• facebook
  • twitter
Wednesday, 26 March, 2025

ঘুমের সমস্যার সমাধান করবেন কী করে?

একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন ঘুমের প্রয়োজন গড়ে ছয় থেকে সাত ‌ঘন্টা। ছোটদের ঘুমের জন্য বরাদ্দ রাখতেই হবে বারো থেকে পনেরো ঘন্টা সময়।

সুনিদ্রা মানে যে শরীর এবং মনের মধ্যে অজান্তেই একটা নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলা, সেটা প্রমাণ করেছে বিজ্ঞান‌ই। তাই ঘুমের পরিপূর্ণতায় আমাদের মন যেমন নতুনভাবে চনমনে হয়ে ওঠে- ঠিক তেমনই শরীরকে করে তোলে তরতাজাও। আবার ঘুম বিনা নানান বিষণ্ণতা শরীরকে শুধু অকেজোই করে তোলে না, নানা রোগের কবলে একেবারে ধরাশায়ীও করে ফেলে। একজন মানুষের দৈহিক গঠন, পরিশ্রমের মাত্রা, বয়স-সহ অন্যান্য আরও অনেক বিষয়ের উপর ভিত্তি করেই ঠিক করা হয়ে থাকে, ঘুমের সঠিক সময়‌টাও।

বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন ঘুমের প্রয়োজন গড়ে ছয় থেকে সাত ‌ঘন্টা। ছোটদের ঘুমের জন্য বরাদ্দ রাখতেই হবে বারো থেকে পনেরো ঘন্টা সময়। আবার বয়স্ক মানুষ বা বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রেও সঠিকভাবে মেনে চলতে হবে ঘুমের‌ নিয়মবিধি। ঘুম নিয়ে বিশেষভাবে চিন্তাভাবনা করা প্রয়োজন সন্তানসম্ভবা মহিলাদের। তাঁদের ক্ষেত্রে প্রথম তিনমাস ঘুমের প্রয়োজন হয় একটু বেশিই। কারণ সেই সময় গর্ভস্থ সন্তানের বৃদ্ধি ঘটে এবং শরীরের উপর অতিরিক্ত চাপ‌ও পড়ে। সুতরাং সেইসময় তাঁদের ঘুমের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের সঙ্গে জুড়তে হবে অতিরিক্ত আর‌ও দু-তিন ঘন্টা সময়।

চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে, একজন মানুষ কখন ঘুমোবেন আর কতক্ষণ জেগে থাকবেন, তার পুরোটাই নিয়ন্ত্রিত হয় মস্তিষ্কের নির্দেশ অনুসারেই। একজন সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে এই ঘুমের বিষয়ে সাধারণত কোনও ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটে না। কিন্তু অসুস্থ ব্যক্তি কিংবা মানসিকভাবে ব্যধিগ্রস্ত মানুষজনদের বেলায়, সেই নির্দেশনামার মধ্যে কিছু একটা গোলমাল থেকে যায়। আর তার‌ই ফলস্বরূপ সেই মানুষটি কখন জেগে থাকবেন আর কখন নিদ্রা যাবেন, তার কোনও নির্দিষ্ট সময়‌ও থাকে না।

মানসিক চাপের আধিক্যে, একজন সুস্থ মানুষের‌ মধ্যেও দেখা দিতে পারে ঘুমের সমস্যা। অতিরিক্ত সিগারেট বা ওই জাতীয় নেশায় দীর্ঘদিন ধরে অভ্যস্ত থাকলেও, হতে পারে সেই একই সমস্যা। নেশার এইসব বস্তু নেশাগ্রস্ত মানুষের চোখে প্রাথমিক পর্যায়ে ঘুমের ঘোর আনতে সাহায্য করলেও, পরবর্তীকালে সেটা কিন্তু সেই মানুষটার জীবনে প্রভাব বিস্তার করে একেবারে নেতিবাচক ভাবে। বলা যেতে পারে একেবারে পরিবর্তিত রূপে। তখন তাঁর ঘুমটাই কিন্তু উবে যায় দু’চোখের পাতা থেকে। অত‌এব সাবধান, নিজের শরীর ও স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই এবার ত্যাগ করতে হবে ওই সব নেশার সামগ্রী।

