কেন ব্যর্থ কমিশন

দীর্ঘ সময় ধরে নির্বাচন চলাকালীন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে বিস্তর সমালােচনা হয়েছে।তার মধ্যে সবচাইতে মারাত্মক অভিযােগ ছিল কমিশনের কিছু কিছু কাজ , কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপিকে সুবিধে করে দিচ্ছে।

Written by SNS Kolkata | May 22, 2019 6:46 pm

প্রতীকী ছবি (Getty Images)

সপ্তদশ লােকসভা নির্বাচন শেষ হল।দীর্ঘ সময় ধরে নির্বাচন চলাকালীন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে বিস্তর সমালােচনা হয়েছে।কমিশনের ভােট পরিচালনা পদ্ধতি , আচরণবিধি পালন নিয়ে বিরােধীরা ভুরি ভুরি অভিযােগ এনেছেন।তার মধ্যে সবচাইতে মারাত্মক অভিযােগ ছিল কমিশনের কিছু কিছু কাজ , কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপিকে সুবিধে করে দিচ্ছে। শীর্ষস্তরের শাসক দলের নেতারা , সরকারি অলিখিত এমনকী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি ভােটের প্রচার কালে , কথাবার্তায় , বক্তৃতাকালে যে আচরণবিধি ভাঙছেন , তার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

কমিশনের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছেন দেশের প্রাক্তন আমলারা।তাঁদের অভিযােগ ছিল , নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে নানা মারাত্মক ত্রুটি দেখা  যাচ্ছে —কমিশন তা অবিলেম্ব সংশােধন করে অবাধ নির্বাচনের পথ সুগম করুক।অতীতে কমিশনের কার্যকরণের বিরুদ্ধে দেশের প্রাক্তন আমলাদের এভাবে সােচ্চার হতে দেখা যায়নি।তার চাইতেও যেটা উদ্বেগের উৎকণ্ঠার বিষয় তা হল , দ্বিতীয় এক কমিশনার নির্বাচনের রীতিনীতি ,বিধিব্যবস্থা নিয়ে গুরুতর অভিযােগ আনলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরােরার বিরুদ্ধে।সুতরাং এটা নির্দ্বিধায় বলা যায় , নির্বাচন চলাকালীন কমিশনের ভিতর কলহ দানা বেঁধেছিল – যার প্রতিফলন কোনও কোনও কাজে পড়েছে।কমিশনের নিজের সুখ ছিল না।

মুখ্য নির্বাচন কমিশনার শুরুটা করেছিলেন এই বলে নির্বাচন তিনি শক্ত হাতে হাল ধরবেন , সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন যাতে হয় তার জন্য সর্বশক্তি নিয়ােগ কাজ করবেন।শুরুতে তাঁর আত্মপ্রত্যয় থাকলেও , নির্বাচন শেষ হল অনেক ক্ষেত্রেই তাঁর ব্যর্থতা দিয়ে।তাঁর একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল যে করেই হােক পশ্চিমবঙ্গের ভােটে অশান্তি মাথা তুলতে দেবেন না  এবং ভােট শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করা।কারণ ভােট এলেই বাংলা অশান্ত হয়ে ওঠে —সংঘর্ষ , রক্তপাত এবং মৃত্যুর ঘটনা ঘটে – এই অপবাদ তিনি মুছে দেবেন।অন্য রাজ্যগুলি নিয়ে তাঁর তেমন মাথাব্যথা ছিল না।কারণ সেখানে ভােট হয়েছে মােটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে।

