• facebook
  • twitter
Friday, 21 March, 2025

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ২৫ বছর গাই বাংলা ভাষার গান

এই সময় ভাষা সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি পুনর্নবীকরণের সময়

প্রতীকী চিত্র

হীরক কর

একের পর এক জ্বলে উঠছে মশাল।‌ দালানে দালানে মোমবাতির আলো। বসন্তের ফুরফুরে বাতাস বইছে। ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্য রাত। অদ্ভুত একটা গ্রাম ‘বাবলা’। তারই মাঝে দাঁড়িয়ে আছি আমরা। রাত বারোটা বাজতেই শত কন্ঠে ধ্বনিত হলো, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি/ ছেলে হারা শত মায়ের অশ্রু, গড়ায়ে ফেব্রুয়ারি/ আমার সোনার দেশের, রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’…। শিহরিত হলাম। রোম খাড়া হয়ে গেল। অবিরাম ঝরতে লাগলো অশ্রুধারা। অনাবিল আবেগ। ভাষা আন্দোলনের আবেগ। এ গ্রাম যে ভাষা শহীদ আবুল বরকতের জন্মস্থান বাবলা গ্রাম। যেখানে হিন্দু-মুসলমান, তূণমূল, সিপিএম, বিজেপি, আজ সব এক অভিন্ন। মিলে মিশে একাকার। এক অভিনব অভিজ্ঞতা।

কলকাতা থেকে ১৭৫ কিলোমিটার দূরে। মুর্শিদাবাদ জেলার সালার থানা। বাবলা গ্রাম ভরতপুর অঞ্চলে অবস্থিত। “বরকতের গ্রাম” হিসেবেও পরিচিত। আমার ভাষা, বাংলা ভাষা। ভাষা আন্দোলনে শহীদ আবুল বরকতের জন্মভিটা মুর্শিদাবাদ জেলার সালার থানার এই বাবলা গ্রামে।
পশ্চিমবঙ্গে মেট্রিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়তে যান বরকত। জড়িয়ে পড়েন ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে।

উর্দুর বদলে সংখ্যাগরিষ্ঠের মাতৃভাষা বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। আন্দোলন দমনের জন্য খানসেনা ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে মিছিল এগিয়ে চলে। পুলিশ গুলি চালায়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ১২ নম্বর শেডের বারান্দায় গুলিবিদ্ধ আবুল বরকত লুটিয়ে পড়েন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে রাত ৮টায় বরকত মারা যান। ২১ ফেব্রুয়ারি রাতেই ঢাকার আজিমপুর গোরস্থানে পুলিশ বরকতের দেহ সমাধিস্থ করে। সেখানেই একুশের আরও ৪ শহিদ আব্দুস সালাম, রফিকুদ্দিন আহমেদ, শফিউর রহমান ও আব্দুল জাব্বার শায়িত আছেন।

বাবলা গ্রামে তাঁকে স্মরণ করে প্রতি বছর আয়োজন করা হয় বরকত মেলা, প্রভাতফেরি, মশাল মিছিল ও ক্রিকেট টুর্নামেন্টের। প্রভাতফেরির সময় বাজতে থাকে সাংবাদিক ও লেখক আবদুল গাফফার চৌধুরীর রচিত এই গানটি। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’।
সালারে বরকতের নামে একটি গ্রন্থাগার এবং ক্লাব আছে। ওঁর প্রতিকৃতি বসানো হয়েছে। গ্রামের কয়েকজন পুরনো বাসিন্দা এখনো বলতে পারেন বরকতের কথা। তাঁরা জানান, মেধাবী ছাত্র বরকত ১৯৪৮ সালে ঢাকায় যান। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাঁর পরিবারের সদস্যরাও বাংলাদেশে চলে যান। যাওয়ার আগে বাড়ি এবং সংলগ্ন জমি দান করে যান। সেই বাড়িতে এখন থাকেন গ্রামেরই এক পরিবার। পরিবারটির সদস্য গোলাম মোর্শেদ জানান, তিনি বাড়িটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব বোঝেন। তাই সেটাকে যত্নে রাখার চেষ্টা করেন।
মাতৃভাষা দিবস পালনের সঙ্গেই চলে আসে রফিক, সালাম, বরকত ও আব্দুল জব্বারদের নাম।

শতাব্দীর শেষ বছর অর্থাৎ ১৯৯৯ সালে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সম্মেলনে স্বীকৃতি পায়। নভেম্বর মাসে ওই স্বীকৃতির পর ২০০০ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালন করা হয়। রাষ্ট্রসংঘে এই দিনটির প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল বাংলাদেশই। মাতৃভাষার জন্য তাদের রক্তক্ষয়ী ইতিহাস স্মরণ করেই এই দিনের আয়োজন। সেই প্রস্তাব ‘গ্রহণ’ করেছিল অন্যান্য সদস্য দেশগুলো। তার ফলস্বরূপ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