এমন‌ও অনেক মানুষ আছেন যাঁরা শারীরিক এবং মানসিক সব দিক থেকেই সুস্থ। কিন্তু তবুও ঘুমের ক্ষেত্রে তাঁদের নানান অসুবিধার মুখোমুখি হতে হয়। তাদের জানাই, এমন কিছু কিছু খাবার আছে যেগুলি ঘুমের জন্য সত্যিই ভীষণ কার্যকর। যেমন যদি রাতে শোওয়ার আগে একগ্লাস গরম দুধ পান করা হয়, তাহলে তা ঘুম এনে দিতে খুবই সাহায্য করবে। দুধের মধ্যে থাকা ট্রিপটোফ্যান অ্যাসিড, দুই চক্ষুকে তন্দ্রাচ্ছন্ন‌ করতে পারে। দুধ আবার অনেকের‌ সহ্য হয় না। বিকল্প হিসেবে খাওয়া যেতে পারে সিদ্ধ ডিম‌ও।

কারণ ডিমের মধ্যে আছে ভিটামিন-ডি, যার কাজ হল মস্তিষ্কে বিশেষ প্রভাব ফেলে চোখের তারায় ঘুম ঘুম ভাব সৃষ্টি করা। আমাদের প্রতিদিনের অতি প্রিয় সবজি আলুকেও কিন্তু ঘুমের উৎকৃষ্ট অনুঘটক বলা যেতে পারে। কারণ এর মধ্যে থাকা পটাশিয়াম, সুনিদ্রার এক সহায়ক রাসায়নিক পদার্থ।

লেটুস শাক‌কেও ঘুমের জন্য অতি উপযোগী এক উপাদান হিসেবে বিবেচনা করেছেন চিকিৎসকরা। কারণ হিসেবে তাঁরা জানিয়েছেন, সেই শাকের মধ্যে বিদ্যমান ল্যাক্টোক্যারিয়াম নামক অতি মূল্যবান এক উপ-ক্ষারের কথা,যার দৌলতে চোখে নামে ঘুমের‌ ঘোর।

কেউ যদি নিয়মিতভাবে কাঠবাদাম খান, তাহলে ঘুমের ক্ষেত্রে সেটাও সহায়কের ভূমিকাই পালন করবে। এতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম-সহ অন্যান্য আরও কিছু রাসায়নিক উপাদান‌, স্বাভাবিক ঘুমের জন্য খুব‌ই প্রয়োজন। সুনিদ্রার জন্য নিয়মিতভাবে খাওয়া যেতে পারে কলা। তার মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম। ভালো ঘুমের জন্য এইসব পদার্থের বিশাল ভূমিকা রয়েছে।

তবে একটা বিষয় ভেবে দেখতে পারেন। সারাদিন যদি এক‌ই স্থানে একই বিছানার উপর বসে অথবা শুয়ে ব‌ই পড়েন বা গল্প করেন এবং খাওয়া দাওয়াও করেন সেই একই জায়গায়- তাহলে সেই স্থানে ঘুমের চেষ্টা করলে সেটা বিফলে যেতে পারে। কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা হল, সব কাজ এক জায়গায় সারার চেষ্টা করলে ঘুমের সঙ্গে বিছানার মানসিক যোগসূত্রটা আপনা আপনিই শিথিল হয়ে পড়ে এবং ঘুমের‌ ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে পারে। তাই সুখনিদ্রার জন্য অতি অবশ্যই আলাদা ঘর এবং বিছানার বন্দোবস্ত‌ করা উচিত।