• facebook
  • twitter
Saturday, 6 December, 2025

স্কুলে গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডি পদে নিয়োগ

স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রায় সাড়ে আট হাজার শূন্যপদে নিয়োগের সম্ভাবনা এক বিরাট আশার আলো। তবে, সুযোগ যেমন বিশাল, পরীক্ষার্থীর সংখ্যাও তেমনই বিপুল। এই নিয়ে বিস্তারিত জানালেন অভিজ্ঞ পেশাপরামর্শক এবং ভারতীয় হিসাব ও নিরীক্ষা দফতরের আধিকারিক অনিন্দ্য কিশোর।

ফাইল ছবি।

সম্প্রতি স্কুল সার্ভিস কমিশন এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছে গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে যে অনলাইন আবেদন গ্রহণ করার কথা ছিল, তা স্থগিত রাখা হয়েছে। কমিশন আরও জানিয়েছে, খুব শীঘ্রই এই বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। রাজ্যের সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত ও স্পনসর্ড জুনিয়র হাই, সেকেন্ডারি এবং হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলগুলিতে নন-টিচিং স্টাফ বা শিক্ষাকর্মী নিয়োগের দরজা খুলতে চলেছে।

এক নতুন দিগন্ত: পরীক্ষা এবং সম্ভাবনা

Advertisement

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে, পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন প্রথম রাজ্য স্তরের নির্বাচন পরীক্ষার মাধ্যমে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে চলেছে। এটি কোনও সাধারণ চাকরির বিজ্ঞপ্তি নয়। এটি রাজ্যের হাজার হাজার তরুণ-তরুণীর কাছে এক স্থিতিশীল সরকারি চাকরির প্রবেশদ্বার। তাই এই সুযোগকে কেবল একটি পরীক্ষা হিসেবে না দেখে, নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার এক সোপান হিসেবে দেখা উচিত।

Advertisement

শূন্যপদ, যোগ্যতা এবং বেতনক্রম

যে কোনও পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করার আগে তার খুঁটিনাটি জেনে নেওয়া আবশ্যক।

শূন্যপদ: বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত শূন্যপদের সংখ্যাটি রীতিমতো আকর্ষণীয়। গ্রুপ-সি (করণিক) পদের জন্য রয়েছে ২৮৯৮টি এবং গ্রুপ-ডি পদের জন্য রয়েছে ৫৪৮৮টি শূন্যপদ। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে আট হাজারেরও বেশি পদে নিয়োগ হবে। যা সাম্প্রতিককালে এককথায় বিরল।

কারা যোগ্য: ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী যে কোনও ভারতীয় নাগরিক এই পদের জন্য আবেদন করতে পারবেন। গ্রুপ-সি বা করণিক পদের জন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা হল মাধ্যমিক বা সমতুল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। অন্যদিকে, গ্রুপ-ডি পদের (যেমন পিওন, ল্যাবরেটরি অ্যাটেনডেন্ট, নৈশপ্রহরী) জন্য ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ হলেই চলবে। বয়সের ক্ষেত্রে সংরক্ষিত শ্রেণির প্রার্থীরা নিয়ম অনুযায়ী ছাড় পাবেন।

বেতনক্রম: বেতনক্রম হবে রাজ্য সরকারের রোপা, ২০১৯ নিয়ম অনুযায়ী। গ্রুপ-সি কর্মীদের জন্য বেতনক্রম হবে পে-লেভেল ৬ অনুযায়ী (বেসিক পে ২২,৭০০ টাকা থেকে) এবং গ্রুপ-ডি কর্মীদের জন্য পে-লেভেল ১ অনুযায়ী (বেসিক পে ১৭,০০০ টাকা থেকে)। এর সঙ্গে থাকবে বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসার মতো অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও।

জয়ের রূপরেখা: সিলেবাস এবং নম্বর বিভাজন

যে কোনও পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হতে গেলে সবার আগে সিলেবাসকে ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে। প্রয়োজনে, বিগত বছরের প্রশ্নগুলি বিশ্লেষণ করে নেওয়া হবে নিশ্চিতভাবে বুদ্ধিমানের কাজ।

গ্রুপ-সি (করণিক) পদের জন্য:

এই পদের জন্য মোট নম্বর ১০০। এর বিভাজনটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

লিখিত পরীক্ষা (MCQ): ৬০ নম্বর। চারটি বিষয়ের উপর পরীক্ষা হবে—

সাধারণ জ্ঞান: ১৫ নম্বর (ইতিহাস, ভূগোল, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সংবিধান ইত্যাদি)।

সাম্প্রতিক ঘটনাবলি: ১৫ নম্বর (জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা)।

সাধারণ ইংরেজি: ১৫ নম্বর (বাক্য গঠন, সমার্থক-বিপরীতার্থক শব্দ ও তাদের ব্যবহার)।

পাটিগণিত: ১৫ নম্বর (সরল, গড়, অনুপাত, শতকরা, লাভ-ক্ষতি, সময়-কার্য ইত্যাদি)।

শিক্ষাগত যোগ্যতা: ১০ নম্বর। এটি প্রার্থীর অ্যাকাডেমিক স্কোরের উপর ভিত্তি করে দেওয়া হবে।