ভাষা আন্দোলনের শিকড় ছিল দেশভাগেই। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ছিল রক্তের মূল্যে অর্জিত। তবে এই দিনটি হঠাৎ জ্বলে ওঠা কোনও স্ফুলিঙ্গ ছিল না। বরং ইতিহাসের প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল দেশভাগের সময় থেকেই। ভারতের স্বাধীনতা ও দেশভাগ একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। একদিকে চোখ ঝলসানো অপ্রত্যাশিত সুখ, তো অন্যদিকে গভীর বিষাদ। ভূখন্ডের ভাগাভাগি মেনে নিতে হয়েছিল আপামর বাংলা ভাষা বাসীকে। কিন্তু রাষ্ট্রের ‘ভাষাশাসন’ মেনে নিতে পারেনি ওপার বাংলা। দেশভাগের বছর থেকেই সে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ১৯৪৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র ও অধ্যাপক ‘তমদ্দুন মজলিস’ সংগঠন তৈরি করেন। রাষ্ট্রভাষা নিয়ে বৃহত্তর আলোচনার পরিসর গড়াই ছিল এর উদ্দেশ্য।

দেশভাগ অনেকের অমতে হলেও ভাষার প্রশ্নে বরাবর সচেতন ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের আপামর নাগরিক। সেই প্রশ্নকে কোনও রাষ্ট্রভাষার জোয়ার এসে ভাসিয়ে দিতে পারেনি। ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ মহম্মদ আলি জিন্না প্রথম ও শেষবারের মতো বাংলাদেশে আসেন। ভাষা নিয়ে বিক্ষোভের আঁচ আগেই পেয়েছিলেন। জনসভায় ঘোষণা করেছিলেন, ‘উর্দুই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। অন্য কোনও ভাষা নয়। যাঁরা ভাষা নিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে তাঁরা পাকিস্তানের শত্রু।’ কিন্তু আন্দোলন স্তিমিত হয়নি। দ্বিগুণ ক্ষোভ আছড়ে পড়েছিল পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক ভরকেন্দ্রে। সেই আন্দোলন, ক্ষোভ ও বিপ্লব নির্মাণের পুরোভাগে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অগণিত মুক্তমনা তরুণ পড়়ুয়া ও অধ্যাপকেরা। জিন্নার ঘোষিত উর্দু ও ইংরেজিকে সচেতনভাবেই তারা বর্জন করেন। আপন করেন, ‘মোদের গরব মোদের আশা…আ মরি বাংলাভাষা।’

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি ওই বৃহত্তর আন্দোলনের অংশ ছিল। রাষ্ট্রের অস্ত্র ছিল পুুলিশ। তাদের গুলিতেই ছাত্ররা শহিদ হন। ইতিহাস হয়ে ওঠে ২১ ফেব্রুয়ারি। মাতৃভাষাকে ভালবেসে আগামী প্রজন্ম বাঁচবে বলে মৃত্যুবরণ করেন রফিক, বরকত, জব্বার, শফিউর, সালামের মতো ছাত্রেরা। সরকারের হিসেবে মৃত্যু চারজনের হলেও আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা জানান, আরও অনেকেই ওই দিন ভাষা শহিদ হয়েছিলেন। ভাষা আন্দোলন থেকেই পাকিস্তান বাহিনীর নির্মম হত্যালীলা শুরু হয়েছিল। কিন্তু আন্দোলন দমেনি। বরং সে আন্দোলন জন্ম দেয় নতুন এক স্বাধীনতা যুদ্ধের। যুদ্ধের প্রথম ধাপ ছিল সাধারণ ঘরের ছাপোষা নাগরিক বনাম সেনাদের যুদ্ধ। খুব সামান্য কয়েক মাসের প্রশিক্ষণকে সম্বল করে হাতে অস্ত্র ধরে ‘দুধে-ভাতে’ সন্তানেরা। আলাদা রাষ্ট্রের জন্য। পাকিস্তান ও উর্দুর শাসন থেকে মুক্তি পেতে। আধুনিক বিশ্বে জন্ম হয় এক নতুন দেশের— বাংলাদেশ। ভাষার ভিত্তিতে এক আস্ত দেশের জন্ম আজও তাই মাতৃভাষার বাঁচিয়ে রাখার প্রেরণা জোগায়। ভাষা শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে ২১ ফেব্রুয়ারি।

২০২৫ সাল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ২৫তম বার্ষিকী। এই রজতজয়ন্তী উদযাপন ভাষাগত বৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং মাতৃভাষার প্রচারে ২৫ বছরের নিরন্তর প্রচেষ্টার উপর আলোকপাত করে। এই সময় ভাষা সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি পুনর্নবীকরণের সময়।

