বিনয় আর হাসি

জনসঞ্জগকালে যার বেশি প্রয়োজন তা হল বিনয় ও মুখে হাসি। ওই দুইকে সম্বল করে প্রার্থীরা এখন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন– যাকে চেনেন না, জানেন না, কোনওদিন দেখেননি, তাঁকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরছেন, অথবা হাত চেপে ধরে জিজ্ঞাসা করছেন, ‘কেমন আছেন, সব ভালো তো?’ হাত ছেড়ে দেওয়ার আগে মোক্ষম কথাটা না বললে চলে কি করে? ‘আপনার সমর্থন পাব তো?’

Written by SNS March 26, 2019 12:01 pm

প্রতীকী চিত্র (Photo: IANS)

এখন চলছে জনসংযোগ পর্ব। বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা নিজ নিজ কেন্দ্রে ঘুরছেন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হতে। যাঁরা পুনরায় প্রার্থী হয়েছেন তাঁদের স্ব স্ব কেন্দ্রের আটঘাট সব চেনা। এলাকার কিছু মানুষজনের সঙ্গেও সামান্য পরিচিতি রয়েছে, তা শুধু ঝালিয়ে নেওয়া। আর যাঁরা নতুন মুখ, অর্থাৎ প্রার্থী তাঁদের অবশ্য কেন্দ্রকে ভালো করে চিনতে হবে, জনসংযোগ স্থাপন করতে হবে। এলাকার সমস্যা, অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি বিষয়ে ওয়াকিবহাল হতে হবে।

জনসঞ্জগকালে যার বেশি প্রয়োজন তা হল বিনয় ও মুখে হাসি। ওই দুইকে সম্বল করে প্রার্থীরা এখন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন– যাকে চেনেন না, জানেন না, কোনওদিন দেখেননি, তাঁকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরছেন, অথবা হাত চেপে ধরে জিজ্ঞাসা করছেন, ‘কেমন আছেন, সব ভালো তো?’ হাত ছেড়ে দেওয়ার আগে মোক্ষম কথাটা না বললে চলে কি করে? ‘আপনার সমর্থন পাব তো?’

প্রার্থীকে আশ্বাস দিয়ে তিনি বলবেন, ‘অবশ্যই’। অথচ তিনি ইতিমধ্যেই ঠিক করে রেখেছেন ইভিএম মেশিনে জ্বলজ্বল করে থাকা কোন প্রার্থীর প্রতীকে তাঁর আঙুলটা ছোঁয়াবেন। তাতে কী? আশ্বাস দেওয়া তো ভদ্রতা, সৌজন্যের প্রকাশ!

অনেকেই আবার মুখ খুলে প্রার্থীদের শুনিয়ে দেন, ‘জিতলে আবার দেখা পাব তো?’ কারণ তাঁদের অনেকেরই তিক্ত অভিজ্ঞতা এর আগে যিনি জিতেছিলেন, তাঁকে এলাকায় কোনওদিন দেখতে পাওয়া যায়নি। সংসদের একটি সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য তাঁকে দিনের পর দিন ঘুরতে হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা কোনওদিন ভোলার নয়। ভোট এলেই তা আরও বেশি করে মনে পড়ে। এসব ভোটারদের মনের কথা। বিপদে আপদে একজন জনপ্রতিনিধির সাহায্য পেলেও মানুষের উপকার হয়। এটুকু একজন সাংসদ অথবা এমএলএ-র কাছ থেকে আশা করা যেতেই পারে। কিন্তু সেই আশাই যে পূরণ হয় না।

ভোট এলেই, দুয়ারে যখন প্রার্থীরা এসে এক মুখ হাসি নিয়ে দাঁড়ান, তখন বাড়ির কর্তার এই কথাটাই বেশি করে মনে পড়ে। হাসি দিয়ে ভোট চাওয়া যায়। তারপর হাসিমুখে ভোটারদের সুখদুঃখের ভাগী হয়ে তাদের নানা সমস্যা মেটানোর জন্য চেষ্টা করলে সমাজের প্রভূত কল্যাণ সাধিত হয়। এমন অনেক জনপ্রতিনিধি আছেন, ভোটে জেতার পর তারা আর কেদ্রমুখী হন না। এলাকার নানা সমস্যা থাকলেও তার সমাধানে এগিয়ে আসেন না। অথচ একজন সাংসদের দায়দায়িত্ব অনেক বেশি। কারণ তিনি সাত সাতটি বিধানসভা আসনের প্রতিনিধি। এই সাতটি কেন্দ্রের সমস্যা সম্পর্কেও তাঁর সচেতন থাকা জরুরি। কিন্তু বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধিই তাঁদের দায়দায়িত্ব এড়িয়ে চলেন। পরের ভোটে দল তাঁকে প্রার্থী করলে, আবার যে ভোট চাইতে তাঁদের কাছে আস্তে হবে সেই কথাটিই তাঁরা ভুলে যান। তবে সবাইকে এক পংক্তিতে ফেলা যাবে না। এমন সাংসদ আছেন, যাঁরা নিজ নিজ কেন্দ্রের সমস্যা নিয়ে ওয়াকিবহাল এবং তার সমাধানে এগিয়েও আসেন।

লোকসভার ৫৪৩ আসন। সাংসদরা যদি তাঁদের নিজ নিজ কেন্দ্রের উন্নতির জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগ করেন, তাহলে দেশের অনেক উন্নতি সম্ভব। উন্নয়নের কাজের জন্য সাংসদরা নির্দিষ্ট অর্থ পান- তা অনেকেই যথাসময়ে খরচ করতে পারেন না। আবার এমন কিছু সাংসদ পাওয়া যাবে যাঁরা পুরো টাকাটাই কেন্দ্রের কল্যাণের কাজের জন্য খরচ করেন। তাঁরা মানুষের সমর্থন, মানুষের ভালোবাসা সবসময়ই পান।

এখনও বড় বড় দলের মাথারা প্রচারে নামেননি। কোনও কোনও দলের প্রার্থী তালিকাও সম্পূর্ণ হয়নি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, যিনি আবারও বারাণসী কেন্দ্রের প্রার্থী এবং তাঁর ভোটযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি, যিনি গুজরাতের গান্ধিনগরের প্রার্থী, এখনও জনসভা শুরু করেননি। প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গে আসছেন। তিনি ব্রিগেডের সভায় এপ্রিলের তিন তারিখে ভাষণ দেবেন বলে কথা আছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রচারে নামছেন এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই। জনসভায় ভাষণ দেবেন অন্যান্য দলের শীর্ষ নেতারাও। আর তখনই সারা ভারতে ভোটের হাওয়া তীব্র বেগে বইতে শুরু করবে।

কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধি সম্প্রতি মালদায় একটি বড় সভা করে গেলেন। এই অঞ্চলে ভোটের উত্তাপ বাড়ল ঠিকই, কিন্তু তারপর আর কোনও শীর্ষ নেতার সভা নেই।

নতুন যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের ইতিমধ্যেই মধুর অভিজ্ঞতা হয়েছে। এঁদের মধ্যে দু’জন রূপালি পর্দার– প্রার্থী হয়েছেন তৃণমূলের। তাঁরা তাঁদের কেন্দ্রের যেখানেই যাচ্ছেন, মানুষের ভিড় উপচে পড়ছে। সিনেমার পর্দায় দেখা নায়িকারা হঠাৎ তাঁদের সামনে– দেখার কৌতূহল তো বাড়বেই।