• facebook
  • twitter
Monday, 11 August, 2025

ভারত যেভাবে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হল

১৯৯৮ সালে বুদ্ধ পূর্ণিমা পড়েছিল ১১ মে। ঠিক হল আগের বিস্ফোরণের মতো বুদ্ধ পূর্ণিমার দিনেই এটার পরীক্ষা করা হবে। কোড নাম দেওয়া হল ‘অপারেশন শক্তি’।

ফাইল চিত্র

অসীম সুর চৌধুরী

১৯৭৪ সালের ১৮ই মে সকাল বেলার ঘটনা। আকাশবাণীতে হিন্দি সিনেমার একটি গান বাজছিল। সকাল নটার আশেপাশে গানটাকে মাঝপথেই থামিয়ে দেওয়া হল। কয়েক সেকেন্ড পর রেডিওতে একটা জরুরী ঘোষণা পড়া হলো। ঘোষণাটা এই, ‘আজ সকাল আটটা বেজে পাঁচ মিনিটে একটি পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে ভারত। একটি অপ্রকাশিত স্থানে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে মাটির নিচে এটি করা হয়েছে’ এই ঘোষণার কিছুক্ষণ আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ব্যক্তিগত সচিব মি. পি এন ধর সেনাপ্রধান জেনারেল বিভুর কাছ থেকে একটা ফোন পান। মি. ধর জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘খবর কি?’ উত্তরে মি. বিভু কোড ওয়ার্ডে বলেছিলেন, ‘সব সুখে আছে।’ মিঃ ধর তখনই বুঝে গেলেন ভারতের পারমানবিক পরীক্ষা সফল হয়েছে। এর প্রায় দশ মিনিট পর আনবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান হোমি সেথনার ফোন। রাজস্থানের পোখরান গ্রাম থেকে অনেক কষ্টে প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের ফোনের লাইন পেয়েছিলেন। ফোনের সংযোগ খুব খারাপ ছিল। খুব জোরে চিৎকার করে তিনি মি. ধরকে সাংকেতিক ভাষায় বলেছিলেন, ‘বুদ্ধা ইজ স্মাইলিং’। অর্থাৎ বুদ্ধ হাসছে।

মি. ধর আর কালক্ষেপ না করে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে রওনা দিলেন। সেই সময় শ্রীমতি গান্ধী বাড়িতে সাধারণ মানুষজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তিনি মি. ধরকে দেখে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি হল?’ উত্তর এল, ‘সবকিছু ঠিকঠাক আছে।’ মি. ধরের এই উত্তর মিসেস গান্ধীর চেহারাকে নিমেষে বদলে দিয়েছিল। তার মুখে তখন বিজয়ের হাসি।
কিন্তু এই পারমাণবিক পরীক্ষার সফলতা রাতারাতি আসেনি। এর পেছনে রয়েছে অনেক দিনের পরিশ্রম। ভারতে পারমাণবিক কর্মসূচি শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে সেই ব্রিটিশ আমলে। ১৯৪৪ সালে ‘টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল নিউক্লিয়ার রিসার্চ’ প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন ভারতের পারমাণবিক গবেষণার জনক হোমি জাহাঙ্গীর ভাবা। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ছিল শান্তিপূর্ণ কাজে পারমাণবিক শক্তির গবেষণা করা। স্বাধীনতার পর ১৯৪৮ সালে ভারতীয় সংসদ ‘অ্যাটমিক এনার্জি অ্যাক্ট’ নামক একটি পারমাণবিক আইন পাস করে। এই আইনে বলা হয় যে ভারত কেবল শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করবে। ১৯৫৪ সালে গঠিত হয় ‘ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাটমিক এনার্জি’ (DAE) যা ছিল পরমাণু অস্ত্র গবেষণার প্রথম পদক্ষেপ। শ্রী ভাবাকে এই দফতরের প্রথম সচিব হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল।

ভারত শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পারমাণবিক গবেষণার কথা বললেও বৃহৎ শক্তিধর দেশগুলো কিন্তু মোটেই ভারতের পক্ষে ছিল না। জাতিসংঘের নিরাপত্তা কমিটির স্থায়ী পাঁচ সদস্য দেশ আমেরিকা, রাশিয়া, চিন, ব্রিটেন ও ফ্রান্স ছাড়া আর কেউ পারমাণবিক শক্তি অর্জন করুক, সেটা কোনোভাবেই তারা চায়নি। আমেরিকার নজরদারির সঙ্গে সঙ্গে ছিল নানারকম সতর্কতা।

