• facebook
  • twitter
Sunday, 16 February, 2025

বিরুদ্ধ স্বরের স্বীকৃতি

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, ‘জুলাই-বিপ্লবে শহিদদের শ্রদ্ধা জানাই। যাঁদের অসীম আত্মত্যাগ এক নতুন বাংলাদেশের সূচনা করেছে। তাঁদের আর্তনাদ ছিল— ‘আমরা ন্যায়বিচার চাই। নতুন বাংলাদেশ তাই স্বাভাবিকভাবেই ন্যায়বিচার চাইছে। সব নাগরিকদের জন্য তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদেরই।’

ফাইল চিত্র

রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারি, জামিন খারিজ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত সরকার। সংখ্যালঘুদের আইনি অধিকার ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কর্তব্য, তাও ভারতের মতো একাধিকবার মনে করিয়ে দিয়েছে আমেরিকা ও ব্রিটেন। বাইরে থেকে এই চাপ তো ছিলই, এবার ঘরের মধ্যে থেকে চাপ বাড়ছে শান্তিতে নোবেলজয়ী ইউনূস সরকারের উপর। নাম না-করে তাঁকে ‘রাজধর্ম’ পালনের কথা মনে করিয়ে দিলেন প্রবীণ কবি ফরহাদ মজহারের পর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘জুডিশিয়াল ইন্ডিপেন্ডেন্স অ্যান্ড এফিসিয়েন্সি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি বললেন, ‘দেশের কেউ যাতে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত না হয়, তা আমাদের নিশ্চিত করতেই হবে।’

বাধ্য হয়েই কিছুটা চাপে পড়ে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে আলাদা করে ভারতের বিদেশ সচিবের সঙ্গে বৈঠকে বসতে হয় বাংলাদেশকে। কিন্তু তারপরেও থামছে না বিরুদ্ধ স্বর।

বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ্যেই বলেছেন, ‘আইনজীবীরা সংবিধানের প্রথম সারির রক্ষক। আইনজীবীরা কণ্ঠহীনদের প্রতিনিধিত্ব করেন। ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠায় অসীম ভূমিকা রাখেন আইনজীবীরা। এঁরাই বিচারবিভাগ ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করেন।’ উল্লেখ্য, কয়েক দিন আগেই চিন্ময়কৃষ্ণের মামলার শুনানিতে কট্টরপন্থীদের হুমকির মুখে একজনও আইনজীবী ধৃত হিন্দু সন্ন্যাসীর হয়ে আদালত কক্ষে দাঁড়ানোর সাহস পাননি।

সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘর, সম্পত্তির উপর হামলার পাশাপাশি মন্দির ও মূর্তি ভাঙচুর এবং বিরুদ্ধ কণ্ঠস্বর রুখতে কট্টরপন্থীরা দেশজুড়ে অশান্তির আবহ সৃষ্টি করে চলেছে। আওয়ামি লিগ সমর্থক ও ঘনিষ্ঠ-দরদিদের চিহ্নিত করে হামলা হচ্ছে। হুমকির পর হুমকি। কখনও সরকারি, আবার কখনও পরোক্ষভাবে ক্রমাগত চাপের মুখে অব্শেষে দায়িত্ব ছাড়তে বাধ্য হলেন চট্টগ্রামের বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনুপম সেনকে। খ্যাতনামা সমাজবিজ্ঞানী এবং শেখ হাসিনা জমানায় শিক্ষকতার জন্য ‘একুশে পদক’ পাওয়া পাঁচ দশকের শিক্ষক অনুপম সেনকে এই মাসুল দিতে হল তাঁর আওয়ামি ঘনিষ্ঠতার জন্য। গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পরে শুক্লা রানি থেকে শুরু করে একাধিক শিক্ষক-অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে সেভাবেই অনুপমকেও নিশানা করা হল।

লাগাতার অশান্তির এই আবহে কবি ফরহাদ মজাহারের পর প্রধান বিচারপতির ‘বিরুদ্ধ স্বর’ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেপ্তারি নিয়ে সরকারি বৈঠকে প্রকাশ্যেই সরব হয়েছিলেন প্রবীণ কবি ফরহাদ মজহার। ‘ক্লোজড ডোর মিটিং’ থেকে ভাইরাল হয়ে যাওয়া ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল— চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ইউনূসের চোখে চোখ রেখে একের পর এক চোখা চোখা প্রশ্ন করছেন ফরহাদ। কেন জামিনের শুনানিতে সন্ন্যাসী কোনও আইনজীবী পেলেন না, তা নিয়েও প্রশ্ন করেন ফরহাদ।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, ‘জুলাই-বিপ্লবে শহিদদের শ্রদ্ধা জানাই। যাঁদের অসীম আত্মত্যাগ এক নতুন বাংলাদেশের সূচনা করেছে। তাঁদের আর্তনাদ ছিল— ‘আমরা ন্যায়বিচার চাই। নতুন বাংলাদেশ তাই স্বাভাবিকভাবেই ন্যায়বিচার চাইছে। সব নাগরিকদের জন্য তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদেরই।’

একই সঙ্গে একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা শহিদদেরও স্মরণে রাখার পরামর্শ দেন প্রধান বিচারপতি। অভিযোগ, বিএনপি ও জামায়াতের হাত ধরে চলা নয়া সরকার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ভুলিয়ে দিতে মরিয়া। নিশানায় রয়েছেন বঙ্গবন্ধুও। জাতীয় স্লোগান ‘জয় বাংলা’-র উপর কোপ পড়েছে। স্কুলপাঠ্য থেকে দেদার ছেঁটে ছবি বাদ দিয়েই নয়া নোট ছাপাবে ইউনূস সরকার। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি মনে করিয়ে দিলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতার জন্যই স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল।’