প্রাক্তন ফুটবলার পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের সল্টলেকের বাড়ি থেকে এক পরিচারকের দেহ উদ্ধার হল। পিকের বাড়িতে গাড়ির চালক-সহ মোট পাঁচ জন পরিচারক ছিলেন। গাড়ি চালকের সঙ্গে বচসার জেরেই খুন বলে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান। অভিযুক্ত গাড়ি চালককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধৃতের নাম বরুণ ঘোষ (৫৮)। হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের বাসিন্দা তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে খুন সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। শনিবার ধৃতকে বিধাননগর মহকুমা আদালতে পেশ করা হয়। অভিযুক্তকে পাঁচদিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত ব্যক্তির নাম গোপীনাথ মুহুরি (৪৮)। পশ্চিম বর্ধমানের জামুড়িয়ার বাসিন্দা ছিলেন তিনি। সল্টলেকের জিডি ব্লকে পিকে-র বাড়িতে তাঁর অবর্তমানে এখন তাঁর মেয়েরা থাকেন। শুক্রবার বাড়িতে পরিচারকরা মিলে একটি মদের আসর বসিয়েছিলেন। সেখানেই কোনও গোলমাল হয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান পুলিশের। ওইদিনই রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ বাড়ির পরিচারককে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। বিধাননগর মিউনিসিপ্যাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দোলের দিন বাড়িতে ছিলেন প্রাক্তন ফুটবলারের দুই মেয়ে। ছোট মেয়ে পূর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় অবিবাহিত। তিনি সল্টলেকের বাড়িতেই থাকতেন। বড় মেয়ে পৌলা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকেন থাইল্যান্ডে। দোল উপলক্ষে তিনি সল্টলেকের বাড়িতে এসেছিলেন। শুক্রবার তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর পার্স থেকে কয়েক হাজার টাকা চুরি হয়ে গিয়েছে। এরপর ওইদিনই বাড়ির চালক সহ পাঁচ পরিচারককে ঘরে ডেকে তিনি জিজ্ঞাসা করেন। কিন্তু টাকা নেওয়ার কথা কেউ মানতে চাননি।
পুলিশ সূত্রে খবর, ওই বাড়িতে মদের আসর বসান গোপীনাথ ও বরুণ। সেই আসরে প্রথমে ঠাট্টা, তারপর ঝগড়া এবং হাতাহাতি হয় দু’জনের মধ্যে। গোপীনাথ রান্নাঘর থেকে ছুরি নিয়ে এসে বরুণের গলায় আঘাত করেন। তাঁর হাত থেকে ছুরি কেড়ে নিয়ে বরুণ পালটা গোপীনাথকে আক্রমণ করেন। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন গোপীনাথ। গোপীনাথের চিৎকারে ছুটে আসেন আশপাশের লোকজন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে গোপীনাথকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের বড় মেয়ে বিধাননগর দক্ষিণ থানার অভিয়োগ করেন। পাশাপাশি হাসপাতাল থেকেও থানায় খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। শুক্রবার রাতেই গ্রেপ্তার করা হয় গাড়ির চালককে। ঘটনার সময় পিকের বাড়ির সদস্যেরা কোথায় ছিলেন, তাঁরা গোলমালের শব্দ পেয়েছিলেন কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাড়ির বাইরের সিসি ক্যামেরার ফুটেজও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার একাধিক ধারায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। নেহাতই মদ খাওয়া নিয়ে গন্ডগোল, নাকি এর পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে, তা খতিয়ে দেখছেন বিধাননগর দক্ষিণ থানার আধিকারিকেরা।