তবে এই জটিলতা কাটিয়ে এ সময় কানাডা আর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি পারমাণবিক চুল্লি স্থাপনের চুক্তি করে ভারত। তবে চুক্তিতে ভারতকে লিখতে হয় যে চুল্লিটি কেবল মাত্র শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহাত করা হবে। এই চুল্লিটা ‘সাইরাস’ নামে পরিচিত। মূলত, সাইরাস পুনঃউৎপাদন ব্যবস্থা সম্বলিত একটা পারমানবিক চুল্লি ছিল। এখানে ইউরেনিয়াম থেকে শক্তি উৎপাদনের সময় প্লুটোনিয়াম উৎপন্ন হতো। প্রসঙ্গত বলে রাখা দরকার যে এই প্লুটোনিয়াম হচ্ছে পারমানবিক অস্ত্রের প্রধান রসদ।

১৯৬২ সালের অক্টোবরের চিনের সঙ্গে সীমান্ত যুদ্ধে ভারতের কিছু ভূখণ্ড হাতছাড়া হয়ে গেল। যুদ্ধের সময় ভারত সাহায্যের জন্য রাশিয়ার দ্বারস্থ হয়েছিল। কিন্তু অন্য সংকটে জড়িয়ে পড়া রাশিয়া ভারতের অনুরোধ রাখতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে চিনের আগ্রাসন রুখতে ভারতের কাছে একটাই বিকল্প ছিল, তা হল নিজেরাই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা। তবে কাজটা অতো সহজ ছিল না।

দুই বছর পর, ১৯৬৪ সালে নেহরু ভারতের পারমাণবিক অস্ত্রের নকশা তৈরির সিদ্ধান্ত নেন এবং প্রধান নিযুক্ত করেন ভাবাকে। শুরু হয় পরমাণু অস্ত্রের দিকে ভারতের যাত্রা। কিন্তু মূল কর্মসূচি চালুর কিছুদিন পরেই নেহরু পরলোক গমন করেন। ফলে শুরুতেই এই কর্মসূচিতে একটা ধাক্কা লাগল।

পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হলেন লালবাহাদুর শাস্ত্রী। কট্টর গান্ধীবাদী শাস্ত্রী পরমাণু অস্ত্র বানাবার একেবারেই বিপক্ষে ছিলেন। পরমাণু কর্মসূচিকে অস্ত্র থেকে সরিয়ে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। এ ব্যাপারে ড. ভাবার আবেদন নিবেদনে কাজ হল না। ফলে পরমাণু অস্ত্রের গবেষণা চলে গেল ঠান্ডা ঘরে। ১৯৬৫ সালে আকাশবাণীর এক সাক্ষাৎকারে ভাবা বলেছিলেন, ‘আমি যদি সুযোগ পাই, ১৮ মাসের মধ্যে ভারতের জন্য পরমাণু বোমা বানিয়ে দেখাতে পারি।’ এই সাক্ষাৎকারের তিন মাসের মধ্যেই ১৯৬৬ সালের ২৪ জানুয়ারি এক বিমান দুর্ঘটনায় ড. ভাবার মৃত্যু হয়। দুর্ভাগ্যবশতঃ এর মাত্র এগারো দিন আগেই তাসখন্দে প্রধানমন্ত্রী শাস্ত্রীজীও হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। অনেকেই মনে করেন ওই দুটো মৃত্যু ছিল রহস্যজনক, কিন্তু কোনটারই কিনারা হয়নি।

এরপর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হলেন ইন্দিরা গান্ধী। ঝিমিয়ে পড়া পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি নতুন উদ্যমে শুরু করতে তিনি সবুজ সংকেত দিয়ে দিলেন। গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি চলতে থাকে। নামী পরমাণুবিদ এবং পদার্থবিদদের নিয়ে একটা টিম বানানো হল। তখনকার তিন জন বিখ্যাত বিজ্ঞানী হোমি সেথনা, রাজা রামান্না ও কৃষ্ণগোপাল ইয়েঙ্গারকে মাথায় রেখে প্রায় ৭৫ জন বিজ্ঞানীকে এই কর্মসূচিতে রাখা হয়েছিল। ১৯৭০ সালের মধ্যে এই বিজ্ঞানীর দল অস্ত্র কর্মসূচির জন্য গোপনে একটি প্লুটোনিয়াম চুল্লি নির্মাণ করে ফেলল। ওই বছরই মিসেস গান্ধী ‘ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টার’ (BARC) এর উদ্বোধন করেন এবং BARC-এর প্রধান হিসেবে পদার্থবিদ রাজা রামান্নাকে নিয়োগ করা হয়। প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে চলতে লাগলো। প্রকল্পটি এত গোপনীয়তার সঙ্গে সম্পন্ন হয় যে ভারতের তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রামও এই অস্ত্র পরীক্ষা সম্পন্ন হবার আগে ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেননি।

