চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে মহারাষ্ট্রে মোট ৭৮১ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। ঋণের চাপ, ফসলের ক্ষতি, অতিবৃষ্টি-সহ নানা সমস্যার জেরেই এই চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন রাজ্যের বহু কৃষক। বৃহস্পতিবার বিধান পরিষদে এক লিখিত জবাবে এই তথ্য জানান মহারাষ্ট্রের ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী মকরন্দ যাদব (পাটিল)।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরে কৃষক আত্মহত্যার সর্বাধিক ঘটনা ঘটেছে বিদর্ভের নাগপুর বিভাগে। সেখানে প্রথম নয় মাসে ২৯৬ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। মারাঠাওয়াড়া অঞ্চলেও পরিস্থিতি উদ্বেগজনক— এখানে মৃত্যু হয়েছে আরও ২১২ জন কৃষকের। কৃষক আত্মহত্যার ক্রমবর্ধমান এই প্রবণতা নিয়ে বিধান পরিষদে প্রশ্ন তোলেন এমএলসি সুধাকর আদবালে, অশোক জগতাপ, অভিজিৎ ওয়াঞ্জারী, রাজেশ রাঠোর ও ধীরাজ লিঙ্গাড়ে-সহ আরও কয়েকজন সদস্য।
Advertisement
উত্তরে মন্ত্রী মকরন্দ যাদব জানান, কৃষক আত্মহত্যা রোধে জেলা স্তরে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে চাষিদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা, সেচ পরিকাঠামো উন্নত করা, ফসল, কৃষিজমি ও গবাদিপশুর ক্ষতির ক্ষেত্রে দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং বিপর্যয় মোকাবিলা কেন্দ্রগুলি সক্রিয় রাখা। এর আগে জুলাই মাসে বিধান পরিষদে অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে যাদব জানিয়েছিলেন, জানুয়ারি থেকে মার্চ— মাত্র তিন মাসেই রাজ্যে ৭৬৭টি কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু মারাঠাওয়াড়া ও বিদর্ভ অঞ্চলেই ঘটেছে ২৫০টি আত্মহত্যা।
Advertisement
এনসিআরবি-র ২০২৩ সালের সর্বশেষ তথ্য তুলে ধরে মকরন্দ যাদব জানান, সারা দেশে কৃষক আত্মহত্যার প্রায় অর্ধেক ঘটনাই মহারাষ্ট্রে ঘটে। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে মোট ৬,৬৬৯ জনের আত্মহত্যার তথ্য নথিভুক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৪,১৫০ জন কৃষক এবং ২,৫১৯ জন কৃষিশ্রমিক। সম্প্রতি যাদব আরও জানান, মোট ১০২টি আত্মহত্যার ঘটনা সরকারি ক্ষতিপূরণের জন্য ‘যোগ্য’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, ৬২টি মামলাকে ‘অযোগ্য’ বলা হয়েছে এবং ৮৬টি ঘটনার তদন্ত এখনও চলছে। যোগ্য হিসেবে চিহ্নিত ১০২টি পরিবারের মধ্যে ৭৭টি পরিবারকে ইতিমধ্যেই এক লক্ষ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে, বাকি পরিবারগুলিকেও শীঘ্রই সাহায্য দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
এই পরিস্থিতি নিয়ে সংসদেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। সেই সময় রাজ্যসভায় এনসিপি (এসপি)-র সাংসদ ফওজিয়া খান অভিযোগ করেন, গত তিন মাসেই মহারাষ্ট্রে ৭৬৬টি কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘সরকারের কাছে কৃষক কবে প্রিয় হবে?’ তাঁর দাবি, চলতি বছর ভারী বৃষ্টি ও বন্যার পর রাজ্য সরকার ৩১,৬২৮ কোটি টাকার ত্রাণ প্যাকেজ ঘোষণা করলেও বাস্তবে তার সুফল কৃষকদের হাতে পৌঁছচ্ছে না।
Advertisement



