সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায়
মমতাদেবীর নাম-ই এখন বেশ একটা নেশার বস্তু। ইদানীং এ রাজ্যের কতিপয় রাজনৈতিক দল এবং অজস্র মানুষ ঘুম থেকে উঠেই মমতাদেবীর ‘নাম’ নিয়ে নেশা শুরু করেন।
কার্ল মার্কস বলেছিলেন— ধর্ম হচ্ছে আফিমের নেশার মতো। খোদ শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের ভগবানের ‘নামে’ এমন নেশা হতো যে, তাঁর পরণের কাপড় ঠিক থাকত না। তিনি বেহুঁশ হয়ে যেতেন। ড্রাগের সেবনকারিরা যেমন দু’তিন পুরিয়া না খেলে বা গন্ধ না শুঁকলে বাঁচতে পারেন না, ‘নাম-ডাক’-ও তেমন নেশার জিনিস।
নবদ্বীপে মহাপ্রভু চৈতন্যদেব একদা ‘হরিনাম’ সংকীর্তনের প্রাবল্য সৃষ্টি করেছিলেন। এখন দেখি ঘুঁটে কুড়োনিও ঘুঁটে দেয়া পাঁচিলের সামনে ভাঙা প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে নেচে কুঁদে মমতাদেবীকে গালি দিচ্ছেন। কেউবা লউয়ের মাচা থেকে ঝপাং করে লাফ দিয়ে নেমে মমতাদেবীর কণ্ঠস্বর নকল করে তাঁকে এন্তার গালিগালাজ করছেন।
এছাড়া আদালতে কোনও পসার নেই এমন বদখদ চেহারার উকিল ফাটা বাঁশের মতো গলার স্বরে মুখ বিকৃত করে মমতাদেবীর নামে জ্বালময়ী ভাষণে মগ্ন। উদ্দেশ্য যদি দু’একটা কাজ জোটে।
নাক টিপলে দুধ পড়ে, এমন শিশু শিল্পীরাও মমতাদেবীর নামে গালমন্দ করে সিংহ বিক্রমে হুঙ্কার ছাড়ছেন।
এইভাবে জনমনে হারিয়ে যাওয়া অভিনেতা অভিনেত্রী, গায়ক-গায়িকা, অনেকেই সকাল থেকে মমতাদেবীকে শাপ-শাপান্ত করে বাঁচতে চাইছেন। এছাড়া কিছু ভুঁইফোড় নেতা-নেত্রী-যারা পাড়া থেকে পাঁচজন মানুষকেও জোটাতে সক্ষম নন, তারা সাতসকালে দোকানের ঝাঁপ খুলেই মমতাদেবীর নামে শরীর গরম করতে থাকেন। টেস্ট টিউবের বেবি আর ইউটিউবের নেতা এখন সমার্থক শব্দ। স্বামী-স্ত্রীর দৈহিক সম্পর্ক ছাড়াই যেমন নারী গর্ভধারণ করছেন, তেমনি জনতার সঙ্গে সম্পর্কহীন স্বকল্পিত নেতারা শুধুমাত্র ইউটিউবে মমতাদেবীকে তুলোধনা করেই নেতা হওয়ার স্বপ্নে মশগুল।
শোনা যায়, পুলিশ হেফাজতেও নাকি নেশাখোরেরা নেশার বস্তু না পেলে গারদে কপাল ঠুকতে থাকেন। নেশার এমন মাহাত্ম্য। ছবির সমালোচকরা বলেন, শুধুমাত্র অমিতাভ বচ্চনের ছবি হিট্ হয় না। সঙ্গে প্রেম চোপড়া বা অমরীশ পুরীকেও লাগে। তাই শত্রু না থাকলে যেমন রাজনৈতিক দল লড়তে পারে না, শত্রুদের ‘নামে’ গালমন্দ আর কুৎসা-ভর্ৎসনা করেই তেমন অজস্র মানুষের অস্তিত্ব রক্ষা হয়। ‘মমতাদেবী’ হচ্ছেন সেই ‘নাম’। যাঁর নাম নিয়ে ইদানীং বহু মানুষ করে-কম্মে খাচ্ছেন। মমতদেবীও এসব বোঝেন না তেমনটি নয়! আসলে তাঁর দয়ার শরীর। কারণ—এই মাগ্গি-গণ্ডার বাজারে কাজ পাওয়া বড় শক্ত। তাই তাঁর ‘নামে’ গালি গালাজ-শাপ শাপান্ত করে কারও যদি দু’পয়সা আয় হয়, তাতে তিনি বাদ-সাধেন না।
তিনি যে মমতাময়ী।।