এরপর ১৯৭৪ সালের ১৮ মে ভারতের প্রথম পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা করল রাজস্থানের পোখরানে। পোখরান-১ নামে পরিচিত এই পারমাণবিক বোমাটির ওজন ছিল প্রায় ১৪০০ কেজি। ওই দিনটা ছিল বুদ্ধ জয়ন্তী। তাই এর কোডনাম দেওয়া হয়েছিল ‘স্মাইলিং বুদ্ধ’। ঠিক সকাল ৮টা বেজে ৫ মিনিটে পুরো বিশ্বকে চমকে দিয়ে পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় ভারত। তথ্য অনুযায়ী ওই বোমার মোট উৎপন্ন শক্তি ছিল ১২ কিলোটনের মতো।

পোখরান–১ পারমাণবিক বোমা পরীক্ষার পর আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ভারতের পক্ষে ছিল না। ভারত কিন্তু বিবৃতি দিয়ে একে একটি শান্তিপূর্ণ গবেষণালব্ধ পরীক্ষা বলে জানিয়েছিল। তবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা কমিটির ৫টি দেশের বাইরে ভারতের পারমাণবিক শক্তিধর দেশের তালিকায় স্থান করে নেওয়াটা অনেক বৃহৎ শক্তিধর দেশ মানতে পারেনি। কানাডা চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ করে ভারতে ভারি জল (D2O) সরবরাহ বন্ধ করে দিল। রাশিয়া নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে ছিল। তবে আমেরিকা কিন্তু ভারতের তারাপুরে একটি পরমাণু বিদ্যুৎ চুল্লি নির্মাণের কাজটা বজায় রাখল।

এই প্রতিকূল অবস্থায় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে পারমাণবিক উপকরণ জোগাড় করতে ভারতের যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও, BARC-এর বিজ্ঞানীরা ১৯৮৫ সালে ট্রম্বেতে সবচেয়ে বড় পারমাণবিক চুল্লি ‘ধ্রুব’ নির্মাণ করেছিলেন। পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির বেশিরভাগ প্লুটোনিয়াম উৎপাদন করতে সক্ষম এই ধ্রুব। কিন্তু শুধু পারমাণবিক অস্ত্র বানালেই তো হবে না, এটাকে শত্রুর কাছে পৌঁছাতে হবে। এর জন্য দরকার নিজেদের ক্ষেপণাস্ত্র।
এই দিকে লক্ষ্য রেখে ভারত সরকার ১৯৮৩ সালে প্রায় ৩৮.৮ কোটি টাকার একটা ক্ষেপণাস্ত্র প্রোজেক্টের মঞ্জুরি দেয়। ওই বছর জুলাই মাসে তৈরি হল ‘ইন্টিগ্রেটেড গাইডেড মিসাইল ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম’ বা সংক্ষেপে IGMDP, যার শীর্ষে ছিলেন ড. এপিজে আবদুল কালাম। ড. কালামের তত্ত্বাবধানে ও পরামর্শে পাঁচটা মিসাইলের কাজ কারবার ও উন্নয়ন চলতে লাগল। এরা হল ত্রিশূল, আকাশ, নাগ, পৃথ্বী ও অগ্নি। ড. কালাম ও তার সহকারী বিজ্ঞানীদের অধ্যাবসায় ও পরিশ্রম যে ব্যর্থ হয়নি তার প্রমাণ মিলল ১৯৮৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি যখন ভারতের তৈরি প্রথম মিসাইল পৃথ্বীকে সফলভাবে পরীক্ষা করা হয়। পরবর্তীকালে দীর্ঘ-পাল্লার অগ্নি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণও সফল হল। উভয়ই পারমাণবিক অস্ত্র বহন করার ক্ষমতা রাখে।

১৯৯৮ সালে অটল বিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কিছুদিনের মধ্যে দেশের দুজন প্রথম সারির বিজ্ঞানীকে ডেকে পাঠালেন। এরা হলেন ড. এপিজে আব্দুল কালাম ও ড. আর চিদাম্বরম। সেই সময়ে ড. কালাম ছিলেন ডিআরডিও-র প্রধান ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর বৈজ্ঞানিক পরামর্শদাতা। আর ড. আর চিদাম্বরম ছিলেন আণবিক শক্তি কমিশন এবং আণবিক শক্তি দপ্তরের চেয়ারম্যান। বাজপেয়ী গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করার জন্য দুজনকেই নির্দেশ দিলেন।

