• facebook
  • twitter
Wednesday, 26 March, 2025

ইন্ডিয়া জোটের শিক্ষা

দিল্লি এবং পশ্চিমবঙ্গ এক নয়

ফাইল চিত্র

দিল্লির নির্বাচেনে যা ঘটল, তার থেকে বিজেপি-বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শিক্ষা নেওয়া উচিত। সেই শিক্ষা অপূর্ণ থাকলে— অর্থাৎ এই জোটের শরিকদের মধ্যে একতার অভাব চললে, বিজেপিকে নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করে দেওয়া। সুতরাং লোকসভা ভোটের এখনও অনেক দেরি।

তবে এখন থেকেই ইন্ডিয়া জোট বিরোধী দলগুলির নেতাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি যা আছে, তা ভুলে গিয়ে সবাইকে এক মঞ্চে এসে দাঁড়িয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করার মানসিকতা দৃঢ় করতে হবে। এই জোট একতাবদ্ধ হলে বিজেপিকেও একটি শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। আর তা না হলে দিল্লিতে যা হল, তারই আবার পুনরাবৃত্তি হবে। সুতরাং ‘আমরা’ বিজেপির বিরুদ্ধে এক হয়ে লড়ব, এক হয়ে এই দলের মোকাবিলা করব, এই মনোভাব গড়ে তুলতে হবে। নইলে জোটের নেতাদের গরম গরম বক্তৃতাই সার, কাজে কিছুই হবে না। আর বিজেপি এই জোটের দুর্বালতার সুযোগ নিয়ে তেমন কোনও বাধা ছাড়াই ভোটের খেলায় গোলের পর গোল করে যাবে। জোটের নেতাদের হা-হুতাশ দেখে দেশের মানুষ হাসবে। আপ ও কংগ্রেসের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ বিজেপি ভালোভাবেই নিল।

দিল্লির নির্বাচনের ফলাফল হয়তো অন্যরকম হতে পারত যদি জোটের দুই শরিক দল একে অপরের বিরুদ্ধে না দাঁড়াত। অর্থাৎ শাসক দল আপের বিরুদ্ধে কংগ্রেস প্রতিদ্বন্দ্বিতায় না নামত। ফলে কী দাঁড়াল? বিজেপির সুবিধা হয়ে গেল। আপ দিল্লির মসনদ হারাল এবং এই দলের প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল এই শোচনীয় পরাজয়ের পর বললেন, ‘আমরা শাসক বিজেপির বিরুদ্ধে গঠনমূলক সমালোচনা করব।’ এ কথা বলা ছাড়া তাঁর আর কিছু বলার নেই— অতীতে গিয়ে তলিয়ে দেখলেন না দিল্লির রাজ্যপাট সামলাতে তিনি কত ভুল করেছেন, যার ফলে দিল্লিবাসী আপের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারি বাসস্থান শিশমহলে আর তাঁর বাস করা হল না! এই বিপুল পরিমাণ অর্থ এ কাজে ব্যয় না করে যদি দিল্লির বস্তির উন্নয়ন সহ অন্যান্য কল্যাণমূলক কাজে খরচ করতেন, তাহলে দিল্লিবাসীর মন পেতেও পারতেন। ফলশ্রুতিতে নির্বাচনে আপের পরাজয় এবং বিজেপির উত্থান। বড় সাফল্য।

আবার কংগ্রেস দেখল এই সুযোগ দিল্লির গদি দখল করো। এই দল জোটের অন্যতম প্রধান শরিক হয়েও, আপ যে জোটে তার শরিক বন্ধু তা ভুলে গিয়ে হাত ঝাঁটার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পড়ল। এ কেমন রাজনীতি? কংগ্রেস সর্বভারতীয় দল হিসেবে তার অতীত গরিমা এবং উজ্জ্বল ইতিহাস হারিয়ে ধীরে ধীরে যে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে, শক্তি হারাচ্ছে, তা ভুলে গিয়ে দিল্লির মসনদে বসার লোভ সামলাতে না পেরে জোটের শরিক দলের বিরুদ্ধেই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমে পড়ল। কিন্তু কী ফল হল? কংগ্রেসের ঝুলি শূন্য— তবুও তো আপের সান্ত্বনা তারা ২২ আসন লাভ করেছে। আর বিজেপি দুই দশকেরও বেশি সময় পর দিল্লির গতিতে বসে পড়ল দিল্লি জয়ের তৃপ্তি নিয়ে।

