• facebook
  • twitter
Friday, 19 December, 2025

ভারতের চাল-পেঁয়াজ

ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি সম্প্রতি বাংলোদেশের বিদেশ সচিবের সঙ্গে বৈঠক কালে বাংলাদেশের তদারকি সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ বন্ধের, কারণ তারাও বাংলাদেশের নাগরিক।

প্রতীকী চিত্র

ভারতের পাঠানো চালের ভাত বাংলাদেশের বিএনিপি নেতাদের হজম হবে তো? পেঁয়াজ না হলে তাঁদের নাস্তা চলে না, সে পেঁয়াজও পাঠাল ভারত। বিএনপি নেতাদের আস্ফালন—উত্তর-পূর্ব ভারতের সব রাজ্য বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করা, চারদিনের মাথায় কলকাতা দখল, বিহার ও ওড়িষাও সংযুক্তিকরণের দাবি, এইসব কথাগুলি যাঁরা বলেছেন, তাঁরা তখন ভারতের পাঠানো চাল-পিঁয়াজ-ডিম বর্জন করার ফতোয়া জারি করল না কেন? যাঁরা বড় গলায় এইসব উক্তি করে বাংলাদেশের মানুষদের ভারত বিদ্বেষী করে তুলেছিলেন। ভারতের কৃষি পণ্য ছাড়া যে, বাংলাদেশের একদিনও চলে না, তাদের আবার বর্তমান মিত্র দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে গলাগলি করে ভারতের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করা মানায় কি?

বিএনপি নেতারা প্রকাশ্যে ভারতীয় দ্রব্য বর্জন করার ডাক দিয়েছেন। প্রকাশ্য এক জনসমাবেশে ভারত থেকে কেনা শাড়ি পুড়িয়েছিলেন। তাঁদের আবার ভারত বিরোধিতার কথা মানায় কি? ভারতের প্রসাধনী দ্রব্যে বাংলাদেশের দোকানগুলি ভরা। ভারতের ফল না হলে ওদের চলে না। সেই সব নেতারা যাঁরা গর্ব ভরে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের যোগসাজশে যুদ্ধের হুমকি দিয়ে বাজার গরম করেছিলেন, ত্রিপুরা পর্যন্ত লং মার্চ করেছিলেন তাঁরা এখন মুখ লুকোবেন কোথায়। ভারত যখন এত উদারতার পরিচয় দিচ্ছে, তখন বাংলাদেশে ভারত বিরোধিতা কিন্তু থেমে নেই। থেমে নেই সংখ্যালঘু তথা বিশেষ করে হিন্দুদের উপর অত্যাচার নিপীড়ন। তাঁদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে সর্বস্ব লুট করা, মন্দির ভাঁঙা, মূর্তি ভাঁঙা বিরামহীন ভাবে চলছে। যাঁদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তাঁরা সব হারিয়ে এখন সীমান্তে এসে জড় হয়েছেন পশ্চিমবাংলায় ঢোকার জন্য। বিএসএফ তাঁদের আটকে রেখেছে। কিন্তু কাঁটাতারহীন সীমান্ত দিয়ে দালালদের সাহায্যে অনেকেই ইতিমধ্যে পশ্চিমবেঙ্গর সীমান্ত জেলাগুলিতে এসে আশ্রয় নিয়েছে।

Advertisement

ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি সম্প্রতি বাংলোদেশের বিদেশ সচিবের সঙ্গে বৈঠক কালে বাংলাদেশের তদারকি সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ বন্ধের, কারণ তারাও বাংলাদেশের নাগরিক। তাদের নিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয়। তা দেখা বর্তমান সরকারের দায় দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু ভারতের বিদেশ সচিব দেশে ফিরে আসার পর আশা করা গিয়েছিল বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার কমবে। কিন্তু তা কমেনি বরং প্রতিদিনই কোনও না কোনও ঘটনা ঘটছে। বড়দিনের দিন একটি খ্রিষ্টান ধর্ম অবলম্বনকারী পরিবারের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। একজন গৃহবধূকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা এখন প্রতিটি দিন আতঙ্কে কাটাচ্ছে। মহম্মদ ইউনুস খানের সরকার এখন মৌলবাদী, পাকিস্তানপন্থী ও জামাত ইসলামীদের হাতের পুতুল। সুতরাং তিনি সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ বন্ধ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ।

