মোদী সরকার জানিয়ে, দেশের একেক রাজ্যে একেক রকম শ্রম আইন। নানা রাজ্যে শ্রমিকদের নানা রকম বেতন। শ্রমিকদের নিরাপত্তার আলাদা বিধি। এসব জটিলতা কাটিয়ে শ্রমিকদের উপযুক্ত ও সম্মানের জীবন দিতেই নতুন শ্রম আইন চালু করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন রাজ্যের ৪৪টি আলাদা আলাদা শ্রম আইনকে সংগঠিত করে চারটি শ্রম বিধি চালুর প্রস্তাব দেওয়া হয় নতুন শ্রম আইনে। সেই শ্রম আইন এবার কার্যকর হয়ে গেল।
Advertisement
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে সংসদে পাশ হয় ‘কোড অন ওয়েজেস’। পরের বছর তিনটি কোড– ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশন্স কোড, কোড অন সোশ্যাল সিকিউরিটি ও অকুপেশনাল সেফটি, হেলথ অ্যান্ড ওয়ার্কিং কন্ডিশনস কোড আইনসভার অনুমোদন পায়।
নয়া এই শ্রম আইন অনুযায়ী, এবার আর পাঁচ বছর নয়, বরং এক বছর চাকরি করলেই মিলবে গ্র্যাচুইটি। অন্যদিকে, ৪০ কোটি কর্মীর সামাজিক সুরক্ষাও নিশ্চিত করা হয়েছে এই শ্রমবিধিতে। সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়তে চলেছে দেশের আইটি ও আইটিইএস শিল্পে। নতুন শ্রম কোডে চুক্তিভিত্তিক কর্মীদেরও এখন থেকে স্থায়ী কর্মীদের মতো সুবিধা দিতে বাধ্য থাকবে সংস্থাগুলি। এর মধ্যে থাকবে পিএফ, ইএসআইসি, বিমা, গ্র্যাচুইটি সহ সব ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা। এই আইনের ফলে এবার থেকে মান্যতা পেল গিগ ও প্ল্যাটফর্ম কর্মী, অ্যাপ-ভিত্তিক ডেলিভারি, স্থানান্তরিত শ্রমিকরা। নতুন শ্রম কোডে প্রথমবার এদের আইনি স্বীকৃতি এবং সুরক্ষা দেওয়া হল।
নতুন আইন অনুসারে— এখন থেকে প্রতিটি কর্মীকে আনুষ্ঠানিক নিয়োগপত্র দিতে হবে। সারা দেশে একই ন্যূনতম মজুরি, পাশাপাশি সময়মতো বেতন দেওয়া প্রতিষ্ঠানের জন্য আইনি বাধ্যবাধকতা। এতে কর্মসংস্থানে স্বচ্ছতা বাড়বে।- বছরে এক বার বিনামূল্যে হেলথ চেকআপ পাবেন ৪০ বছরের বেশি বয়সি কর্মীরা। খনন, কেমিক্যাল, নির্মাণ-সহ বিপজ্জনক শিল্পে কর্মরতদের জন্য বাড়তি স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থাও রয়েছে।- আগে ৫ বছর চাকরি না হলে গ্র্যাচুইটির অধিকার থাকত না।
নতুন নিয়মে এক বছরের স্থায়ী চাকরির পরই গ্র্যাচুইটি পাওয়া যাবে— যা বেসরকারি কর্মীদের জন্য বিশেষ সুবিধা।- নারীরা এখন নিজেদের সম্মতি ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সুরক্ষার ভিত্তিতে রাতের শিফটেও কাজ করতে পারবেন। সমান মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ— এসবও আইনে স্পষ্ট করা হয়েছে। পাশাপাশি ট্রান্সজেন্ডার কর্মীরাও সমান অধিকার পাবেন।- ওলা–উবার চালক, জোম্যাটো– সুইগি ডেলিভারি পার্টনার বা অ্যাপ-ভিত্তিক কর্মীদের সামাজিক নিরাপত্তা দেবে সরকার। অ্যাগ্রিগেটর সংস্থাকে তাদের টার্নওভারের ১–২% এই খাতে দিতে হবে। UAN যুক্ত থাকলে রাজ্য বদলালেও সুবিধা চলবে।
ওভারটাইমের ক্ষেত্রে এখন থেকে দ্বিগুণ হারে পারিশ্রমিক পাওয়ার অধিকার থাকবে কর্মীদের। অর্থাৎ আর গোপন বা কম হারে ওভারটাইম দেওয়া যাবে না।- কন্ট্রাক্ট শ্রমিকেরাও এখন ন্যূনতম মজুরি, সামাজিক নিরাপত্তা, কাজের নিশ্চয়তা— সব পাবে। একই সঙ্গে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক ও পরিযায়ী কর্মীরাও সুরক্ষা পরিসরে আসছেন।- ধর্মঘট করার অন্তত ৬০ দিন আগে নোটিস দিতে হবে।- কোনও কর্মীকে ছাঁটাই করলে ২ দিনের মধ্যে তাঁর সব প্রাপ্য মিটিয়ে দিতে হবে।-
‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ এর ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট বিধি তৈরি করা হবে। অন্যদিকে, এই আইন বলবৎ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর বিরোধিতায় নেমেছে, ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস, এআইটিইউসি, সিইটিইউ, হিন্দ মাজদুর সভা, সেল্ফ এমপ্লয়েড উইমেন্স অ্যাসোসিয়েশন-সহ দশটি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন। তাঁদের অভিযোগ, গণতান্ত্রিক পরামর্শ ছাড়াই কেন্দ্র অবাধ ও অত্যাচারীর মতো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছে যা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পরিকাঠামো ভাঙে। ইউনিয়নগুলির দাবি, কোড কার্যকর না-করার জন্য তাঁরা সরকারকে বারবার অনুরোধ করেছিলেন। গত ১৩ নভেম্বর বৈঠকে ভারতীয় শ্রম সম্মেলন ডাকার দাবিও তোলা হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্র নীরব থেকেছে।