অবশেষে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি সাক্ষর করল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। রবিবার এক যৌথ বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন এই চুক্তির বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছান। এরপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই সংবাদমাধ্যমে এই সংক্রান্ত ঘোষণা করেন।
ট্রাম্পের ট্যারিফ ডেডলাইন ১ অগস্টের আগেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে চুক্তি সারল আমেরিকা। ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত একাধিক দেশের রাষ্ট্রনেতারা এই বাণিজ্য চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। আয়ারল্যান্ড, জার্মানি, নেদারল্যান্ডের মতো একাধিক দেশ এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে পোস্ট করেছে এক্স হ্যান্ডলে। প্রসঙ্গত, জাপানের সঙ্গেও গত সপ্তাহে বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করেছে আমেরিকা।
Advertisement
ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অধিকাংশ পণ্যের উপর যুক্তরাষ্ট্র ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হবে। তবে স্টিল এবং অ্যালুমিনিয়ামের ক্ষেত্রে বর্তমানে কার্যকর ৫০ শতাংশ শুল্ক অপরিবর্তিত থাকবে। এর ফলে আগে ইউরোপীয় পণ্যের উপর যেসব ক্ষেত্রে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক নেওয়া হত, সেগুলির উপর একটি নির্দিষ্ট হারে শুল্ক ধার্য হবে।
Advertisement
এটি ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদের অন্যতম বড় বাণিজ্যিক অর্জন হিসেবে ধরা হচ্ছে। যদিও চুক্তির সম্পূর্ণ খসড়া ও বিশদ তথ্য এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৭৫ হাজার কোটি ডলারের বৈদ্যুতিক পণ্য বা জ্বালানিভিত্তিক পণ্য আমদানি করতে সম্মত হয়েছে। এই চুক্তির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি খাতের পাশাপাশি উৎপাদনশিল্পও উপকৃত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি এটি উভয় পক্ষের জন্যই অত্যন্ত ইতিবাচক একটি পদক্ষেপ। আমি বিশ্বাস করি, ইউরোপীয় দেশগুলিও এতে সন্তুষ্ট হবে।’ অন্যদিকে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেন, ‘আমরা একটি ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্যিক সম্পর্ক চেয়েছিলাম, আর সেই লক্ষ্যে আমরা অনেকটাই এগিয়েছি।’
গত কয়েক বছরে ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া শুল্কনীতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্কের জটিলতা বাড়িয়ে তুলেছিল। ইউরোপীয় পণ্যের উপর ক্রমাগত শুল্ক আরোপে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল ইইউ। ট্রাম্প গত মাসেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, যদি কোনও সমঝোতা না হয়, তাহলে ১ আগস্ট থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমস্ত পণ্যের উপর ৩০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হবে। তবে শেষ মুহূর্তে আলোচনার মাধ্যমে সেই হুমকি এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
এই চুক্তি অনুযায়ী, আমেরিকায় ৬০০ বিলিয়ন ডলারের লগ্নির পরিকল্পনা রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের। সেই সঙ্গে আগামী পাঁচ বছরে আমেরিকার থেকে ৭৫০ বিলিয়ন ডলারের এনার্জি কিনবে ইইউ। সেই সঙ্গে আমেরিকার মিলিটারি সরঞ্জামও কিনবে ইইউ। তবে এই চুক্তির পরও স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামে বসানো ৫০ শতাংশ ট্রাম্প ট্যারিফ অব্যাহত থাকবে। তবে অতীতে যে সমস্ত শুল্ক ট্রাম্প চাপিয়েছিলেন, এই চুক্তির পর তা আর কার্যকর থাকবে না। কেবল ১৫ শতাংশ শুল্কই লাগু হবে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ইউরোপীয় পণ্যের উপর গড়ে ১০ শতাংশ শুল্ক ধার্য রয়েছে। গাড়ির ক্ষেত্রে তা ২৫ শতাংশ পর্যন্ত উঠে যায়। এই নতুন চুক্তির ফলে অধিকাংশ পণ্যের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ একক হারে শুল্ক কার্যকর হবে, যা একদিকে শুল্কহার বাড়ালেও, অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদে একটি স্থিতিশীল ও ভবিষ্যৎনির্ভর বাণিজ্যিক পরিবেশ তৈরি করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ট্রাম্পের দাবি, এই চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের উপর ইউরোপীয় ইউনিয়ন কোনও শুল্ক আরোপ করবে না। যদিও এই বিষয়ে ইইউ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই চুক্তির মাধ্যমে কেবল আমেরিকা-ইইউ সম্পর্কই নয়, বিশ্ববাণিজ্যেও এক নতুন বার্তা যাবে। দুই বৃহৎ অর্থনীতির মধ্যে এই ধরনের সহযোগিতা ভবিষ্যতের বাণিজ্যিক আলোচনার জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
Advertisement



