• facebook
  • twitter
Sunday, 7 December, 2025

পহেলগামের যোগ্য জবাব

পাকিস্তান কাশ্মীর শান্ত এবং এখন পর্যটকদের ভিড় এবং ভারত ও জম্মু কাশ্মীর সরকারের নরম মনোভাব বুঝেই পহেলগামে জঙ্গি হানা সংগঠিত করার সুযোগটা নিল।

ঘটনাস্থল থেকে প্রাপ্ত দৃশ্য

ওঁরা বেড়াতে গিয়েছিলেন ভূস্বর্গ কাশ্মীরে। কাশ্মীর এখন শান্ত। কোনও অশান্তির খবর নেই। তাই বেশ কিছুদিন হল দেশবিদেশের পর্যটকদের ভিড়। আর যাঁরা বেড়াতে যান, তাঁরা কাশ্মীরের অন্যতম আকর্ষণ স্থান পহেলগামে একবার যাবেনই। কখনও এই উপত্যকা সাদা বরফের আস্তরণে ঢাকা থাকে। চারদিকে সবুজ সতেজ বৃক্ষরাজিতে ভরা। যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য। আর এখানেই সেই মর্মন্তুদ, হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটল।

পহেলগামের বৈসরণ উপত্যকায় পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জঙ্গিদের হানা। তারা বেছে বেছে ধর্মের পরিচয় জেনে ২৬ জন পর্যটককে বুলেটবিদ্ধ করে খুন করল। তাদের মধ্যে তিনজন ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের। জঙ্গিরা স্ত্রীদের সিঁথিতে সিঁদুর দেখে এবং তাদের সন্তানদের সামনেই এই তিনজনকে গুলি চালিয়ে ঝাঁঝরা করে দিল। তেমনই অন্য পর্যটকদেরও হিন্দু পরিচয় জেনে বুলেট বিদ্ধ করল। তাঁদের রক্তে ভেসে গেলসেই স্থান, যেখানে এই নারকীয় হত্যাকাণ্ড ঘটল। পর্যটকদের এই আকর্ষণীয় স্থান পহেলগাম এখন তাঁদের কাছে মরণফাঁদ হয়ে রইল। যে তিনজন বাঙালি পর্যটক নিহত হয়েছেন, তাঁদের কফিনবন্দি নিথর দেহ কলকাতায় এসে পৌঁছেছে।

Advertisement

তবুও এই হত্যালীলার পর দু-চারজন প্রাণে বেঁচে যেতেন যদি গুলিবিদ্ধ, রক্তঝরা পর্যটকদের চটজলদি কোনও চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হতো। কিন্তু এই পহেলগামে শান্তি বিরাজ করছে দেখে এখানে কোনও নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন ছিল না— ছিল না পুলিশও। আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানরা প্রায় এক ঘণ্টা পর যখন এই বৈসরণে এলো, তখন সব শেষ। তারা দেখতে পেল চারদিকে মৃতদেহ পড়ে রয়েছে— রক্তের ঢেউ খেলছে। বাঙালি এই তিন পর্যটকের স্ত্রীরা স্বামীদের নিথর দেহের ওপর পড়ে— কান্নার রোল। এই ভয়াবহ দৃশ্য দেখে নিরাপত্তারক্ষীরা জঙ্গিদের খোঁজে সঙ্গিন তাক করে ছুটে চলল। কিন্তু জঙ্গিরা যখন দেখল তাদের ওপর যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তা যথাযথভাবে পালন হয়েছে, তখন তারা হয়তো তাদের জঙ্গি ঘাঁটিতে ফিরে গেছে অথবা পাকিস্তানে চলে গেছে সীমান্ত অতিক্রম করে।
জঙ্গিরা এসেছিল মুখোশ পড়ে। মোট সাতজন জঙ্গি— কারওর সেনা পোশাক, কেউ আবার পুলিশের পোশাকে। চার জঙ্গি এই হত্যাকাণ্ড চালায়— অন্য তিন জন পাহারারত ছিল। স্ত্রীর সিঁথিতে সিঁদুর দেখে বাঙালি এক পর্যটককে গুলিকরে খুন করে। আরেক জঙ্গি চিৎকার করে বলল, ‘যাও মোদীকে গিয়ে বলো।’ যেখানে পর্যটকদের ভিড়, সেখানে তাঁদের নিরাপত্তার যাতে কোনও ব্যাঘাত না ঘটে, তার জন্য নিরাপত্তারক্ষীদের এখানে মোতায়েন করা উচিত ছিল। তা না করে রাজ্য প্রশাসন চরম গাফিলতির পরিচয় রাখল। এটা ভাবাই যায় না, যেখানে জঙ্গিরা সুযোগ পেলেই অতর্কিতে আক্রমণ চালাতে পারে, তা ভেবে প্রশাসন এই পহেলগামে নিরাপত্তা রক্ষীদের মোতায়েন করেনি। এই মারাত্মক গাফিলতি ও ভুলের চরম মাশুল দিতে হল জম্মু ও কাশ্মীর সরকারকে।

