প্রবীর মজুমদার
১৯৬৪ সালের ১০ ডিসেম্বর অসলোয় নোবেল শান্তি পুরস্কার গ্রহণকালে আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গ জননেতা মার্টিন লুথার কিং তাঁর বক্তৃতায় বলেছিলেন, “আমি নোবেল শান্তি পুরস্কার গ্রহণ করছি সেই মুহূর্তে যখন জাতিগত অবিচারের দীর্ঘ রাত্রি অবসানের জন্য আমেরিকার ২ কোটি ২০ লক্ষ নিগ্রো অনন্য সংগ্রামে লিপ্ত। … আমি স্মরণ করছি যে, মাত্র গতকাল আলাবামার বার্মিহামে ভ্রাতৃত্বের দাবি জানানোর অপরাধে আমাদের সন্তানদেরকে আগুনের, ক্ষিপ্ত কুকুরের ও এমনকি মৃত্যুর অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে। আমি স্মরণ করছি যে, গতকাল মিসিসিপির ফিলাডেলফিয়ায় ভোটাধিকার চাওয়ার জন্য তরুণদেরকে পাশবিকভাবে নির্যাতন ও খুন করা হয়েছে। আর মাত্র গতকাল মিসিসিপি রাজ্যে ৪০টি উপাসনালয় বোমা মেরে ও পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে কারণ যারা বর্ণবাদী আলাদাকরণের ব্যবস্থা মেনে নেয়নি তারা এখানে আশ্রয় পেয়েছিলো। আমি মনে রাখছি, এক নিস্তেজকারী ও হাড়ভাঙা দারিদ্র্য আমার জনগণকে নিষ্পেষণ করছে এবং তাদেরকে অর্থনৈতিক মইয়ের সর্বনিম্ন ধাপে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছে।”
তবে মার্টিন লুথার কিং যেসব ঘটনার বর্ণনা করছিলেন তাঁর নোবেল-বক্তৃতায়, আমেরিকার ইতিহাস তার চেয়ে অনেক ভয়ংকর ঘটনার সাক্ষী। আর সেসব কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এগুলো সবই একটা নৃশংস ব্যবস্থার প্রতিফলন যার মূল অনেক গভীরে।
আমেরিকায় কালোদের জীবনের মূল্য সাদাদের জীবনের চেয়ে অনেক কম। বর্ণবাদ সেখানে দৈনন্দিন জীবনাচরণ, সাংস্কৃতিক চর্চা, সামাজিক প্রথা, রাষ্ট্রীয় আইনকানুন ইত্যাদি সবকিছুতেই গভীরভাবে প্রোথিত। কালোদের প্রতি দৈনন্দিন বৈষম্য প্রায়ই হত্যাকান্ডে পর্যবসিত হয়।
২০২০-র ২৫ মে আমেরিকার মিনেসোটায় কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডকে পুলিশ ধরে, সিগারেট কিনতে ২০ ডলারের একটি জাল নোট ব্যবহারের অভিযোগে। এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা তাঁকে হাতকড়া পরিয়ে সাড়ে ৮ মিনিট তাঁর গলায় হাঁটু গেড়ে বসে থাকে। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার আগে পর্যন্ত ফ্লয়েড ষোলবার বলেন, “আমি শ্বাস নিতে পারছি না।”
এরও আগে ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই নিউ ইয়র্কের পুলিশের হাতে একইভাবে খুন হন কৃষ্ণাঙ্গ এরিক গার্নার। অবৈধ সিগারেট বিক্রির অভিযোগে যখন পুলিশ তাঁকে মাটিতে ফেলে তার গলায় হাঁটু গেড়ে বসে তিনিও এগারোবার উচ্চারণ করেন, “আমি শ্বাস নিতে পারছি না।”
এসব কয়েকটি উদাহরণ মাত্র। আমেরিকায় এরকম হত্যাকান্ড – প্রায়ই ঘটে যা কখনো কখনো দেশটিতে প্রতিবাদের ঝড় তোলে। তবে পাঁচ বছর আগের ফ্লয়েডকে হত্যার প্রতিবাদ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে ছিল সর্বত্র। শ্বাসরোধী এই ব্যবস্থা আমেরিকার একার নয়, পৃথিবীর বহু দেশের। এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, আমেরিকার বহু দেশের নির্যাতিত মানুষ গার্নার, ফ্লয়েডের সঙ্গে নিজেদের ভাগ্যকে একাত্ম করে দেখছে। এ গণআন্দোলন এখন আর কেবল সাদা-কালোর প্রশ্নে সীমাবদ্ধ থাকে না। ঔপনিবেশিক শোষণ, পুলিশি বর্বরতা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যসহ বহু বিষয় সামনে চলে এসেছে। দেশে দেশে বহুরকম অবিচারের বিরুদ্ধে রুষে উঠেছে সাধারণ মানুষ। তারাও চিৎকার করে বলে – দম বন্ধ হয়ে আসছে হে শাসক-শোষক, হে পেটোয়াবাহিনী, হে রাষ্ট্র।
