• facebook
  • twitter
Monday, 15 December, 2025

আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা, ছোট-বড় সকলেই কাহিল সর্দি কাশি জ্বরে কীভাবে সুরক্ষিত থাকবেন জানালেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা

কীভাবে এর হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে তা নিয়ে দৈনিক স্টেটসম্যানের প্রতিনিধি পিয়ালি হাজরা কথা বলেছেন শিশু বিশেষজ্ঞ সহেলি দাশগুপ্ত এবং পিয়ারলেস হাসপাতাল ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ চন্দ্রমৌলি ভট্টাচার্যের সঙ্গে

ঠান্ডা না পড়তেই সর্দি, কাশি জ্বরে নাজেহাল ছোট থেকে বড় সকলেই। এর পাশাপাশি শীতের মুখে আর একটি যে বড় সমস্যা দেখা দেয় তা হল ত্বকের সমস্যা বা ত্বকের অ্যালার্জি। প্রতি বছরই সিজন চেঞ্জের সময় এই ধরণের বিরক্তিকর শারীরিক সমস্যায় ভুগে থাকেন কমবেশি সকলেই। 
প্রশ্ন – প্রতি বছরই শীতের মুখে সর্দি-কাশি-জ্বর এবং অ্যালার্জির সমস্যায় ভুগে থাকেন মানুষ। এর হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় কি ?    
 

উত্তর – সত্যিটা হল, এর হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কোনও উপায় নেই। দূষণ তো আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই, আবহাওয়াও নয়। তবে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে বা সিনেমা হলে মাস্ক পরে থাকলে সংক্রামিত হওয়ার ভয় কম থাকে। কিন্তু মাস্ক দূষণ কতটা আটকায় তা বলা মুশকিল।

 
প্রশ্ন – বয়স্কদের ঠান্ডা লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাঁরা কি করবেন ?
উত্তর – যেটা করণীয় সেটা হল, যাঁরা বয়স্ক তাঁদের ভ্যাকসিন নিতে হবে। বর্ষার আগে ইন্ফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন নেওয়া ভাল। এছাড়াও রয়েছে নিউমোকক্কাল ভ্যাকসিন। নিউমোনিয়ার এই ভ্যাকসিন সকলেই নিতে পারেন। নিউমোকক্কাল ভ্যাকসিন এখন জীবনে একবারই নিতে হয়। এই ভ্যাকসিন নিলে একজন সারা জীবনের জন্য সুরক্ষিত থাকেন। তাঁর নিউমোনিয়া হলেও বাড়াবাড়ি হওয়ার ভয় কিছু নেই।
 
প্রশ্ন – বড়দের কী প্রতি বছর ফ্লু ভ্যাকসিন নিতেই হবে ?
উত্তর – নিতে পারেন, তবে ৬৫ বছরের উপর। যদি না কোন কারণে বড় কোন অসুখে তিনি ভুগে থাকেন। অনেকের ক্ষেত্রে আগেই নেওয়ার প্রয়োজন হয়। তবে সাধারণভাবে ৬৫ বছরের উপর যাঁদের বয়স তাঁদের নেওয়া উচিত। তবে এই ফ্লু ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত বর্ষাকালের আগে। অন্যসময় এই ভ্যাকসিন নিলে তার কার্যকারিতা অতটা থাকে না।
প্রশ্ন – অনেক সময় নাক বন্ধ হয়ে যায়, মানুষের ঘ্রাণ শক্তি চলে যায়। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে করোনা ফিরে এসেছে। এটা কী ভয়ের কারণ হতে পারে ?
উত্তর – করোনা আছে এবং থাকবে। কবে কোভিড- ১৯এর ভীতি মানুষের মধ্যে রয়ে গিয়েছে। গন্ধ চলে যাওয়ার অনেক কারণে থাকতে পারে। ঘ্রাণ শক্তি চলে যাওয়া মানেই করোনা নয়। ভাইরাল কারণেও হতে পারে।
প্রশ্ন – এই ধরণের ঠান্ডা লাগার সমস্যায় প্রথমেই কী চিকিতসকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয়  ?
উত্তর – প্রথমেই এইসব সাধারণ সমস্যায় মানুষ যান না।  লিভারের সমস্যা না থাকলে প্যারাসিটামল খাওয়া যেতেই পারে। গার্গল করতে পারেন। তবে বয়স্কদের ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে। প্রথম দু-তিনদিনের মধ্যে না কমলে চিকিতসকের কাছে যাওয়া উচিত।  
 
শীতের মুখে বাচ্চাদেরও সর্দি কাশি লেগেই থাকে। বিশেষ করে যাদের অ্যাজমার সমস্যা থাকে তাদের টানের মতো হয়। এছাড়াও ত্বকের নানা সমস্যা, অ্যালার্জির কারণে হতে পারে। শিশুদের সুস্থ রাখার বিষয়ে বেশ কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন শিশু বিশেষজ্ঞ সহেলি দাশগুপ্ত। 
 
প্রশ্ন – ঠান্ডা লাগার সমস্যা থেকে শিশুদের কীভাবে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব ?
 
