রম্যাঁ রলাঁ
পূর্ব প্রকাশিতর পর
Advertisement
এরপর আগ্রাসন যন্ত্রটি চালিত হয় তাদেরই বিরুদ্ধে যারা জার্মানিতে ফ্যাসিস্ট শাসন সুদৃঢ়করণে সহায়তা করেছিল, ফ্রান্স, ইংলন্ড ও তাদের মিত্রদের বিরুদ্ধে।
Advertisement
সোভিয়েত ইউনিয়ন সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন নীতির ঘোর বিরোধিতা করছিল। সে দৃঢ়তার সঙ্গে ও নিরবচ্ছিন্নভাবে ফ্যাসিজম আর যুদ্ধের বিরুদ্ধে লড়ছিল এবং যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ার জন্য একনিষ্ঠভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে শান্তির সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিল পুঁজিতান্ত্রিক দেশসমূহের কমিউনিস্ট পার্টিগুলো, জাতীয় মুক্তি আর স্বাধীনতার সংগ্রামীরা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভ হয়েছিল পুঁজিতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহের দু’টি গ্রুপের মধ্যে এক সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ হিশেবে। ফ্যাসিস্ট জার্মানি কর্তৃক সোভিয়েত ইউয়িন আক্রমণের দরুন যুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশগ্রহণ এবং হিটলারবিরোধী জোট গঠন যুদ্ধের ন্যায়সঙ্গত ও ফ্যাসিস্টবিরোধী চরিত্র স্থির করে। বিশ্বের পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর ব্রিটেনের শাসক মহলগুলোকে তাদের পররাষ্ট্র নীতি পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করে। ১৯৪১ সালের ২৩ জুন এক সাংবাদিক সম্মেলনে ভাষণ দিতে গিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্থায়ী পররাষ্ট্র মন্ত্রী স. উওলেস বলেন যে ‘আজ হিটলারী বাহিনীগুলো হচ্ছে আমেরিকা মহাদেশের জন্য প্রধান বিপদ। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলও অনুরূপ কথা বলেছিলেন। এবং সত্যিই পৃথিবীর সমস্ত দেশের জাতিসমূহ তখন ফ্যাসিস্ট দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হতে যাচ্ছিল।
যুদ্ধ চলাকালে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও অন্যান্য পশ্চিমী দেশের রাজনৈতিক লক্ষ্য সব ক্ষেত্রে সমান ছিল না। তবে ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রসমূহকে পরাস্ত করার ব্যাপারে তাদের অভিন্ন অভিপ্রায়টি সামরিক-রাজনৈতিক জোট গঠনের জন্য ভিত্তি হিশেবে কাজ করেছিল। হিটলারবিরোধী জোটের উদ্ভব ঘটার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংলন্ড ও জোটভুক্ত অন্যান্য দেশের শক্তির সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের সামরিক আর অর্থনৈতিক ক্ষমতা একত্রিত করার সুযোগ মিলল। এই বিশাল শক্তির সর্বাধিক ফলপ্রসূ ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করে যুদ্ধের রাজনৈতিক ও রণনৈতিক লক্ষ্য উপলব্ধিতে প্রভেদ প্রসূত বিরোধগুলো।
পশ্চিমী রাষ্ট্রমূহ এই আশা করেছিল যে যুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ফ্যাসিস্ট জার্মানি দুর্বল হয়ে পড়লে তারা নিজেরাই পরে যুদ্ধোত্তর বিশ্বের ভাগ্য নির্ধারণ করবে। সবচেয়ে স্পষ্ট ও তীব্রভাবে বিরোধগুলোর প্রকাশ ঘটে ইউরোপে মিত্র শক্তিসমূহ কর্তৃক দ্বিতীয় রণাঙ্গন খোলার সময় নির্ধারণের প্রশ্নে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন অনেক বিলম্বের পর তা খুলল ১৯৪৪ সালে গ্রীষ্ম কালে, যখন সবার কাছেই এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে সোভিয়েত ইউনিয়ন একাই ফ্যাসিস্ট জার্মানিকে পরাজিত করতে পারবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইংলন্ডের রণনীতিজ্ঞরা উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকা আর মধ্য প্রাচ্যের গৌণ যুদ্ধক্ষেত্রগুলোতে তাদের সৈন্য প্রেরণ করেছিল, অথচ তখন যুদ্ধের গতি নির্ধারিত হচ্ছিল সোভিয়েত-জার্মান রণাঙ্গনে, যেখানে মোতায়েন করা হয়েছিল ফ্যাসিস্ট জার্মানির প্রধান বাহিনীগুলো।
হিটলারবিরোধী জোটের সদস্যদের মধ্যে বিদ্যমান মতবিরোধ সত্ত্বেও তা তার প্রধান সমস্যাটি সাফল্যের সঙ্গে সমাধান করেছিল— বিশ্বাধিপত্যের দাবিদারদের পূর্ণ পরাজয় এনে দিয়েছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রস্তুতি কার্যে লিপ্ত ছিল আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদী প্রতিক্রিয়া এবং তা বাধিয়েছিল মুখ্য আগ্রাসক রাষ্ট্রগুলো— ফ্যাসিস্ট জার্মানি, ফ্যাসিস্ট ইতালি ও সমরবাদী জাপান। এটা ছিল মানবেতিহাসের বৃহত্তম যুদ্ধ। তাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত হয়ে পড়েছিল পৃথিবীর ৮০ শতাংশেরও বেশি অধিবাসী আর সামরিক ক্রিয়াকলাপ চলছি/ তিন মহাদেশ এবং সাগর-মহাসাগরের বিশাল বিশাল এলাকা জুড়ে।
(ক্রমশ)
Advertisement



