মোদীর জমানায় উত্তরপ্রদেশ জুড়ে চলছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের হিন্দুত্বের জিগির তোলার অভিযান। এতে তারা এবার সরাসরি আদালতকেও ব্যবহার করছে। শুরু হয়েছে মসজিদে মসজিদে মন্দির সমীক্ষার জিগির তুলে প্রচার। এবার আদালত চত্বরে হিন্দুত্বের জিগির তুলতে সঙ্ঘের অন্যতম শাখা বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মঞ্চে উঠে বিচারপতি শেখরকুমার যাদব সঙ্ঘের সুরে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়িয়ে উসকানি ভাষণ দিয়েছেন। আদালত চত্বরের মধ্যে হাইকোর্টের একজন কর্মরত বিচারপতি কীভাবে সঙ্ঘের মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্ররোচনামূলক ঘৃণা ভাষণ দিতে পারেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিচারপতি সকল সম্প্রদায়ের প্রতি নিরপেক্ষতা, বিচারপতির পেশায় যে শপথ নেন তার প্রতি বিশ্বস্ততা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। গত বছর ৮ ডিসেম্বর এলাহাবাদ হাইকোর্টের লাইব্রেরি প্রাঙ্গনে সভার আয়োজন করেছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদের আইনজীবী শাখা। সেই সভায় সঙ্ঘের সুরেই বিচারপতি যাদব যে ভাষণ দিয়েছেন, তা বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে।
এলাহাবাদ হাইকোর্টে কর্মরত বিচারপতি শেখরকুমার যাদব হিন্দুত্ব বাহিনীর মঞ্চে উঠে উসকানিমূলক ঘৃণা ভাষণ দেওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নাকে চিঠি দিয়েছেন শীর্ষ আদালতের প্রবীণ আইনজীবীরা। আবেদনকারী ১৩ জন বরিষ্ঠ আইনজীবীর মধ্যে রয়েছেন ইন্দিরা জয় সিং, আস্পি চিনয়, নভরোজ সীরভাই, আনন্দ গ্রোভার, চান্দের উদয় সিং, জয়দীপ গুপ্ত, মোহন ভি কাটারকি, শোয়েব আলম, আর ভাইগাই, মিহির দেশাই, জয়ন্ত ভূষণ, গায়েত্রী সিং, অভি সিং।
Advertisement
চিঠিতে প্রধান বিচারপতি খান্নাকে দ্রুত সিবিআই নোটিশ জারি করে বিচারপতি যাদবের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে তদন্তের পর ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। চিঠিতে আইনজীবীরা বলেছেন, বিচারপতি যাদব সরাসরি ঘৃণা ভাষণে দেশে সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরি করেছেন, যা সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির বিরোধী। সাম্প্রদায়িক ঘৃণার উসকানি আইনবিরোধী। তা চরম ফৌজদারি অপরাধ। তাই এতে বিচারপতির দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে আইনজীবীরা মনে করেন।
Advertisement
বিচারপতি যাদবের ভাষণ আদালতে কর্মরত বিচারপতির কাছে কাম্য নয় বলে জানান স্বাক্ষরকারী আইনজীবীরা। তাঁরা চিঠিতে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের বিচারপতি যাদবের এলাহাবাদ হাইকোর্টে বিচারপতির নিয়োগে তাঁর আপত্তির কথা উল্লেখ করেন। চিঠিতে তাঁরা আরও জানান, চন্দ্রচূড় সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শদাতা বিচারপতি হিসাবে তৎকালীন প্রধান বিচারপতিকে যাদবের সঙ্গে সঙ্ঘের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রয়েছে জানিয়ে তাঁকে হাইকোর্টে বিচারপতি নিয়োগ করায় আপত্তি জানান। একই সঙ্গে তিনি যাদবের বিচারপতি নিয়োগ করায় আপত্তি জানান। একই সঙ্গে তিনি যাদবের বিচারপতি হিসাবে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে বলে জানান। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রয়েছে জানিয়ে যাদব হাইকোর্টে বিচারপতি নিয়োগের উপযুক্ত নয় বলে চন্দ্রচূড় নোট দিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতিকে। তাঁর আপত্তি তখন মানা হয়নি।
আইনজীবীদের চিঠিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সব্যসাচী মুখার্জির বিচারপতি ভি রামস্বামীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান গ্রহণের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। বিচারপতি মুখার্জি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি রামস্বামীর দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তদন্তে অনুমতি দিয়ে বলেছিলেন, ‘কোর্টের বিচারপতিকেও আইন মেনে চলতে হবে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। তাঁর দেশের যে কোনও নাগরিকের মতোই আইনের শাসন মেনে চলতে বাধ্য। তাই কোনও বিচারপতির আচরণ যদি নাগরিকদের মনে বিচারপতি আইন মেনে চলছেন না বলে ধারণার জন্ম দেয়, তবে নিশ্চয় সেই বিচারপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
এক বিচারপতির দুর্নীতি ও বেআইনি কাজ বন্ধে শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি সব্যসাচী মুখার্জি যে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, চিঠিতে তাঁর সেই পদক্ষেপের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আইনজীবীরা বিচারপতি যাদবের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর পদক্ষেপের কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
Advertisement