কিন্তু কমিশনের ইচ্ছে পূরণ হল না।ব্যর্থতার পর ব্যর্থতা চেপে বসল মাথার ওপর।রাজ্যে যে সাত দফার নির্বাচন হল,তার প্রতিটিতে ছােটবড় সংঘর্ষ , রক্তক্ষরণ , জীবনহানি ছাপ্পা ভােট এবং নানা অরাজকতা দেখা দিল।আর প্রতিটি দফার নির্বাচন শেষে কমিশনের রাজ্য প্রতিনিধি , মুখ্য নির্বাচনী অফিসার আবিজ আফতার অবলীলায় ‘শান্তিপূর্ণ ভােট হয়েছে দু- চারটি ঘটনা ছাড়া ’ বলে কৃতিত্ব নিলেন।সত্যকে কীভাবে চাপা দেওয়া যায় , তার নজির রাখলেন তিনি।

কমিশন হয়ত ভেবেছিল প্রচুর সংখ্যায় কেন্দ্রীয় ফোর্সের জওয়ানদের বুথে বুথে মােতায়েন ভােটারদের মধ্যে নিরাপত্তা আনবে  এবং শান্তিতে তারা ভােটাধিকার প্রয়ােগ করতে পারবেন।দু ’ জন পর্যবেক্ষক সহ আরও অনেক বিধি ব্যবস্থা নেওয়া হল।কিন্তু প্রথম দফা থেকেই ছােটবড় হিংসার ঘটনা ঘটতে লাগল,আর কমিশন ভাবল পরের দফায় ফাঁকফোকর বুজিয়ে শান্তিপূর্ণ ভােট হবে।হল না।হিংসার ঘটনা , সংঘর্ষের ঘটনা বাড়তেই লাগল।শেষ দফায় , প্রতিটি বুথেই কেন্দ্রের ফোর্সের জওয়ানদের বসানাে হল।কমিশন এবার ভাবল , শেষ ভালাে তাে সব ভালাে।কিন্তু শেষ দফায়ও হিংসার ঘটনার ছড়াছড়ি।প্রতিটি দফায় হিংসার নানা ঘটনা ঘটলেও মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে এসে ভােট দিলেন মহিলারা কোনও কোনও কেন্দ্রে ভােট দিতে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় দল বেঁধে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখালেন ।

কেন বাংলায় শান্তিপূর্ণ ভােট করাতে ব্যর্থ হল কমিশন ? সাত দফার ভােটে দু ’ জন পর্যবেক্ষক এবং মুখ্য নির্বাচনী অফিসার কী ভূমিকা পালন করলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দুজন পর্যবেক্ষক ঘুরে বেড়ালেন , কী তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল? রহস্যজনক।আর কেন্দ্রীয় ফোর্স ? এবার হাড়ে হাড়ে বােঝা গেল , শুধু কেন্দ্রীয় ফোর্স এলেই এ রাজ্যে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে না।তাদের পরিচালনায় বিরাট গলদ , তাদের মােতায়েন যথাযথ ছিল না।আবার কোনও স্থানে তারা সক্রিয় , কোনও স্থানে নিষ্ক্রিয় , দর্শনধারী । তাহলে কি এইভাবেই সংঘর্ষ , রক্তক্ষরণ এবং বােমাবাজির মধ্যে এ রাজ্যে নির্বাচন চলবে ?ভােট পরিচালনা পুরাে দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের।রাজ্য প্রশাসনের সহায়তায় এই দায়িত্ব এই সংস্থাকে পালন করতে হবে। সাতদফা নির্বাচনে কমিশন যে বিধিব্যবস্থা নিল,তা সর্বাংশে কাজ দিল না কেন , তা কমিশনকে খুঁজে বের করতে হবে।বর্তমান কমিশনার টি এন শেসন হতে পারবেন না এটা যেমন ঠিক , তেমনি কমিশনারের দৃঢ়তা ও মনােবলে ফাটল ধরলেও চলবে না।

একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেছেন, হিংসাহীন,মৃত্যুহীন নির্বাচনের দায়িত্ব যেমন বর্তায় নির্বাচন কমিশনের উপর,তেমনি রাজনৈতিক দল্গুলি, বিশেষ করে শাসক দলের আগ্রাসী মনোভাব পরিত্যাগ করতে হবে। এর জন্য আন্দোলন দরকার।