• facebook
  • twitter
Wednesday, 23 April, 2025

শিল্পে বিনিয়োগ কমছে

ভারতের কর্মক্ষেত্রে উদ্বেগজনক বিষয় হল শিল্প ও পরিষেবা ক্ষেত্রে কাজ না মেলায় ফিরে গিয়ে কম মজুরির কৃষি ও কৃষি সংক্রান্ত কাজে যোগ দেওয়া।

ফাইল ছবি

কাজের জগতে হাহাকারের পাশাপাশি শিল্পে বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যাওয়া নিয়ে সম্প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ)। ওই সংস্থার ‘আর্টিকেল কনসালটেশন’ রিপোর্টে বলা হয়েছে, অর্থ উপার্জন নয়, ভারতে গৃহস্থের বিনা মজুরির কাজ বিপুল হারে বাড়ছে।

ভারতে বেসরকারি বিনিয়োগের অনিশ্চয়তা রিপোর্টে বলা হয়েছে, করোনা মহামারীর সময়ে ভারতে লকডাউন জারি হওয়ায় সব বন্ধ থাকার ফলে শিল্পে এক চরম দুর্দিন নেমে এসেছিল। সেই সময় ২০২০ সালের মে মাসে অনিশ্চয়তা সূচক বৃদ্ধি পেয়ে ভারতের স্থান হয়েছিল ১৬৮ পয়েন্ট। এরপর সব স্বাভাবিক হলে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে অনিশ্চয়তার হার কমে সূচক নেমে আসে ৩৩ পয়েন্টে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফের বাড়ছে অনিশ্চয়তার সূচক পয়েন্ট। তা বেড়ে হয়েছে ১৪৩ পয়েন্ট। ফলে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে আইএমএফ-এর রিপোর্টে। মূলত শিল্পে মন্দা, সরকারি এবং বেসরকারি বিনিয়োগ কমে আসা, মানুষের হাতে টাকা না থাকায় অনেকটা মহামারীর মতো সংকটজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এতেই অনিশ্চয়তার পয়েন্ট বেড়েছে।

রিপোর্টে বেসরকারি বিনিয়োগের সঙ্গে কর্মসংস্থানের সম্পর্ক উল্লেখ করে বলা হয়েছে, দেশে বিনিয়োগ কমে গিয়ে কর্মসংস্থানের সংকট দেখা দিয়েছে। এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, ভারতে নতুন নতুন শ্রমজীবী মানুষ কাজের বাজারে আসায় সরকারের সমীক্ষায় ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হচ্ছে যে, কাজে অংশগ্রহণের হার (এলপিআর) বাড়ছে। এলপিআর বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে আইএমএফ জানাচ্ছে, কাজে অংশ বেড়েছে, তবে সেই কাজ অর্থ উপার্জনের কোনও কাজ নয়। সবটাই পরিবারে বিনা মজুরির কাজ। তাতে নিজস্ব স্বনির্ভর প্রকল্পের কাজ রয়েছে, যাতে বিনা মজুরিতে কাজ করে যেতে হয়। তার প্রভাব পড়ছে বাজারে। মানুষের আয় কমে যাওয়ায় বাজারে চাহিদা কমে গিয়েছে। শিল্পের বাজারের সংকট দেখা দেওয়ায় অনেকেই শিল্পে নতুন বিনিয়োগের ঝুঁকি নিচ্ছে না। বেহাল অর্থনীতিতে বাজারে অর্থ উপার্জনের মতো নতুন কাজ নেই। আইএমএফ রিপোর্টে সে কথারই উল্লেখ করা হয়েছে। মোদী সরকার এতদিন এলপিআর হার বেশি দেখিয়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির দাবি করে এসেছে। আসলে তা পরিবারে বিনা মজুরির কাজের অংশ বৃদ্ধি। রিপোর্টে সেটাই স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

ভারতের কর্মক্ষেত্রে উদ্বেগজনক বিষয় হল শিল্প ও পরিষেবা ক্ষেত্রে কাজ না মেলায় ফিরে গিয়ে কম মজুরির কৃষি ও কৃষি সংক্রান্ত কাজে যোগ দেওয়া। এমন ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে, বিনা মজুরির গৃহস্থের কাজও। নতুন বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় নতুন শিল্পের বিকাশের গতি কমেছে। বেসরকারি ক্ষেত্রে ভালো মানের চাকরিও কমেছে।

ভারতে বেসরকারি বিনিয়োগ বা কর্পোরেট বিনিয়োগ বৃদ্ধির হার খুব কমে গিয়েছে। চলতি বছরে বিনিয়োগের হার খুবই খারাপ। দেশে ২০২২-২৩ সালে কর্পোরেটের শিল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধির হার কমে হয়েছিল জিডিপি-র ২১ শতাংশ। এক বছর বাদে ২০২৩-২৪ সালে শিল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধির হার কমে হয়েছে জিডিপি-র ১৩ শতাংশ। আইএমএফ রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিনিয়োগে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, উৎপাদন শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নতুন মেশিন ও নানা আধুনিক যন্ত্রপাতিতে বিনিয়োগ সবসময় বাড়তে থাকে। এবারে দেখা গেল বিনিয়োগ বৃদ্ধির কোনও লক্ষণ নেই। নতুন মেশিন যন্ত্রপাতিতে বিনিয়োগ কমা সঙ্গে দেখা গেল, উৎপাদন শিল্পে তার উৎপাদন ক্ষমতার পুরো ব্যবহার হচ্ছে না। শিল্পে উৎপাদন ক্ষমতার ৭৫.৮ শতাংশ মাত্র ব্যবহার হচ্ছে। পুরো সময়ের উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহার না হওয়ায় শিল্পে কর্মী ছাঁটাই বাড়ছে। এতে মানুষের আয় কমে যাওয়ায় বাজারে ভোগ্যপণ্যের বিক্রি কমেছে। মানুষের হাতে টাকা না থাকায় ভোগ্যপণ্য ও পরিষেবা তাঁরা কিনতে পারছেন না। এর ফলে বাজারে মন্দা নেমেছে। এই অবস্থায় শিল্পে নতুন বিনিয়োগের কোনও যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না লগ্নিকারীরা।
দেশে বিদেশি বিনিয়োগও আসছে না। আবার ভারতীয় শিল্প সংস্থাগুলির বিদেশে তাদের বিনিয়োগের পরিমাণও কমছে। ২০২০ সালে ভারতীয় শিল্পের বিদেশে বিনিয়োগের হার ছিল মোট বিনিয়োগের ৬.৫ শতাংশ। তা ২০২৩ সালে কমে হয়েছে মাত্র ২ শতাংশ।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘শুল্ক যুদ্ধ’ মোদীর উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে। বিদেশি লগ্নিকারকরাও বিনিয়োগের আগে ভাবছেন। তাঁরা ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। দেশে বিদেশি লগ্নি কমে আসার এটাও অন্যতম কারণ।