ভারত এমন অনেক ভাষার আবাসস্থল যা এর সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে প্রতিফলিত করে। ভারতীয় সংবিধান অষ্টম তফসিলের অধীনে ২২টি ভাষাকে স্বীকৃতি দেয়। ভারতে কথিত প্রধান ভাষাগুলোর মধ্যে রয়েছে হিন্দি, বাংলা, তামিল, তেলেগু, মারাঠি, উর্দু, গুজরাটি, কন্নড়, মালয়ালম, পাঞ্জাবি, ওড়িয়া, অসমীয়া, কাশ্মীরি, সিন্ধি, কোঙ্কানি, নেপালি, মৈথিলি, সাঁওতালি, মণিপুরি এবং বোডো। ভারত সরকার ছয়টি ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দিয়েছে— তামিল, সংস্কৃত, কন্নড়, তেলেগু, মালায়ালাম এবং ওড়িয়া। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৪৩-তে দেবনাগরী লিপিতে হিন্দিকে ভারতের সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৯: সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা করে, নিশ্চিত করে যে তাঁরা তাদের ভাষা, লিপি এবং সংস্কৃতি সংরক্ষণ করতে পারে।

প্রেমের মত ভাষারও মাস ফেব্রুয়ারি। রক্ত দিয়ে মায়ের ভাষার অধিকার আদায়ের মাস এ মাস। ভাষা আন্দোলন অর্থাৎ একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের জনগণের গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। এটি আমাদের কাছে ঐতিহ্যময় মাতৃভাষা দিবস। পারস্পরিক যোগাযোগ ও ভাবাবেগ প্রকাশের সবচেয়ে বড় নির্ভরতা ভাষা। আর ভাষার মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় হচ্ছে মাতৃভাষা। ২১ ফেব্রুয়ারি বা ৯ ফাল্গুন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ দিবস তথা মাতৃভাষার প্রতি সকল জাতিরই আন্তরিক ও গভীর ভালবাসা বিদ্যমান। আর এ ভালবাসা মায়ের প্রতি ভলোবাসার মতোই। আমরা মাতৃভাষাকে প্রতিষ্ঠার জন্য যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি তা বিশ্বব্যাপী অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে। তবে খুব কম জাতির মানুষ মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য প্রাণ দিয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বিশ্বের প্রায় ১৯১টি দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়। পৃথিবীর ১৯৩টি দেশের প্রায় ৬ হাজার ভাষার সঙ্গে বাংলা ভাষার এক মহান মর্যাদা রয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার বিষয়ে প্রাথমিক উদ্যোগ গ্রহণ করেন কানাডাপ্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম এবং কানাডার বহুভাষিক ও বহুজাতিক সংগঠন ‘মাতৃভাষা প্রেমিক গোষ্ঠী’।

তৎকালীন সরকার ৭ ডিসেম্বর ১৯৯৯ ঢাকার পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত বিশাল জনসভায় ঘোষণা করে যে, পৃথিবীর বিকাশমান ও বিলুপ্তপ্রায় ভাষাগুলোর মর্যাদা ও অধিকার রক্ষায় গবেষণার জন্য ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হল। তখন ১৫ মার্চ ২০০১ ঢাকার সেগুন বাগিচায় জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কোফি আন্নান এই ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ইনস্টিটিউটের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহের মধ্যে রয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও ক্ষুদ্র জাতিসমূহের ভাষা সংগ্রহ, সংরক্ষণসহ প্রয়োজনীয় গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্পন্ন করা এবং বাংলাসহ অন্যান্য ভাষা আন্দোলনের তথ্যসংগ্রহ ও গবেষণা এবং ইউনেস্কোর সদস্য দেশসমূহের মধ্যে এ-সংক্রান্ত তথ্যাবলি পৌঁছে দেওয়া। তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো বাংলাদেশের বাঙালি জনগোষ্ঠীর ভাষার জন্য আত্মত্যাগকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে এবং প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়। ইউনেস্কোর পর রাষ্ট্রসংঘও ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ৫ ডিসেম্বর ২০০৮ রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এ স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ভারত, জাপান, সৌদি আরব, কাতার সহ বিশ্বের ১২৪টি দেশ এ রেজোলিউশনটি সমর্থন করেন। কেননা, এই পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষ নিজস্ব ভাব আদান প্রদানের জন্য তার মাতৃভাষাকে পায় জন্মগত আশীর্বাদ স্বরূপ।

এরপর পদ্মার ওপর দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের অক্লান্ত লড়াই ও আত্মত্যাগের পর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়, যে দেশের ভিত্তি ছিল বাংলা ভাষা। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে নতুন বাংলাদেশ শপথ নেয় নিজের মাতৃভাষা বাংলার প্রতি দায়বদ্ধতার কথা মনে রেখে। ইতিহাসের পাতায় শুধু ভাষার জন্য আন্দোলন এবং নতুন দেশের জন্ম— এর দ্বিতীয় কোনও উদাহরণ পাওয়া অসম্ভব।

আর এই ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের জন্য অসাধারণ স্যাক্রিফাইস করেছে এপার বাংলাও। কাতারে কাতারে আসা লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তুকে আশ্রয় দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। সব মিলিয়ে গড়ে উঠেছে আজকের এপার বাংলা। পশ্চিমবঙ্গ। তাই, আজ বলতেই হয়,
“ভাষার তরে দিয়েছে যারা দেহবল মনপ্রাণ!
তাঁরা বেঁচে আছে সব বাঙালীর তরে!
গাহি তাহাদের গান!”