কম্পিউটার টাইপিং ও বেসিক জ্ঞান: ২৫ নম্বর। লিখিত পরীক্ষায় সফল হওয়ার পর, এই ধাপে প্রার্থীর কম্পিউটার চালনার দক্ষতা যাচাই করা হবে।

ইন্টারভিউ: ৫ নম্বর।

গ্রুপ-ডি পদের জন্য:

এই পদের জন্য মোট নম্বর ৫০। গ্রুপ-সি-এর তুলনায় এই পরীক্ষা-পদ্ধতি কিছুটা সহজ।

লিখিত পরীক্ষা (MCQ): ৪৫ নম্বর। তিনটি বিষয়ের উপর পরীক্ষা হবে—

সাধারণ জ্ঞান: ১৫ নম্বর। সাম্প্রতিক ঘটনাবলী: ১৫ নম্বর। পাটিগণিত: ১৫ নম্বর।

ইন্টারভিউ: ৫ নম্বর।

প্রস্তুতির সাতকাহন: বই থেকে ইন্টারভিউ

উপরে দেওয়া সিলেবাস এবং বিগত বছরের প্রশ্নপত্র একটু মন দিয়ে বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যাবে, কোন কোন বিষয় এবং কেমন ধরনের প্রশ্ন আসতে পারে।

লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি:

যাঁরা ধারাবাহিকভাবে এই জাতীয় চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে চলেছেন, তাঁরা অন্যদের তুলনায় কিছুটা এগিয়ে থাকবেন। তবে, সবার জন্য পরামর্শ— হাতে আর খুব বেশি সময় নেই। তাই, সাধারণ জ্ঞান, সাম্প্রতিক ঘটনাবলী, পাটিগণত ও ইংরেজির নির্ভরযোগ্য কয়েকটি বই কিনে নিতে পারেন। তারপর চলুক ঘড়ি ধরে চুটিয়ে অনুশীলন।

ব্যক্তিগত পরামর্শ হল— কোনও বই কেনার আগে, প্রকাশনী সংস্থার সুনাম এবং বইয়ের গুণগত মান যাচাই করে নেবেন। সময় অল্প হওয়ার কারণে একাধিক বই না পড়ে, এক-দু’টি ভাল বই খুঁটিয়ে পড়া শ্রেয়। যেমন, ছায়া প্রকাশনীর জিকে চ্যালেঞ্জার, কম্পিটিটিভ ম্যাথমেটিক্স বা এস চাঁদের অবজেক্টিভ আরিথমেটিক ও অবজেক্টিভ জেনারেল ইংলিশ বইগুলি সহায়ক হতে পারে। যেহেতু শূন্যপদ অনেকটাই বেশি, তাই হাতেগোনা আগামী কয়েক মাস মন দিয়ে পড়লেই, কেল্লাফতে করা সম্ভব।

ইন্টারভিউতে বাজিমাত: গ্রুপ-সি ও ডি, উভয় ক্ষেত্রেই ইন্টারভিউতে বরাদ্দ নম্বর মাত্র পাঁচ। সংখ্যাটা খুব ছোট হলেও, মোটেও গুরুত্বহীন নয়। হাজার হাজার প্রার্থীর মধ্যে শেষ মুহূর্তের বাজিমাতে এই পাঁচ নম্বরই নির্ণায়ক হয়ে উঠতে পারে।

গ্রুপ সি-র জন্য পরামর্শ:

যেহেতু এই ক্যাটেগরিতে নিয়োগ হবে কোনও বিদ্যালয়ে করণিক হিসেবে, তাই ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্যরা প্রার্থীর কাজের প্রতি আন্তরিকতা, দলগতভাবে কাজ করার মানসিকতা এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ পালনের সদিচ্ছা যাচাই করে নেবেন। এর সঙ্গে তাঁরা আপনার পারিপার্শ্বিক জ্ঞান ও বিচার-বিশ্লেষণের ক্ষমতাও বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করবেন।

গ্রুপ ডি-র জন্য পরামর্শ: এই ক্ষেত্রে মূলত নিয়োগ হবে পিওন, ল্যাবরেটরি অ্যাটেনডেন্ট বা সহায়কের ভূমিকায়। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ পালনে তুমি কতটা তৎপর এবং কাজের প্রতি কতটা দায়িত্বশীল, সেটাই তাঁরা মূলত দেখবেন। এর সঙ্গে সাধারণ জ্ঞান সম্পর্কে সচেতনতাও যাচাই করা হতে পারে।

শেষ কথা

নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, যে কোনও চাকরি পাওয়ার ‘মাস্টার কি’ থাকে সেই পরীক্ষার্থীর নিজের মধ্যেই! দক্ষতা ও অনুশীলনের মাধ্যমে তাঁর উপযুক্ত ব্যবহারই তাঁকে এনে দেয় কাঙ্ক্ষিত সাফল্য। চাকরির বাজারে দীর্ঘ খরার পর এই নিয়োগ এক বিরাট সুযোগ। তাই আর সময় নষ্ট না করে লেগে পড়ুন আজ থেকেই। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত দিনক্ষণ অনুযায়ী অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হবে। পাখির চোখ হোক— আগামী পরীক্ষার সেই বিশেষ দিনটি। সঠিক প্রস্তুতি এবং ইতিবাচক মানসিকতা থাকলে, সাফল্য আসবেই।

Advertisement