পুলওয়ামার সত্য উন্মােচিত

পাকিস্তানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরি সম্প্রতি জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে সগর্বে ঘােষণা করলেন, কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হানা প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের একটি বড় সাফল্য।

Written by SNS Kolkata | November 2, 2020 11:53 am

ফাওয়াদ চৌধুরি (Photo: Twitter/@fawadchaudhry)

একজন মানুষ কোনও বড় ধরনের অপরাধে লিপ্ত হওয়ার পর, তা দীর্ঘ সময় চেপে রাখলেও, কোনও না কোনও সময় সে তা অকপটে স্বীকার করে। আবার বীরত্বও জাহির করে। পাকিস্তান নামক দেশটি এমনই ভারতের এক প্রতিবেশী, যে অপরাধ করেই চলেছে তার জন্মলগ্ন থেকে। কোনও সময় সেই অপরাধ স্বীকার করেও বসে, তার সঙ্গে জুড়ে দেয় বাহাদুরি। 

এই যেমন পাকিস্তানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরি সম্প্রতি জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে সগর্বে ঘােষণা করলেন, কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হানা প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের একটি বড় সাফল্য। পাকিস্তানের মদতেই এই হানা। পাকিস্তানের সব নাগরিক এই হানায় গৌরব বােধ করেন। 

এই দিন ফাওয়াদ আরও বলেন, আমরা ভারতের ভিতরে ঢুকে মার দিয়েছি। পুলওয়ামায় আমাদের সাফল্য মানেই, পাকিস্তানবাসীর সাফল্য। 

মন্ত্রীর এই নির্লজ্জ স্বীকারােক্তি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকেই কোয়দায় ফেলেছে। কারণ পাকিস্তান যে একটি সন্ত্রাসপ্রেমী রাষ্ট্র, সন্ত্রাসকে মদত দেওয়াই তার কাজ, আবার বেশ ভালাে ভাবে প্রমাণিত হয়ে গেল। কারণ তার মন্ত্রিসভার একজন সদস্য জোর গলায় বললেন, পুলওয়ামায় পাকিস্তানের সাফল্যের কথা। বিশ্বের সব দেশ জানল পাকিস্তান কীভাবে ভারতের বিরুদ্ধে নাশকতামূলক কাজ করতে জঙ্গিদের পুষে চলেছে, তাদের আর্থিক সাহায্য এবং অস্ত্র সরবরাহ করে চলেছে। 

পরে ওই মন্ত্রীকে এত সমালােচনায় পড়তে হয় যে, তিনি বাধ্য হন সুর পাল্টাতে। কিন্তু ইমরানের মন্ত্রীসাহেব কি ভুলে গেলেন ভারত যে প্রত্যাঘাত হানল বালাকোটে। ভারতের বিমানবাহিনী বালাকোটের ভিতরে ঢুকে জঙ্গি ঘাঁটিগুলি সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয় এবং অনেক জঙ্গি নিহত হয়। এটা ভারতের বিমানবাহিনীর কম কৃতিত্ব?

পরে স্বল্পকালীন বিমান যুদ্ধও হয় এবং পাকিস্তানে নিয়মনীতি ভেঙে আমেরিকার দেওয়া এফ-১৬ বিমান ব্যবহার করে। ভারতীয় বিমান এই বিমানটিকে ভূপতিত করে। এই বিমানের উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান পাকিস্তানের সেনাদের হাতে ধরা পড়েন। পরে উদারতা নয়, অভিনন্দনকে সসম্মানে ছেড়ে না দিলে, ভারত পাকিস্তানকে আক্রমণ করবে, এই ভয়ে অভিনন্দনকে ভারতের হাতে তুলে দেয়।

পাকিস্তান এখনও ধূসর তালিকায়। একমাত্র চিন পাকিস্তানের বড় বন্ধু এবং নানাভাবে তার উন্নতিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্বের প্রায় সব দেশই পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদকে মদত দেয়। ভারতের সঙ্গে সেই জন্মলগ্ন থেকেই, পাকিস্তান একটি বৈরি মনোভাব পোষণ করে চলেছে। তার প্রমাণ মেলে যখন দেখা যায় কাশ্মীর সীমান্তে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা ভারতের ভূখণ্ডে ঢুকে লাগাতার নাশকতামূলক কাজ করে যাচ্ছে। এমন দিন যাচ্ছে না, জঙ্গিরা ভারতের মাটিতে ঢুকে পড়ে নাশকতার কাজ করছে না। 

দুর্ধর্ষ ক্রিকেটার ইমরান খান যখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হলেন, তখন দিল্লির সাউথ ব্লকের আশা জেগেছিল যে তিনি ভারতের সঙ্গে প্রতিবেশী সুলভ আচরণ করবেন এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে যাতে উন্নতি হয়, তার জন্য একটি কার্যকরী ভূমিকা নেবেন। কিন্তু পরবর্তীকালে ইমরান খানের কার্যকলাপে বােঝা গেল, তিনিও ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কে উন্নতি হােক চান না। অথচ ভারত অনেকবার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে উন্নতির জন্য চেষ্টা করেছে। 

পুলওয়ামায় মর্মস্পর্শী ঘটনার পিছনে যে পাকিস্তানের হাত ছিল, তা তখনই জলের মতাে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ইমরান খান তা অস্বীকার করে বলেন, পাকিস্তান এই কাজ করতে পারে না। অথচ তার মন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে স্বীকার করলেন, পুলওয়ামার ঘটনা তাদেরই কাজ। পাকিস্তান দেশটি দু’টুকরাে হয়ে গেছে। পূর্ব পাকিস্তানকে হারিয়েছে– বাংলাদেশ এখন স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। সেই সঙ্গে তিনটি যুদ্ধে নাস্তানাবুদ হয়েছে। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবুও এই দেশটির শিক্ষা হল না। পাকিস্তানে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেও, সরকার চালায় পাক সেনাবাহিনী। ইমরান সেনাবাহিনীর হাতের পুতুল।