• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

হতাশা, অবসাদ, আত্মহত্যা

২০১১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে মানসিক ব্যাধি নিয়ে জীবন যাপন করেছেন, এমন মানুষের সংখ্যা বিশ্ব জনসংখ্যার তুলনায় দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিশ্বে ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ অবসাদে ভুগছেন। আর এই মানসিক অবসাদ থেকেই সৃষ্টি হয় আত্মহত্যা প্রবণতার। বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০০ জনে একজনের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। ২০১১ সালে আনুমানিক ৭ লক্ষ ২৭ হাজার মানুষ আত্মহত্যার কারণে প্রাণ হারিয়েছেন। প্রতিটি ২০টিরও বেশি আত্মহত্যার চেষ্টায় একজনের মৃত্যু ঘটেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু)-র প্রকাশিত তথ্যে এসব জানা গিয়েছে। নতুন এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে দু’টি রিপোর্টে। সে দু’টি হলো ‘ওয়ার্ল্ড মেন্টাল হেল্থ টুডে’ এবং ‘মেন্টাল হেল্থ অ্যাটলাস ২০২৪’।

সবচেয়ে সাধারণ মানসিক ব্যাধি হল উদ্বেগ এবং অবসাদ। ২০১১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে মানসিক ব্যাধি নিয়ে জীবন যাপন করেছেন, এমন মানুষের সংখ্যা বিশ্ব জনসংখ্যার তুলনায় দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলস্বরূপ, বিশ্বব্যাপী বয়স-মানের মানসিক ব্যাধির প্রাদুর্ভাব ১৩.৬ শতাংশ পৌঁছেছে, যো এক দশক আগের তুলনায় ০.৯ শতাংশ বেশি।

Advertisement

২০১১ সালের পর থেকে ২০-২৯ বছর বয়সি তরুণ ও যুবকদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ১.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। পুরুষদের মধ্যে মনোযোগ-ঘাটতি অথবা অতি-সক্রিয়তা ব্যাধি, অটিজম স্পেকট্রাম ব্যাধি এবং বুদ্ধি বিকাশের ক্ষেত্রে ইডিওপ্যাথিক ডিসঅর্ডার বেশি দেখা যায় বলে অনুমান করা হচ্ছে। মহিলাদের মধ্যে প্রায়শই উদ্বেগ ও হতাশা দেখা দেয়। উদ্বেগজনিত ব্যাধি সাধারণত হতাশজনক ব্যাধিগুলির চেয়ে আগে দেখা দেয়। এটি দশ বছর বয়সের আগে বিরল। ৪০ বছর বয়সের পরে উদ্বেগের চেয়েও বেশি দেখা যায় হতাশা। এটি ৫০ থেকে ৬৯ বছর বয়সের মধ্যে সব থেকে বেশি দেখা যায়।

Advertisement

সমস্ত দেশ এবং আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যায় মৃত্যুর প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। ২০৩০ সালের মধ্যে আত্মহত্যার হার এক-তৃতীয়াংশ হ্রাস করার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ। যদিও আত্মহত্যায় মৃত্যুহার হ্রাসের অগ্রগতি খুব কম। প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে, বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করলে, সেই সময়সীমার মধ্যে মাত্র ১২ শতাংশ হ্রাস অর্জন করা সম্ভব হবে। হু-এর অসংক্রামক ব্যাধি ও মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের ডিরেক্টর (অন্তর্বর্তীকালীন) ডেভোরা কেস্টেলের মতে, প্রয়োজন দীর্ঘস্থায়ী অর্থায়ন, শক্তিশালী নেতৃত্ব এবং ইে পরিকল্পনাগুলির কার্যকর বাস্তবায়ন।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেল্থ অ্যান্ড নিউরো সায়েন্সের ডিরেক্টর ডা. প্রতিমা মূর্তি জানিয়েছেন, আত্মহত্যার বিভিন্ন রকমের কারণ রয়েছে। তাঁর মতে, ‘ব্যক্তিগত বোঝাপড়া (পারিবারিক ঝুঁকি), দুর্বল মেজাজ এবং পরিবেশগত ঝুঁকির সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে যেমন প্রাথমিক পর্যায়ে আঘাতের সংস্পর্শ, পরিবেশের চাপ, জীবনের ঘটনা, বিচ্ছিন্নতা, সহায়তার অভাব, কলঙ্ক, সাহায্য সম্পর্কে দুর্বল সচেতনতা, পরিষেবার প্রাপ্যতা এবং অ্যাক্সেসের অভাব। এইসব নানাবিধ কারণের সংমিশ্রণ ঝুঁকি বাড়ায়।

এক্ষেত্রে মানসিক হাসপাতালগুলি যথেষ্ট নয়। সাধারণ হাসপাতাল এবং তৃতীয় স্তরের সেবা প্রতিষ্ঠানগুলিতে মনোরোগীদের জন্য শয্যা থাকা প্রয়োজন। যেখানে সু-প্রশিক্ষিত বহু বিভাগীয় দল কর্মী নিয়োগ করতে পারে। মানসিক হাসপাতালগুলিতে প্রায়শই অভিযোগ ওঠে খারাপ অবস্থা এবং দুর্ব্যবহারের। সেই সঙ্গে নিষ্ঠুরতা, নির্যাতন এবং অবহেলার অভিযোগও প্রায়ই শোনা যায়। এর কারণ— দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ স্বল্প তহবিল। তৃতীয় চ্যালেঞ্জ হল, প্রশিক্ষিত মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের বিশাল অভাব। নার্স, সমাজকর্মী, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, মনোবিজ্ঞানী, পরামর্শদাতা এবং অন্যান্য বেতনভূক মানসিক স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব দূর করা অত্যন্ত জরুরি।

টেলিভিশন, মোবাইল, নেট ওয়ার্ক ইত্যাদির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে ভোগবাদের প্রচার। আশা না মিটলেই হতাশা। আর তা থেকে মানসিক অবসাদ ও আত্মহত্যার চেষ্টা। সামাজিক এই ব্যাধি একমাত্র দূর হতে পারে সচেতনতা প্রসারে। সেদিকেই ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে।

Advertisement