জোটের নেতারা, বিশেষ করে কংগ্রেসের নেতারা মুখে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপির গালমন্দ করেন, সমালোচনার পর সমালোচনা— কিন্তু কীভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে হবে, সে পথে হাঁটেন না। শুধু মুখেই সব, কাজে নয়। বিজেপিও সেই সুযোগ ভালোভাবে গ্রহণ করে। এই দলের অন্যতম প্রধান নেতা, যিনি সাংসদ এবং লোকসভায় বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী এখনও রাজনীতিতে, রাজনীতির কুশলতা নিয়ে তেমন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেননি। আসলে কংগ্রেস যে কোন পথে হাঁটবে, সেই পথ বাতলে দেওয়ার নেতা এখন এই দলে নেই। তাই নির্বাচনে পরাজয় বরণ করতে হয়। তিনি ‘ভারতজোড়ো’ আন্দোলনে দেশবাসীর যে সাড়া পেয়েছিলেন, তা কাজে লাগাতে পারছেন না অনভিজ্ঞতার কারণে। রাজনৈতিক দূরদর্শিতা থাকলে তিনি আপের বিরুদ্ধে লড়তে কংগ্রেসকে নির্বাচনে নামাতেন না। তবুও ভালো, হারের পর কংগ্রেস নেতারা ইভিএমের কারচুপির দোষ দেননি! দেয়নি আপও।

এখন কংগ্রেস দিল্লির নির্বাচনে শূন্য পেয়ে পশ্চিমবঙ্গে লড়াই বাড়াতে চায়। কিন্তু কীভাবে? পশ্চিমবঙ্গের লড়ার পথ তো বড় শক্ত ও কঠিন। বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি স্বর উঁচুতে তুলে বলে দিয়েছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে তিনি একাই যথেষ্ট— তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেস ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ আসন দখল করে রাজ্যে শাসন চালাবে।’

রাহুল গান্ধী বলেছেন, বারবার আঞ্চলিক দলগুলিকে রাজনৈতিক জমি ছেড়ে দিয়ে কোনও লাভ হচ্ছে না— তাই কংগ্রেস এখন একাই তার শক্তি বৃদ্ধি করবে। কিন্তু সর্ব ভারতীয় কংগ্রেস নেতারা ভুলে গেলেন পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস একটি বড় দল, তার বড় শক্তি— যার নেতৃত্বে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলকে উঠতে বসতে গালাগালি দিচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস নেতারা, বিশেষ করে প্রাক্তন রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী, যিনি গত লোকসভা নির্বাচনেও হেরে গেছেন। এই রাজ্যে কংগ্রেস দুর্বলতর—তার সাংগঠনিক শক্তি বলে কিছু নেই। কংগ্রেস অতীতে বামেদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নির্বাচনে লড়ে লাভ কিছুই হয়নি। শূন্য ঝুলি!

বিজেপিও ২০২৬-এ বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ দখলের স্বপ্ন দেখা আবার শুরু করে দিয়েছে দিল্লি জয়ে উৎসাহিত হয়ে। কিন্তু দিল্লি এবং পশ্চিমবঙ্গ এক নয়। এখানে শাসক দল একটি বড় শক্তিশালী দল, তার প্রভাব বিস্তৃত। সুতরাং বিজেপি অতীতের নির্বাচনেও চেষ্টা করেছে তৃণমূলকে হারাতে। কিন্তু পারেনি। আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গ জয়ের স্বপ্নও এই দলের কাছে অধরা থেকে যাবে। শুধু বিজেপি নেতাদের স্বপ্ন দেখাই সার হবে। বাস্তবে এই রাজ্য তাদের কাছে অধরাই থেকে যাবে। আর কংগ্রেস তো আরও নিঃস্ব জমিহীন দল, পশ্চিমবঙ্গে তার কোনও ভবিষ্যৎ নেই।