• facebook
  • twitter
Monday, 4 August, 2025

পুশব্যাক রাজনীতি

রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে মহারাষ্ট্র ও গুজরাত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আইনমাফিক পদক্ষেপের হুমকি দেওয়ার পরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

মুর্শিদাবাদের চারজন এবং পূর্ব বর্ধমানের একজন, যাঁরা এরাজ্যে কাজের সুযোগ না পেয়ে মহারাষ্ট্রে গিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করছিলেন, মুম্বই পুলিশ শুধুমাত্র ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ‘বাংলাভাষী’ বলে তাঁদের বাংলাদেশি নাগরিক হিসাবে চিহ্নিত করে বিএসএফ-এর হাতে তুলে দেয়। পুলিশের পরে বিএসএফ-এর হাতে তাঁদের হেনস্তার শিকার হতে হয়। তারপর বিএসএফ কোচবিহার জেলার বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে তাঁদের বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ঠেলে পাঠায়। কোনও স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে এভাবে কাউকে জোর করে দেশ থেকে কি তাড়ানো যায়? নাগরিকত্ব বিচারের দায়িত্ব কি পুলিশ আর বিএসএফ-এর হাতে তুলে দেয়। পুলিশের পরে বিএসএফ-এর হাতে তাঁদের হেনস্তার শিকার হতে হয়। তারপর বিএসএফ কোচবিহার জেলার বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে তাঁদের বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ঠেলে পাঠায়। কোনও স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে এভাবে কাউকে জোর করে দেশ থেকে কি তাড়ানো যায়? নাগরিকত্ব বিচারের দায়িত্ব কি পুলিশ আর বিএসএফ-এর উপরে? এদেশে তাহলে আইন-আদালতের আর কোনও প্রয়োজন নেই? পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী দ্যর্থহীন ভাষায় এর নিন্দা করে ফিরিয়ে এনেছেন এরাজ্যের বাসিন্দাদের।

‘পুশব্যাক’ নামের এই বিষয়টির গুরুতর তাৎপর্য রয়েছে। কারণ মুম্বই পুলিশ ও বিএসএফ যে গায়ের জোরে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা ভারতীয় নাগরিকদেরই জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়েছিল তা এখন প্রমাণিত। মুর্শিদাবাদের যে নাগরিকদের জোর করে কোচবিহারের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল তাঁদের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগের ভিত্তিতে এ রাজ্যের পুলিশ নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়। মুর্শিদাবাদের ওই বাসিন্দারা যে ভারতীয় নাগরিক, তাঁদের যে বৈধ সব কাগজপত্রই আছে, তা প্রমাণিত হওয়ার পরেই মুর্শিদাবাদ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের ভিত্তিতে বিএসএফ ওই চারজনকে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। অর্থাৎ নাগরিকত্বের প্রমাণ দেওয়া সত্বেও মুম্বই পুলিশ এবং বিএসএফ তাঁদের জবরদস্তি ‘বাংলাদেশি’ বলে ‘পুশব্যাক’ করেছিল। সোজা কথায়, বাংলাভাষা এবং মুসলিম ধর্ম পরিচয় দেখেই মুম্বইয়ের পুলিশ এবং বিএসএফ বাংলাদেশি নির্ধারণ করে ফেলেছেন। এরপর এদেশের বুকে আইন-আদালত বিচার প্রক্রিয়ার আর কোনও অবকাশ রয়েছে কিনা প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। দেশজুড়ে বিজেপি এবং আরএসএস যে কথা প্রচার করছে, বাংলাভাষী, মাছ খাওয়া, ধর্মপরিচয়— এগুলির সঙ্গে তারা বাংলাদেশি পরিচয়কে জুড়ে দিচ্ছে। সঙ্গে প্রচার করছে ঘৃণা ও বিদ্বেষ। এই ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ দেশের পক্ষে বিপজ্জনক, সন্ত্রাসবাদী বলে দেখানো হচ্ছে। এর আগে গুজরাত থেকেও এভাবে বাংলাদেশি নামে বাঙালিদের আগরতলা দিয়ে বিতাড়ন করা হয়েছিল। এবার কোচবিহার সীমান্ত দিয়ে সেই চেষ্টা করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মানুষ থাকেন। বাংলার মানুষও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছেন। ভারতের সংবিধান অনুসারে দেশের যে কোনও রাজ্যের মানুষ যে কোনও রাজ্যে যেতে পারেন, থাকতেও পারেন। সংবিধানের সেই নির্দেশকে অমান্য করে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ওপরেই আঘাত হানা হচ্ছে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির প্রশাসন এবং বিএসএফ-কে ব্যবহার করে।

রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে মহারাষ্ট্র ও গুজরাত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আইনমাফিক পদক্ষেপের হুমকি দেওয়ার পরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। অনুপ্রবেশের নাম করেও রাজনীতির খেলা চলছে। বাংলাদেশি বিতাড়নের নামে সম্প্রতি মহারাষ্ট্র থেকে বাংলাভাষিদের চিহ্নিত করে জোর করে বাংলাদেশে পাঠানোর ঘটনা শুধু নিন্দনীয় নয়, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এভাবে প্রশাসনের মস্তান সুলভ ব্যবহারের প্রতিবাদেরও প্রয়োজন আছে। নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের পাশাপাশি মানবাধিকারের ওপরেও এটা আঘাত। ‘পুশব্যাক’ নাম দিয়ে পুলিশ ও বিএসএফ-এর এই অত্যাচারের নেপথ্যে যে রাজনৈতিক খেলা, তা এখন আরও একবার খোলাখুলি স্পষ্ট হয়ে উঠল। অনুপ্রবেশের পর সেই রাজ্যে ভোটার তালিকায় নাম তুলে বৈধতা গ্রহণের চেষ্টায় বাদ সেধেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই অবৈধ কাজে মদত দানের জন্য নির্বাচন কমিশনকে কাঠগড়ায় তুলেছে বিরোধী দলগুলিও।

News Hub