১৯৯৮ সালে বুদ্ধ পূর্ণিমা পড়েছিল ১১ মে। ঠিক হল আগের বিস্ফোরণের মতো বুদ্ধ পূর্ণিমার দিনেই এটার পরীক্ষা করা হবে। কোড নাম দেওয়া হল ‘অপারেশন শক্তি’। বার্ক এবং ডিআরডিও থেকে প্রায় ১০০ জন বিজ্ঞানীকে পোখরানে আসতে বলা হল। ব্যাপারটা গোপন রাখতে বিজ্ঞানীরা নিজেদের নাম বদল করে অনেক ঘুরে ঘুরে পৌঁছেছিলেন পোখরান টেস্টিং রেঞ্জে। সেই সময় আমেরিকা বা তার মিত্র দেশের গোয়েন্দারা ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি যে ওখানে পরমাণু পরীক্ষার তোড়জোড় চলছে। তারা শুধু জানত যে পোখরানে একটা মিলিটারিদের মহড়া চলছে। বিজ্ঞানীরা সেখানে সামরিক (মিলিটারি) পোষাকে সজ্জিত হয়ে যেতেন। ফলে ওই দেশগুলোর স্যাটেলাইটের ছবিতে কখনোই সন্দেহজনক কিছু ধরা পড়েনি। পরে জানা যায় ১৯৯৮ সালে আমেরিকা পোখরানের ওপরে চারটে উপগ্রহ রেখেছিল কিন্তু পরীক্ষার কিছুদিন আগে মাত্র একটা উপগ্রহই নজরদারির জন্য ছিল। তাও সকালে মাত্র তিন ঘন্টার জন্য।

১১ মে বিস্ফোরণের দিন সকালে ড. কালাম প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে ফোন করে জানালেন যে আবওহাওয়া অনুকুল রয়েছে তাই আজই বিস্ফোরণ ঘটানো যেতে পারে। পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণের জন্য ‘হোয়াইট হাউস’, ‘তাজমহল’ ও ‘কুম্ভকর্ণ’ নামে তিনটি প্রায় ১৫০ মিটার গভীর কূপ খোঁড়া হয়েছিল। ঠিক ৩টে ৪৫ মিনিটে তিনটে মনিটরে চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়া আগুনের ছবি দেখা গেল। তারপর সব মনিটরেই ছবি স্থির হয়ে যায় কারণ কূপের ভেতরে বসানো ক্যামেরাগুলি বিস্ফোরণে নষ্ট হয়ে গেছে। কূপের ভেতরের তাপমাত্রা এক লাখ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে পৌঁছে গিয়েছিল। বিজ্ঞানীদের পায়ের তলায় মাটি প্রবলভাবে কেঁপে উঠছিল। কিন্তু আনন্দে সবাই ‘ভারত মাতা কি জয়’ বলে উঠেছিলেন।

ওদিকে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ফোন বাজতেই সঙ্গে সঙ্গে তুলে নিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ব্রজেশ মিশ্র। ও প্রান্ত থেকে ড. আব্দুল কালাম কাঁপা গলায় জানালেন, ‘স্যার আমরা পেরেছি’। খবরটা পৌঁছে গেল বাজপেয়ীর কাছে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার আরো চারজন মন্ত্রী। লালকৃষ্ণ আদবানি, জর্জ ফার্ণাণ্ডেজ, যশোবন্ত সিনহা এবং যশবন্ত সিং। খবরটা শুনে সবার চোখে মুখে চোখে মুখে তখন খুশির ছোঁয়া।

কিছুক্ষণ পরে বাজপেয়ী বাইরে বেরিয়ে এসে অপেক্ষারত সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন। তিনি ঘোষণা করলেন, ‘আজ দুপুর তিনটে ৪৫ মিনিটে ভারত তিনটে সফল পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে। এই পরীক্ষায় যুক্ত থাকা সমস্ত বিজ্ঞানী এবং ইঞ্জিনিয়ারদের আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি।’ দুদিন পরে পোখরানে ভারত আরও দুটো পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়। পরের দিন প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ী ঘোষণা করেন, ‘ভারত এখন পরমাণু অস্ত্রধর দেশ।’