উত্তর –  হেলদি ডায়েট অবশ্যই রাখতে হবে। কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, প্রোটিন এবং কালারড্ ভেজিটেবল খেতে হবে। এই শীতের সময় কালারড্ ভেজিটেবল প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এগুলি অ্যান্টি অক্সিড্যান্টস। শিশুদের ঠান্ডা লাগার হাত থেকে অনেকটাই রক্ষা করে।  
 
দ্বিতীয়ত, আবহাওয়ার পরিবর্তনও ঠান্ডা লাগার অন্যতম কারণ। শিশুদের এজন্য সবসময় হালকা উলের পোশাক পরিয়ে রাখতে হবে। বিশেষ করে যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তাদের সরাসরি উলের পোশাক পরা উচিত নয়। একটা জামার উপর পরা উচিত। কারণ উলের পোশাকের মধ্যে ডাস্ট মাইটস্ থাকে। 
 
তৃতীয়ত, হিটার ব্যবহার করলেও বাচ্চারা ওভার-হিট হয়ে যায়। তার উপর গরম চাদর বা কম্বল গায়ে দিলে শরীর আরও গরম হয়ে অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে।   
 
চতুর্থত, শীতের সময় ডিহাউড্রেশনের সমস্যা হয়। জল খেতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে।
 
এছাড়াও শীতের সময় যে সব শিশুর অ্যাজমার প্রবণতা আছে তাদের সর্দি কাশি বেড়ে যায়, টান হয়। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তাদের ইনহেলার দেওয়াই বাঞ্ছনীয়। কাফ সিরাপের থেকে ইনহেলার ব্যবহার করা অনেক ভাল, তবে অবশ্যই চিকিতসকের পরামর্শ নিয়ে। 
 
প্রশ্ন – কাশি হলে শিশুদের যেসব ওষুধ আমরা দিয়ে থাকি তা দেওয়া কী ঠিক নয়  ?
উত্তর – অনেক সময় ছোটদের কাশি হলে বাড়ির লোকেরা বড়দের ওষুধ খাইয়ে দেন। সেটা খুবই ক্ষতিকারক। কাশির ওষুধের সাইড এফেক্টস এমনিতেও অনেক থাকে। হার্ট রেট বাড়িয়ে দেয়, মস্তিষ্কে ডিপ্রেশন তৈরি করে, খিঁচুনি হতে পারে। এইসব বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে। বিশেষত এখন কাশির ওষুধ নিয়ে নানারকম সমস্যা দেখা দিয়েছে। যেসব ওষুধের উপর নিষেধাজ্ঞা এসেছে, সেগুলি একেবারেই দেওয়া চলবে না। কারণ অনেক সময় দোকানে পুরনো ওষুধের স্টক থেকে যায়।
 
প্রশ্ন – ঠান্ডা লাগা থেকে শিশুদের কীভাবে সুরক্ষিত রাখা যায় ?
উত্তর – ফ্লু ভ্যাকসিন নিতে হবে। প্রতি বছর দেওয়া জরুরি। ১৫ বছর বয়স অবধি।  
 
প্রশ্ন – ত্বকের কী সমস্যা হতে পারে ?
উত্তর – ত্বক খুব ড্রাই হলে ইচিং হয়। অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস হতে পারে। ইমোলিয়েন্ট ক্রিম এক্ষেত্রে শিশুকে আরাম দিতে পারে। এছাড়াও অন্য ইনফেকশন হতে পারে। এই সময় সাধারণত আমরা  তেল দিতে বারণ করে থাকি। ফলে সবসময় শরীরকে হাইড্রেট রাখাটা খুবই জরুরি।
 
প্রশ্ন – স্টিম নিলে কী কষ্টের হাত থেকে পরিত্রাণ মিলতে পারে ?
 
উত্তর – স্টিম বা ভেপার ছোটদের জন্য নয়। এক্ষেত্রে বার্ন ইনজুরি হতে পারে।  সাইনাস -এর ক্ষেত্রে স্টিম নিতে পারে, ৬ বছরের নীচে নয়। 

Advertisement

Advertisement