আমেরিকার আছে ৪০০ বছরের বেশি কৃষ্ণাঙ্গ নির্যাতনের ইতিহাস। দেশটি মূলত দাসব্যবসায়ীদের সাম্রাজ্য। এ দেশের যা কিছু ঐশ্বর্য্য সবই আসলে কালো দাসদের শ্রমে, ঘামে ও প্রাণের বিনিময়ে তৈরি। দেশটির প্রতিষ্ঠাতা-পিতাদের সকলেই ছিলেন ধনবান ও ক্ষমতাবান দাস-মালিক। জর্জ ওয়াশিংটন, থমাস জেফারসন, জেমস ম্যাডিসন ও প্যাট্রিক হেনরি সকলেই তাই। দাসরা ছিলো তাঁদের সবার কাছে ব্যক্তিগত কেনাসম্পত্তি এবং তাঁরা প্রত্যেকে দাসদাসী বেচাকেনা করতেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা ঘোষণারও বহু আগে থেকেই সেখানে দাসব্যবসার প্রতিষ্ঠা হয়। ষোড়শ শতকে কলম্বাসের সমুদ্র অভিযানের পর থেকেই শুরু হয় উত্তর আমেরিকায় দাসব্যবসা।
১৫০০ সাল নাগাদ আফ্রিকার জনসংখ্যা ছিলো ৪ কোটি ৭০ লাখের মতো। এরপর সাড়ে তিনশো বছর ধরে ১ থেকে দেড়কোটি আফ্রিকানের গলায় শিকল পরিয়ে তাদের রপ্তানি করা হয় নয়াবিশ্বে। এর বাইরেও ৪০ থেকে ৬০ লাখ আফ্রিকান কালো মানুষের মৃত্যু ঘটেছে ধরা পড়ার ও আটলান্টিক পাড়ি দেয়ার সময়। তাদেরকে জাহাজে ভরা হতো ‘মাল’ হিসেবে। পশুর মতো হাটে তুলে বিক্রির জন্য তাদের বিজ্ঞাপন প্রচার করা হতো। এ দাস-ব্যবসার পাপে কেবল আমেরিকাই নয়, তৎকালীন সকল পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী দেশই এ পঙ্কে নিমজ্জিত। পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী হোতাদের কাছে মানুষ, পশু ও জড়বস্তুর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। মুনাফা লাভই আসল কথা। মানুষ ও পশুর আমদানি-রপ্তানি ও ব্যবহার হয়েছে জড়বস্তুর মত করে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারচেয়ে ভয়ংকর উপায়ে কেননা নির্যাতিত মানুষ বিদ্রোহ করে বসে, যে ভয় নির্জীব বস্তুর বেলায় নেই।
ঘটনাক্রমে বর্তমানের এই পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের প্রাথমিক বৈপ্লবিক বিকাশ হয়েছে ইউরোপ-আমেরিকার শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর মাঝে। পরবর্তীতে মানবাধিকারের প্রশ্ন জোরদার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশ্য দাসব্যবসার আইনি বিলুপ্তি ঘটে। তারপরও মজুরিদাসদের অনেক সংগ্রাম করে ৮ ঘণ্টা-শ্রমদিবসের স্বীকৃতি লাভ করতে হয়। পুঁজির মালিকের কাছে তার দাস সাদা না কালো তাতে কিছু আসে যায় না। কারখানার শ্রমিকরা হচ্ছে পুঁজির অধীন সাদা ও কালো রঙের দাস। কিন্তু আইডেন্টিটি পলিটিক্সের রীতি অনুযায়ী একসময় তাদের মাঝে একটা পার্থক্য সূচিত হয়। মনে হতে থাকে যে, বিভাজনটা পুঁজি আর শ্রমের মাঝে নয়, সাদা আর কালোয়। আইডেন্টিটি পলিটিক্স এরকম নানা পরিচয়ের ছুতোয় মানুষকে ইচ্ছেমতো বিভক্ত করে রাখে।
ভারতের বর্ণপ্রথা কেবল ব্রাহ্মণ্যবাদীদের নিজস্ব আবিষ্কার ও সম্পদ নয়, সব দেশেই এটি বিভিন্ন রূপে থাকে। মানুষকে পেশার ভিত্তিতে বর্ণে বা সামাজিক শ্রেণিতে ভাগ করা আর গাত্রবর্ণের ভিত্তিতে পেশা বা সামাজিক শ্রেণিতে ভাগ করা মূলে অভিন্ন। এক প্রথা আরেক প্রথায় দ্রবীভূত হয়ে একইরূপ লাভ করে। ভারতের বর্ণপ্রথায় বা কাস্ট সিস্টেমেও গায়ের রঙ অনুপস্থিত ছিলো না। আর্যদের ভারতে আসা থেকে এখন পর্যন্ত ভারতীয় ও আশপাশের সমাজে ফর্সা ও উজ্জ্বল রঙের প্রতি একটা বদ্ধমূল পক্ষপাতিত্ব রয়েছে। দু’শো বছরের ইংরেজ শাসনে সে পক্ষপাতিত্ব আরও পোক্ত হয়। ফর্সা-উজ্জ্বল রঙের প্রতি এ পক্ষপাতিত্বকে পুঁজি করে ‘ফেয়ার এন্ড লাভলি’র মতো নানারকম প্রসাধনী বিক্রির মাধ্যমে কর্পোরেটরা কোটি কোটি টাকা সাধারণ মানুষের পকেট থেকে লুটে নেয়। দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া জুড়েই এ ফর্সা-সংস্কার প্রবল।
