম্বুলেন্স নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে আহতদের উদ্ধার করেছে। উদ্ধারের পর তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো হাসপাতালে। প্রিয়জনদের খুঁজতে হাসপাতালে চলে আসেন অনেকেই। ভিড় বাড়তে থাকে। অনেকেই হাসপাতালের মর্গের সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। পদপিষ্ট হয়ে মৃত ৩০ জনকে ময়নাতদন্তের জন্য স্বরূপ রানী নেহরু মেডিকেল কলেজে আনা হয়েছিলো। আহত ৬০ জনেরও মধ্যে বেশিরভাগ মহিলা। তাঁদের অনেকেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গিয়েছে। এই মর্মান্তিক দৃশ্যের বর্ণনা দিয়ে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, ভিড়ের মধ্যে এমনভাবে আটকে পড়েছিলাম যে, নড়াচড়া করতে পারছিলাম না। পরে ভিড়ের ধাক্কায় ছিটকে যাই। বেঁচে যাওয়ার জন্য নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন ওই পুণ্যার্থী।
ঘটনার পরই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে ফোন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পরিস্থিতি জানতে চেয়ে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। পরে তিনি সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘প্রয়াগরাজ মহাকুম্ভে যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। দুর্ঘটনার মৃতদের পরিবারের প্রতি আমি সমবেদনা জানাচ্ছি। পাশাপাশি যারা আহত হয়েছেন তাঁদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। স্থানীয় প্রশাসন সকল পুণ্যার্থীদের উদ্দেশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আমি নিজে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। প্রতিটি মুহূর্তের বিস্তারিত খোঁজখবর নিচ্ছি।’ মোদীর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও যোগীকে ফোন করে পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন বলে খবর। আহতদের দ্রুত সুস্থ কামনা করে প্রার্থনা করেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও।
দুর্ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ পুণ্যার্থীদের কাছে আর্জি জানিয়েছেন, কোনও গুজবে তাঁরা যেন কান না দেন। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকের পরই ত্রিবেণী সঙ্গম থেকে পুণ্যার্থীদের ভিড় সরানোর কাজ শুরু করেছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। সঙ্গমের ঘাটের দিকে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। পুণ্যার্থীদের ভিড় সরাতে ঘোড়সওয়ার পুলিশকে কাজে লাগানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল বৈভব কৃষ্ণ। মেলা প্রাঙ্গণে মোতায়েন করা হয়েছে এনএসজি, আধাসেনাও। আকাশে ঘুরছে হেলিকপ্টার। সেখান থেকেই মেলাপ্রাঙ্গণ এবং ঘাটগুলির উপর নজরদারি চালানো হচ্ছে। কুম্ভমেলার জন্য পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় জংশন থেকে প্রয়াগরাজগামী বিশেষ ট্রেনগুলির পরিষেবা সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছিলো। যদিও বুধবার সকালে রেল মন্ত্রকের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, কোনও বিশেষ ট্রেনই বাতিল করা হয়নি। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত প্রয়াগরাজগামী বহু ট্রেনের অভিমুখ বদল করা হয়েছে।
এরপর পাঁচের পৃষ্ঠায়