ছয় মাস আগে ৩৭০ ধারা বাতিল ও কাশ্মীরের মর্যাদার পরিবর্তনের পর পাকিস্তানের তৎপরতা ব্যুমেরাং হয়ে ফিরল। কাশ্মীর নিয়ে ইসলামিক সংস্থার (ওআইসি) বিদেশমন্ত্রী পরিষদের বৈঠক ডাকার জন্য ইসলামাবাদের অনুরােধ সৌদি আরব প্রত্যাখ্যান করায় ভারতের অভ্যন্তরীমণ বিষয় নিয়ে ইমরান খানের স্টাইলে পাকিস্তানের অতি সক্রিয় কুটনীতি মুখ থুবড়ে পড়ল। কাশ্মীর ইস্যুতে রাষ্ট্রসংঘকে প্রভাবিত করার জন্য পাকিস্তানের বিদেশ দফতরের প্রয়াস ব্যর্থ হওয়ার পর এটা একটা বড় ধাক্কা। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর হুঙ্কার, এমনকী কাশ্মীর নিয়ে পরমাণু যুদ্ধের হুমকিও দেশকে বেশি দূর এগিয়ে নিতে যেতে পারেনি।
এক কথায় বলতে গেলে ৫৭ সদস্যের ইসলামিক জোট পাকিস্তানকে পিছু হঠতে বাধ্য করেছে। ভাল করে খতিয়ে দেখলে বােঝা যায় এটা ইমরান খানের প্রতি একটা বিরাট ধাক্কা, যিনি সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় গিয়ে কাশ্মীর প্রশ্নে ওআইসি’র নীরবতার ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘কারণটা হল আমাদের কোনও আওয়াজ নেই, আমাদের মধ্যে পুরাে বিভাজন রয়েছে। কাশ্মীর নিয়ে ওআইসি’র বৈঠকেও আমরা সামগ্রিকভাবে একজোট হতে পারিনি।’
Advertisement
এটা খুবই স্পষ্ট যে কাশ্মীর নিয়ে দেশে ও আন্তর্জাতিক মঞ্চে ইমরানের বজ্রনির্ঘোষ বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে ওআইসি’র পরিধির সঙ্গে মানানসই নয়। কাশ্মীরের ব্যাপারে তিনি এককভাবেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। ইমরানকে বুঝতে হবে ক্রিকেট পিচের আগ্রাসন ভৌগােলিক কৌশলের ক্ষেত্রে কাজ করে না। বিদেশনীতির ব্যর্থতা শাসক পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের ওপরও ছাপ ফেলছে। সৌদি আরবের বার্তা ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডির সেনা সদর দফতরে প্রতিধ্বনিত হওয়া উচিত। পাকিস্তান ছাড়া বাকি ৫৬টি দেশ কাশ্মীর প্রশ্নে ভারতের নীতির ব্যাপারে নাক গলাতে অনাগ্রহী।
Advertisement
গত বছর আগস্ট মাসে ভারত কাশ্মীরের মর্যাদা বিলােপ করার পর পাকিস্তান ওআইসি’র বিদেশমন্ত্রীদের একটি বৈঠকের জন্য তৎপরতা চালিয়ে এসেছে। পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি সম্প্রতি বলেছেন, কাশ্মীর প্রশ্নে একটা বার্তা দেওয়ার জন্য এরকম বৈঠক জরুরি ছিল। ওআইসি’তে কোনও উদ্যোগ নিতে গেলে রিয়াধের সমর্থন খুবই জরুরি, কারণ এই সংস্থার ওপর সৌদি আরব ও অন্যান্য উপসাগরীয় দেশের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। পরিস্থিতি যা দাঁড়াল তাতে বােঝা যাচ্ছে রিয়াধের রাজপ্রাসাদ ইসলামাবাদকে একটা কড়া বার্তা দিয়েছে। জানা গেছে ওআইসি’র বিদেশমন্ত্রী পরিষদের বৈঠককে এড়ানাের জন্য সৌদি আরব অনেক প্রস্তাব দিয়েছে পাকিস্তানকে।
সৌদি আরব প্যালেস্তাইন ও কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে একটা যৌথ বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু ইসলামাবাদ বিদেশমন্ত্রী পরিষদের বৈঠক ও ইমরান খানের স্থির করে দেওয়া শর্তের ব্যাপারে অনড় থাকে। বােঝাই যাচ্ছে ইমরানের ইয়র্কার দেওয়ার চেষ্টা নীচু ফুলটসে পরিণত হয়েছে।
Advertisement