এ সংস্কারাচ্ছন্নতা এতো বদ্ধমূল যে, কালো মানুষ পুঁজিপতি বা মজুরিদাস যাই হোক না কেন, তাকে, তার সন্তানকে ও তার সন্তানের সন্তানকে সবসময় কমবেশি বিভিন্ন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের শিকার হতে হয়। আইডেন্টিটি পলিটিক্সের খপ্পরে পড়ে তখন শ্রম ও পুঁজির বৃহত্তর দ্বন্দ্বটিকে নিছক সাদা ও কালো মানুষের বিরোধ মনে হয়। অথবা ধর্মে ধর্মে, জাতিতে জাতিতে, সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে, নারী-পুরুষে ইত্যাদি বিভিন্ন পরিচয়ভিত্তিক দ্বন্দ্ব বলে প্রতীয়মান হয়। এই আইডেন্টিটি পলিটিক্সকে অবলম্বন করে লেখা হয় হান্টিংটনদের ‘সভ্যতার সংঘর্ষ’ বা এই জাতের অনেক ভুয়া গল্প যাতে সমাজের মৌলবিরোধকে প্রাচ্য-প্রতীচ্যের, ইসলাম-খ্রিস্টধর্মের, সাংস্কৃতিক পরিচয়ের বা তথাকথিত ‘সভ্যতা’র বিভ্রান্তিকর যুদ্ধের মোড়কে ভাসিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়।
১৮৬৭ সালে লেখা চিরনূতন ‘দাস ক্যাপিটাল’ গ্রন্থে কার্ল মার্ক্সের কথা, “যুক্তরাষ্ট্রীয় উত্তর আমেরিকায় শ্রমিকদের প্রত্যেক স্বাধীন আন্দোলন নিস্তেজ হয়ে গেছে যতদিন দাসত্বপ্রথা প্রজাতন্ত্রটির একাংশ বিকৃত করে রেখেছে। কালো যেখানে বিশেষভাবে দাগাঙ্কিত, কেবল সাদা চামড়ায় আবৃত শ্রম নিজের মুক্তি আনতে পারবে না। তবে দাসত্বপ্রথার মৃত্যু থেকে এক নতুন জীবন শুরু হয়েছে।”
প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের ‘মুক্তির সনদ’ ঘোষণা ও গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৮৬৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে দাসত্বপ্রথা বিলুপ্ত হয়, মার্ক্স ও এঙ্গেলসকে যা ব্যাপকভাবে আশান্বিত করে। মার্ক্স ঐ বছর ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্কিং মেন’স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় লিঙ্কনকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানিয়ে একটা চিঠি লেখেন। কিন্তু পরবর্তীতে ক্ষমতাবানদের হস্তক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্রে দাসমুক্তির সে বৈপ্লবিক ধারায় ছেদ পড়ে। ফলশ্রুতিতে কালো মানুষের সার্বিক মুক্তি সম্পন্ন হয় না। আজও হয়নি। দাসত্ব তার বিমানবিকীকরণের সকল উপকরণ নিয়ে এখনও সাদা আর কালো সকলকে একই শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে রেখেছে। এমনকি একসময় যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তি বারাক ওবামা সারা জীবন সাদা মানুষের স্বার্থ রক্ষা করেও কালোদের প্রতি বৈষম্যের হাত থেকে সবসময় রক্ষা পাননি।
আজ কালো মানুষের এই আন্দোলন কেবল গায়ের রঙে সীমাবদ্ধ নেই। এটি গায়ের রঙ নির্বিশেষে পিছিয়ে পড়া, সামাজিক বৈষম্যের শিকার, দরিদ্র-শ্রমজীবী ও ইতিহাস-সচেতন সব মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। এ আন্দোলন সঠিকভাবেই জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা, বাসস্থান, কর্মসংস্থান, ন্যায্য মজুরি, শিক্ষা ইত্যাদি সার্বজনীন দাবিসমূহকে সামনে নিয়ে এসেছে। আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারীগণ এটা বুঝতে ভুল করেননি যে, কালো মানুষের মুক্তি নিহিত আছে শ্রমজীবী মানুষের মুক্তিতে। যেরকম একইভাবে শ্রমের মুক্তিও কালো মানুষের, নারীর, প্যালেস্টাইনবাসীর এবং সকল অধিকৃত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মুক্তির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
