• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

একাই বলেন মোদী

দেশে সারা বছর খাদ্যপণ্য থেকে সবকিছুর মূল্য চড়া হারে বাড়লেও মোদীর দাবি দেশে মূল্যবৃদ্ধির হার একেবারে কমে গিয়েছে। তা মাত্র ২ শতাংশ।

সংসদে বিরোধীদের কথা বলতে দেন না। বিরোধীদের দাবি অনুযায়ী পহেলগামকাণ্ড ও অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার বিষয়েও কর্ণপাত করেন না। এমনইি স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব নিয়ে চলা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিরোধীদের মুখে তালা লাগিয়ে একতরফা ভাষণ দিয়ে গেলেন বাদল অধিবেশনের প্রথম দিনে সংসদ ভবনে প্রবেশের আগে। এই একতরফা ভাষণে সিঁদুর অভিযান থেকে শুরু করে অর্থনীতি ও মহাকাশ—সবই জায়গা পেল তাঁর বক্তব্যে। কিন্তু বিরোধীদের একটিবারও কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি।

সংসদ প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়েই পহেলগামের সন্ত্রাসবাসী হামলা ও সিঁদুর অভিযানের প্রসঙ্গ তুলে নিজের সাফল্যের ধারাবিবরণী দেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। পরে লোকসভায় ঢুকে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বেরিয়ে যান। ফলে বিরোধীরা সিঁদুর অভিযানের গাফিলতি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতা নিয়ে ওঠা প্রশ্নের কোনও উত্তরই পেলেন না।

Advertisement

বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদী সংসদকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাচ্ছেন। আমাদের কথা শোনার কোনও ইচ্ছা নেই তাঁর। বিরোধীশূন্য স্খানে একতরফা বক্তব্য রাখাই যেন তাঁর নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন।’

Advertisement

বিরোধীরা লোকসভা থেকে রাজ্যসভা সর্বত্র তোলপাড় করছেন অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আলোচনার দাবিতে। বিজেপি মন্ত্রীরা রাজনাথ সিং থেকে সংসদীয় মন্ত্রী কিরণ রিজেজু সিঁদুর অভিযান প্রসঙ্গে নানা কথায় সরকার আলোচনায় রাজি বলে জানালেও সংসদ কক্ষে বিরোধীদের কাউকে একটি শব্দও বলতে দেওয়া হয়নি। ফলে বিরোধীদের তুমুল বিক্ষোভে দফায় দফায় সংসদের দুই কক্ষে মুলতুবির পর সারাদিনের জন্য সংসদ মুলতুবি হয়ে যায়।

সংসদ প্রাঙ্গণে বিরোধীহীন দলীয় সাংসদদের কাছে আনুষ্ঠানিক ভাষণে সিঁদুর অভিযানের সাফল্যে বাদল অধিবেশনকে বিজয় উৎসব বলে বোঝালেন মোদী। এভাবে মোদীর ভাষণ দেওয়া প্রায় নজিরবিহীন ঘটনা হয়ে রইলো। তাঁর ভাষণে বিরোধীদের উত্থাপিত জরুরি প্রশ্নের কোনও জবাব দেওয়া হয়নি। কেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত-পাকিস্তানের সংঘর্ষ স্থগিতে তাঁর হস্তক্ষেপ দাবি করছেন, তা ভারতের পক্ষে অসম্মানজনক হলেও ট্রাম্প ২৪ বার মধ্যস্ততা করার কথা কেন বলে গেছেন তার কোনও জবাব ছিল না মোদীর। যদিও তিনি নিশ্চিত ছিলেন তাঁর ভাষণে কেউ প্রশ্ন তুলবে না। কারণ, সংসদে তিনি ভাষণ দেওয়ার ঝুঁকি নেননি। বিরোধীশূন্য স্থানে তিনি ভাষণ দিয়েছেন। তাঁকে দেখা গিয়েছে কোনও প্রশ্ন আসতে পারে এই আশঙ্কায় তিনি সাংবাদিক সম্মেলন পর্যন্ত করেন না।

বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি বিরোধী দলের নেতা। আমার অধিকার রয়েছে সংসদে নিজের বক্তব্য রাখার। আমাকেও কিছু বলতে দেওয়া হলো না। অথচ দেখা গেল বিরোধীদের কোনও কথা না শুনেই নিজের কথা বলে গেলেন মোদী। এটা সংসদীয় রাজনীতিতে নতুন এক পন্থার জন্ম দিল।’

পরে বিরোধীশূন্য সভায় মোদী ভারতের অর্থনীতির অভূতপূর্ব অগ্রগতি ঘটিয়েছেন বলে দাবি করেন। দেশে সারা বছর খাদ্যপণ্য থেকে সবকিছুর মূল্য চড়া হারে বাড়লেও মোদীর দাবি দেশে মূল্যবৃদ্ধির হার একেবারে কমে গিয়েছে। তা মাত্র ২ শতাংশ। দেশে ভাল বর্ষা হওয়ায় অর্থনীতি চাঙ্গা হয়েছে, খাদ্যপণ্যের দাম কমেছে, আর্থিক বৃদ্ধির হারও বেড়েছে। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রের রিপোর্ট বলছে চলতি বছরে আর্থিক বৃদ্ধির হার ১৫ মাসে সর্বাধিক কমে হয়েছে ৬.৭ শতাংশ। জলধারণ ক্ষমতা তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে কৃষির উন্নয়ন হবে। গত ১১ বছরে ভারত বিশ্বের তৃতীয় উন্নত দেশ হয়ে উঠেছে বলে মোদীর দাবি। অথচ দারিদ্র নিয়ে বিশ্ব ব্যাঙ্কের রিপোর্ট বলছে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নিচে অবস্থান ভারতের। যদিও এই রিপোর্ট মানতে নারাজ মোদী সরকার।

Advertisement