Advertisement

বাংলাদেশে এইসব অনাকাঙ্খিত ঘটনাবলী সত্ত্বেও, ভারত বাংলোদেশের বিরুদ্ধে কোনও কঠিন পদক্ষেপ না নিয়ে ধৈর্য্যের পরিচয় দিচ্ছে। বাংলাদেশ এখন আর্থিক সঙ্কটে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে— অনেক বস্ত্র কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শ্রমিকরা এখন রাস্তায়, বিভিন্ন কল কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই চলছে, বিদ্যুতের আকাল তীব্র। এই অবস্থা থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে পারে একমাত্র ভারত।

বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের ইদানিং মাখামাখির ফলে পাকিস্তান দেখল এটাই সুযোগ বাংলাদেশে তার আধিপত্য বিস্তার করা এবং বাংলাদেশ যাতে একটি ইসলামিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়, তার জন্য চেষ্টা করে যাওয়া। বাংলাদেশের ডাকে সাড়া দিয়ে পাক সরকারের দু’টি জাহাজ করাচি বন্দর থেকে এসে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। কিন্তু এই দু’টি জাহাজে কি কি জিনিস আছে তা এখনও সঠিকভাবে জানা যায়নি। কারণ ইউনূসের সরকার এই দু’টি জাহাজে তল্লাশি চালানোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। জানা যায়, এই দু’টি জাহাজে বিভিন্ন দ্রব্যের মধ্যে বাংলাদেশের জন্য অস্ত্রশস্ত্রও আছে। আর সেই কারণেই তদারকি সরকারের জাহাজে তল্লাশি না চালানোর সিদ্ধান্ত!

ভারত সরকার বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের দুর্দশা মেটাতে ২৪ হাজার ৬৯০ টন চাল সম্প্রতি একটি জাহাজে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। সেই সঙ্গে ভারত সরকার বাংলাদেশকে আশ্বাস দিয়েছে অচিরেই আরও চাল বাংলাদেশে পাঠানো হবে। পাকিস্তান থেকে ঢাকা সাময়িক ভাবে পেঁয়াজ রপ্তানি করলেও, তা বাংলাদেশের এই পণ্যের আকাল মিটবে না। তাই বাংলাদেশে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করছে বাংলাদেশী একটি সংস্থা। তার আগে ৭ ডিসেম্বর, ২৭ ডিসেম্বর এবং ২০ নভেম্বর ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেছে বাংলাদেশ। সুতরাং বাংলাদেশে ভারতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার তীব্র আকার ধারণ করলেও, ভারত সরকার বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাব রক্ষা করে চলেছে। কিন্তু তারও একটি সীমা আছে। সেই সীমা লঙ্ঘন করলে, বাংলাদেশ তার বিপদ ডেকে আনবে। ভারত চায় না সেই অবস্থা সৃষ্টি হোক। কিন্তু বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার বন্ধ না হলে ভারত কিন্তু শেষ পর্যন্ত মুখ বুজে থাকবে না। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এই অনুপ্রবেশ যাতে না হয় তার জন্য তদারকি সরকারের যা করণীয় তা করতে হবে। অর্থাৎ সংখ্যালঘুদের ওপর পীড়ন বন্ধ করতে হবে। পরিতাপের বিষয়, বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপরও মৌলবাদী ও পাকিস্তানপন্থীদের আক্রমণ চলছে। একজন মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতোর মালা পরিয়ে তাঁকে হেনস্থা করা হয়েছে।

Advertisement