১৯০১ সালের ৪ জুলাই আমেরিকার স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বক্তৃতায় সোশালিস্ট পার্টি অব আমেরিকার পক্ষ থেকে পাঁচবার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সমাজতান্ত্রিক শ্রমিকনেতা ইউজিন ডেবস বলেছিলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতারা সকল মানুষ সমান ঘোষণার মধ্যে আসলে কেবল নিজেদেরকেই মানুষ হিসেবে বুঝিয়েছেন। তারা নিগ্রোদেরকে অন্তর্ভুক্ত করেননি, যাদেরকে এখানে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এনে চরম দাসত্বের মাঝে নিক্ষেপ করা হয়েছে। বংশপরম্পরায় দাসত্ব ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে তাদের মালিকানা লাভ ততদিনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে।” তিনি আরও বলেন, “তুমি, তোমার সন্তান ও তোমার সন্তানের সন্তানেরা- যদি পুঁজিবাদ তাদের জন্ম পর্যন্ত টিকে থাকে- দাসজীবন যাপনের দন্ডে দন্ডিত এবং কোনো আশা নেই যদি পুঁজিবাদকে ছুঁড়ে ফেলে সমাজতন্ত্র বেছে নেয়া না হয়।”
আজকের মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিনিধিত্ব করছেন একটি বর্ণবাদী ক্ষমতার কাঠামোকে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদ বিরাজমান। যদিও অনেক সময় ধরে এটা খণ্ডিত অবস্থায় থেকেছে। তবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বর্ণবাদের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে আমেরিকার। এর ভবিষ্যৎ আছে জেনেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই ধারাটিকে প্রলম্বিত করার জন্য আদাজল খেয়ে লেগে পড়েছেন। ট্রাম্প উগ্র শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদী মনোভাবের প্রাধান্য দিয়ে এক যুক্তরাষ্ট্রকে গড়ে তুলতে সচেষ্ট। তিনি তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, গোটা বিশ্বে তাঁর এই শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদের বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
আজ থেকে পাঁচ বছর আগে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুতে মার্কিন রাজনীতিবিদ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির বার্নি স্যান্ডার্স তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ চায় এমন এক জাতি যে প্রত্যেক ব্যক্তির মানব-মর্যাদাকে সমুন্নত রাখবে, যা শুরু হবে জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যার বিচারের মধ্য দিয়ে।” বিশ্বের প্রত্যেক দেশের জনগণ নিজ নিজ দেশের বেলায়ও এই সামান্য দাবিই করে। অথচ তা অর্জন করা কত কঠিন। পাঁচ বছর আগে, ২০২০-র ২৫শে মে আমেরিকার শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে খুন হয়েছিলেন জর্জ ফ্লয়েড, তাঁর প্রধান অপরাধ-গায়ের রং কালো। ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল দেশে-দেশে, রংয়ের সীমারেখা মুছে দিয়ে।পাঁচ বছর কেটে যাওয়ার পর আরও একবার বিশ্ববাসীকে আমরা মনে করিয়ে দিতে চাইছি সেই শ্বাসরোধী ঘটনা, নিজেদের প্রশ্ন করছি -গত পাঁচ বছরে মানসিকভাবে কতখানি উন্নত হতে পেরেছি আমরা?