Advertisement

এখানে উল্লেখ্য, পাকিস্তান সেনাপ্রধান এক সপ্তাহ আগেই ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন। তার কয়েকদিন পরই এই জঙ্গিহানা ঘটল। সুতরাং পাকিস্তান সরকার নিখুঁত পরিকল্পনা করে, কাশ্মীর সরকারের গাফিলতি ও আত্মতুষ্টির পরিচয় পেয়ে, পহেলগামে এই জঙ্গিহানা ঘটল। যখন এই জঙ্গিহানা ঘটল, তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দু’দিনের সফরে সৌদি আরবে ছিলেন। সেখান থেকেই তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পহেলগামে পৌঁছতে। মোদীও তার সফরসূচি কাটছাঁট করে দিল্লি ফিরে আসেন। তিনিপহেলগামের জঙ্গিহানা এবং ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সংশ্লিষ্ট শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসে ঘটনার পর্যালোচনা করেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঘটনা নিয়ে আলোচনা করেন। পরে এক বিবৃতিতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পাকিস্তানকে এই ঘটনার জন্য দায়ী করে কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি পরে বলেন, পহেলগামের জঙ্গি হামলার সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। এবং তা দেওয়া হবে যথাসম্ভব তাড়াতাড়িই। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর হুঙ্কার, পাকিস্তান তার যোগ্য জবাব পাবে।

পাকিস্তান কাশ্মীর শান্ত এবং এখন পর্যটকদের ভিড় এবং ভারত ও জম্মু কাশ্মীর সরকারের নরম মনোভাব বুঝেই পহেলগামে জঙ্গি হানা সংগঠিত করার সুযোগটা নিল। অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় শীর্ষ কয়েকজন সেনার মতে, ভারতকে এর সমুচিত জবাব দিতে হবে এবং তা দিতে দেরি করা চলবে না। কারণ পাকিস্তান সরকার ও তার সেনাবাহিনী ভারত ও জম্মু সরকারের এই মনোভাব দেখে তার সুযোগটা নিল। ভারত যদি তার প্রত্যাঘাত করতে দেরি করে, তাহলে পাকিস্তান সরকার আবার জঙ্গি হানার আর একটা সুযোগ নেবে। সামরিক শক্তিকে ভারত এখন কোনওভাবেই পাকিস্তানের সামরিক শক্তি থেকে পিছিয়ে নেই। সুতরাং পহেলগামের জঙ্গি হানার যোগ্য জবাব ভারত দেবে। তা প্রাক্তন সেনাকর্তারা মনে করেন। তাই এখন দেখার, ভারত এখন কীভাবে এই জঙ্গি হানার প্রত্যুত্তর দেয়।

Advertisement